মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চোখের সামনে দেখলাম, ধুলোয় ধুলোয় এলাকা ঢেকে গেল, চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে এল। মূহূর্তের মধ্যে ঘরের বাড়ির আশপাশের বড় বড় গাছ, সুপারি গাছ ভাঙতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি ও আশপাশের সব গাছ ভেঙে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি। ঝড়ের তান্ডবের পর জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার ময়নাগুড়ির বার্ণিশ গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন।
হাওয়ার দাপটে ঘরের চাল উড়ে গেল (Jalpaiguri)
গ্রামের (Jalpaiguri) এক বাসিন্দা ঘটনার সময় মাঠে ছিলেন। তিনি বলেন, প্রথমে হালকা হাওয়া হচ্ছিল। মাঠের গরু-ছাগল সব বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। আচমকাই প্রচণ্ড হাওয়া সঙ্গে ধুলো উড়ছিল আশপাশে। এ রকম হাওয়া আগে কোনও দিন দেখিনি। শুধু কি হাওয়া! সঙ্গে বিকট শব্দ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, পাহাড় ভেঙে যেন আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। বৃষ্টি হচ্ছিল না, শুধু প্রচণ্ড হাওয়া বইছিল। মানে, যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে! বেশ ভয় হচ্ছিল তখন। নিজের ঘরে আশ্রয় নিয়েও পার পেলাম না। ঘরের টিনের চালের উপরে ভেঙে পড়ল পাশের একটা বড় গাছের ডাল। এর পরে ঘরের সব টিন উড়ে গেল। সে কী শব্দ! আমার মাথায় ও ঘাড়ে ঘরের একাংশ ভেঙে পড়ল। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি বলতে পারেন। প্রায় কুড়ি মিনিটের মধ্যে ঘর-বাড়ি সব ভেঙে গেল চোখের সামনে।
আরও পড়ুন: জলপাইগুড়ির ঝড়ে নিহতদের প্রতি শোক বার্তা মোদির, বিজেপিকে পাশে থাকার পরামর্শ
প্রাণ বাঁচাতে খাটের তলায় আশ্রয় নিই
বার্ণিশ অঞ্চলের বাসিন্দা ভবেন রায় কোনোক্রমে প্রাণে রক্ষা পান। তিনি বলেন, তখন বিকেল সাড়ে তিনটা, দুপুরের আহার সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে মাঠে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেড় হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই প্রবল জোড়ে আওয়াজ শুনতে পাই। প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিন্তু নিমেশেই বুঝতে পারি ঝড় আসছে। গোটা এলাকা অন্ধকার করে দিয়ে এলাকার গাছ, বাঁশ ঝাড় বাড়ি ঘর উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঝড়ের গতি দেখেই হতচকিত হয়ে পড়ি। সম্বিত ফিরে পেতেই বাঁচার জন্য ফের বাড়িতে ঢুকে পড়ি। কিন্তু তাতেই নিস্তার পাইনি প্রকৃতির রোষ থেকে। ঝড়ের তান্ডবে আমার বাড়ির একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে ঘরের ওপর। প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ঢুকে খাটের তলায় আশ্রয় নিই। কিন্তু তাতেও রক্ষা পাইনি। গাছ পড়ায় বেশ আহত হয়েছি। ঝড় থামার পর যখন বাইরে বের হই তখন সব শেষ। গোটা এলাকা তখন চিনতে পারছি না। এলাকার ঘর বাড়ি গুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কোনো বাড়ি ঘর আস্ত নেই। কারো বাড়ির টিন উড়ে গেছে, কারো বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি উলটে গেছে। আশের পাশের ২০০ ও বেশী বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু আর্তনাদ কেউ গাছের তলায় চাপা পড়েছে কেউ আবার প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। কারও গায়ে আবার চালের টিন উড়ে এসে পড়েছে।
ঝড়ের দাপটে ধান-ফসলের ক্ষতি হয়েছে
পনেরো মিনিট ধরে ঝড় হয়। আর তারপরই গ্রাম জুড়ে শুধু চিৎকার-আর্তনাত। কারও মাথায় গাছের ডাল ভেঙে পড়েছ। কেউ আবার ঘরের একাংশ ভেঙে পড়়ায় জখম হয়েছেন। সবমিলিয়ে কে কাকে উদ্ধার করবেন তার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার কার্য শুরু করে। তবে, ঝড়ের তাণ্ডবে জমিতে ধান সব মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বেগুন ক্ষেত আর নেই, বিরাট ক্ষতি হয় চাষের জমিতে। ঝড়ের মধ্যেই গ্রামে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক মানুষ জখম হয়েছে। ময়নাগুড়ি হাসপাতালে জখমদের ভিড় উপচে পড়েছে। অনেকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours