মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বীরভূমের এক সময়ের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে। তাঁর কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। দিকে দিকে বেহাল রাস্তা তাঁর সেই কথাকেই যেন কটাক্ষ করছে। সাধারণ মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, উন্নয়ন কাকে বলে। তাঁরা এও বুঝছেন, ভোট আসে ভোট যায়, শুধুই মেলে প্রতিশ্রুতি। গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বেহাল দশা নিয়েই পড়ে থাকে। হেলদোল নেই প্রশাসনের। পরিস্থিতি এমনই যে, ধৈর্যচ্যুত হয়ে চাঁদা তুলে রাস্তা (West Bengal Road) মেরামতির কাজে হাত লাগালেন গ্রামের মানুষ।
নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের বাবলা পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ নগর দক্ষিণপাড়া এলাকার ঘটনা। এলাকার মানুষের দাবি, এই রাস্তা দিয়ে কয়েকশো পরিবার যাতায়াত করে, একটু বৃষ্টি হলেই জমে থাকে এক হাঁটু জল। জল শুকিয়ে যাওয়ার পরে গোটা রাস্তা কাদায় পরিণত হয়। এছাড়াও রাস্তার বেশ কিছু অংশ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বিগত দিনে একাধিকবার তাঁরা পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তা ঠিক করার কাজে হাত লাগানো হয়নি। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে গেলে এক হাঁটু জল ডিঙিয়ে যেতে হয়। জল জমে থাকার কারণে মশার লার্ভা এবং বিষাক্ত পোকামাকড়ের উৎপত্তি হয়। এলাকার মানুষের সিদ্ধান্ত, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে জানিয়েও যখন কোনও লাভ হয়নি, তখন নিজেরাই এই রাস্তা ঠিক করবেন। তাই এলাকার মানুষই চাঁদা তুলে রাস্তা মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছেন।
টাকাই নেই, মেরামতি (West Bengal Road) হবে কী করে?
যদিও এ প্রসঙ্গে ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কথা তিনি পঞ্চায়েতে জানিয়েছিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই রাস্তাটি পাকাপোক্ত ভাবে করার আশ্বাস দিয়েছে পঞ্চায়েত। যদিও বাবলা পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান সুস্মিতা মুন্ডা বলেন, সবেমাত্র তিনি দায়িত্বভার হাতে নিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত উন্নয়নের খাতে তাঁর কাছে টাকা এসে পৌঁছায়নি। তাই তিনি কাজ শুরু করতে পারছেন না। তবে খুব তাড়াতাড়ি তাঁর পঞ্চায়েতের যে সমস্ত রাস্তার (West Bengal Road) অবস্থা খুবই বেহাল রয়েছে, সেগুলির দ্রুত কাজ শুরু করবেন। তিনি এও বলেন, আগের পঞ্চায়েত প্রধান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী কাজ করেছে, তা আমার জানার দরকার নেই। আমি এই পঞ্চায়েতের কীভাবে উন্নয়ন করা যায়ে, সেই চেষ্টা করব।
রাস্তার জন্য জীবনযাপন দুর্বিষহ
রাস্তার বেহাল অবস্থার চিত্র দিকে দিকে। নদিয়ার হাঁসখালি থানার দক্ষিণপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবতীতলা ১৫৭ নম্বর বুথ এলাকার কথাই ধরা যাক। অল্প বৃষ্টিতেই এক হাঁটু জল জমে যায়। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় এলাকাবাসীদের। পাশাপাশি এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বেশি ভাড়া দিলেও ভাঙা রাস্তা দিয়ে কোনও টোটো, অটো কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের চালক গাড়ি নিয়ে আসতে চায় না। বেহাল রাস্তার কারণে বর্ষাকালে স্কুল-কলেজে বা প্রাইভেট টিউশনিতে সময়মতো পৌঁছতে পারে না ওই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা। দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত করার মূল রাস্তার (West Bengal Road) এই ভগ্নদশার কারণে একপ্রকার এলাকাবাসীদের জীবন যাপন করা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অথচ এই রাস্তাটি কৃষ্ণগঞ্জ ও বাদকুল্লা যাওয়ার রাস্তা।
মাছ ধরার জাল নিয়ে বিক্ষোভ
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার বেহাল দশার কথা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনিক মহল ছাড়াও জেলা প্রশাসনের কাছে জানানোর পরেও আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা মেলেনি। যার কারণে এদিন বাধ্য হয়েই জল জমে থাকা রাস্তায় মাছ ধরার জাল নিয়ে এলাকাবাসীরা রাস্তায় নেমে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিক্ষোভে শামিল হন ওই এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী পুরুষ-মহিলা, এমনকি বয়স্ক মানুষরাও। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে রাস্তা মেরামতির ব্যবস্থা প্রশাসন না করলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে তাঁরা বাধ্য হবেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিজের বুথে এই রাস্তার (West Bengal Road) বেহাল দশা হলে অন্য জায়গায় কী হতে পারে!
সেই আশ্বাস!
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমান সদস্যা মুনমুন বিশ্বাস রাস্তাটির বেহাল দশার কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, রাস্তাটি মেরামতি করার জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই টেন্ডার প্রসেসিং হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার বেরোলেই মেরামতির কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি বর্ষাকালে রাস্তায় জল জমে যাওয়ার সমস্যার সমাধানের জন্য ড্রেন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। এছাড়াও পথশ্রী প্রকল্পের মধ্যেও রাস্তাটির (West Bengal Road) নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন দেখা যাক, কবে রাস্তাটি সারানো হয়, কবে সাধারণ গ্রামের মানুষ দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours