Mamata Banerjee: মমতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, খোঁজ রাখেনি কেউই!

অশক্ত শরীর, গুলি লাগা পায়ে ভ্যান চালিয়ে দিন কাটছে ৭২ বছরের নির্মলবাবুর
Mamata_Banerjee
Mamata_Banerjee

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজকের মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। তারিখটা ১৯৯৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। বাম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে রাজ্যজুড়ে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের শাসনে একচ্ছত্র অধিপতি মজিদ মাস্টার। আর সেখানে ঢুকবেন যুব কংগ্রেস নেত্রী। তাঁর একডাকে হাজার হাজার কর্মী হাজির। সূত্র মারফত জানা যায়, সেদিন গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। যার জেরে তিনজন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান আর জখম হন বহু। তার মধ্যে একজন ছিলেন নির্মল দাস। সেদিনের তরতাজা যুবক আজ প্রৌঢ়।

ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?

তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ডাকে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জমায়েত হয়েছিলেন কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক। কাছারি ময়দানে আইন অমান্য আন্দোলন হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। কংগ্রেস নেতা সৌমেন মিত্র, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি-সহ দলের প্রথম সারির একাধিক নেতা হাজির ছিলেন যুব কংগ্রেসের সেই আন্দোলনে৷ প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হলেও পরে তা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার রচপাল সিংয়ের নির্দেশে পুলিশ কর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। গুলিতে সেদিন গোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বারাসতের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হন আরও অনেকে। সেই তালিকায় ছিলেন নির্মল দাসও। বসিরহাটের সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লক থেকে ম্যাটাডোর বোঝাই করে সেদিন তিনিও এসেছিলেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিতে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৩ বছর। পালাতে গিয়ে গুলি এসে লাগে ডান পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। তাতে মারাত্মক জখম হয় চোয়ালও। এরপর গুলিবিদ্ধ ওই যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটকপুকুরের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালে।

চিকিৎসার খরচ মেটাতে সব গেছে

সেখানে প্রায় তিনমাস চিকিৎসা চলে তাঁর। হাসপাতালের বিপুল খরচ মেটাতে গিয়ে একসময় সন্দেশখালির গ্রামের পৈতৃক ভিটে এবং জমিজমা সবকিছুই বিক্রি করে দিতে হয়। সাহায্য করা দূরের কথা, খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনটুকুও মনে করেননি শাসকদলের কোনও নেতা অথবা মন্ত্রী (Mamata Banerjee)। বারাসতের রামকৃষ্ণপল্লির এক চিলতে বাড়িতে কোনওরকমে দিনযাপন করছেন নির্মল দাস। পরিবার বলতে স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতনি রয়েছে তাঁর। দুই ছেলের সামান্য রোজগারে সংসার চলে না ঠিকমতো।

দলের তরফে জোটেনি কোনও আর্থিক সাহায্য

সেদিনের পুলিশের নির্মম গুলি চালানোর ঘটনা আজও টাটকা নির্মল দাসের স্মৃতিতে। এরপর প্রায় ২৮ বছর কেটে গিয়েছে। সেদিন যিনি বিরোধী নেত্রী ছিলেন, আজ তিনিই বাংলার মসনদে। কিন্তু রক্তাক্ত যুবক নিৰ্মল দাসের খোঁজ নিতে কেউ আসেনি। কেউ জানতে চায়নি, তিনি কি বেঁচে আছেন? থাকলেও কীভাবে? না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন-তিনবার মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) হওয়ার পরেও কেউ আসেনি নির্মল দাসের কাছে। জোটেনি কোনও সরকারি চাকরি কিংবা দলের তরফে আর্থিক সাহায্য। তাই নিরুপায় হয়ে পরিবারের জন্য আজ তাঁকে বেছে নিতে হয়েছে ভ্যান। অশক্ত শরীর, গুলি লাগা পায়ে ভ্যান চালিয়ে দিন কাটছে ৭২ বছরের নির্মলবাবুর। জীবনের শেষবেলায় তিনি এবার মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান ৷ সুযোগ পেলে তাঁর কাছে চাকরির দরবার করবেন সেদিনের যুবক নির্মল দাস।

ছেলের একটা চাকরি চান নির্মল দাস

এই বিষয়ে নির্মল দাস বলেন, "সেদিনের ঘটনার পর থেকে কোনও নেতা খোঁজখবর রাখেনি। অনেকের কাছে গিয়েছি সাহায্যের জন্য। কিন্তু কিছুই মেলেনি। ইচ্ছে আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দেখা করব। তাঁর কাছে সাহায্যের আবেদন করতে চাই। আমার তো বয়স হয়েছে। আর কতদিনই বা বাঁচব। তার আগে যদি ছোট ছেলের একটি চাকরির ব্যবস্থা হয়, তাহলে খুব উপকার হবে।"

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles