মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘ক্যাশ-ফর-ক্যোয়ারি’ বিতর্কে (Cash For Query Row) বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছেন লোকসভা সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে লোকসভার এথিক্স কমিটিকে নির্দেশ দিলেন স্পিকার ওম বিড়লা।
‘ক্যাশ-ফর-ক্যোয়ারি’ অভিযোগ মহুয়ার বিরুদ্ধে
বিতর্কের সূত্রপাত রবিবার। ওইদিন, মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। যে দাবি ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘উপঢৌকন’-এর বিনিময়ে তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মুম্বইয়ের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর হয়ে তিনি প্রশ্ন করেন সংসদে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে নিশিকান্ত অভিযোগ করেন, মুম্বইয়ের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করতে লোকসভায় অন্তত ৫০টি প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া। এই মর্মে তাঁর কাছে জোরালো প্রমাণ রয়েছে। নিশিকান্তের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া চিঠিতে মহুয়া এবং ওই ব্যবসায়ীর মধ্যে ‘উপঢৌকন’ স্বরূপ অর্থ ও উপহারের বিনিময়ের প্রমাণ রয়েছে। এর পরই, আজ, মঙ্গলবার মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গ্রহণ করেন স্পিকার। একইসঙ্গে, তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলেন সংসদের ১২ সদস্যের এথিক্স কমিটিকে।
নিজের লগ-ইন ক্রেডেনশিয়াল সরবরাহ করেন মহুয়া?
সোমবার মহুয়ার বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ এনেছিলেন নিশিকান্ত। তাঁর দাবি, শুধু অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন করাই নয়, লোকসভার ওয়েবসাইটে ঢোকার নিজের লগ-ইন অ্যাকসেস ওই ব্যবসায়ীকে দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)! এই প্রেক্ষিতে নিশিকান্ত কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরকে চিঠি লিখে জানান, লোকসভার ওয়েবসাইটে ঢোকার জন্য সাংসদদের যে নিজস্ব লগ-ইন অ্যাকসেস রয়েছে, সেই অ্যাকসেস ক্রেডেনশিয়াল মহুয়া নাকি তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী হিরানন্দানিকে দিয়েছেন। এই মর্মে তিনি গোটা বিষয়টার তদন্তের দাবিও তুলেছেন। বিজেপি সাংসদের মতে, যদি দাবিগুলি সত্য বলে প্রমাণিত হয় তবে এটি ‘‘আস্থার একটি গুরুতর অপরাধমূলক লঙ্ঘনের পাশাপাশি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন।’’ মহুয়া মৈত্রকে সংসদ থেকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবিও করেছেন নিশিকান্ত।
আইপি অ্যাড্রেস খতিয়ে দেখার দাবি উঠল
নিশিকান্ত দাবি করেন, মহুয়া মৈত্রের লোকসভা অ্যাকাউন্টের সমস্ত লগ-ইন সার্টিফিকেটের আইপি অ্যাড্রেস খতিয়ে দেখা হোক। মহুয়ার লোকেশন ছাড়া আর কোনও লোকেশন থেকে তাঁর ক্রেডেনশিয়াল ব্যবহার করে লোকসভার ওয়েবসাইটে লগ-ইন করা হয়েছে কিনা তা দেখা হোক। মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) ছিলেন না, এমন কোনও স্থান থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে অ্যাক্সেস করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করার দাবি তুলেছেন তিনি।
‘‘অত্যন্ত লজ্জাজনক’’, মহুয়াকে তোপ বিজেপির
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডলে রাজীব চন্দ্রশেখর লেখেন, এই অভিযোগগুলো (Cash For Query Row) যদি সত্যি হয়, তাহলে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক। শুধু তাই নয়, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও দাবি করেন, এই সংস্থা (হিরনন্দানি) কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে বিষয়ে দরবার করছিল, তৃণমূল সাংসদের প্রশ্নেও সেই একই বিষয় রয়েছে। চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, সংস্থার প্রধান একদা যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তিনি যে ভাষায় কথা বলেছিলেন, মহুয়ার প্রশ্নের ভাষার সঙ্গে তার মিল রয়েছে।
কী সাফাই দিল হিরনন্দানি গোষ্ঠী?
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদানি গ্রুপের মুখপাত্র সোমবার একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, মহুয়ার (Mahua Moitra) বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার (Cash For Query Row) অভিযোগ ৯ অক্টোবর করা তাদের আগের বিবৃতিকেই সমর্থন করে। সংস্থার দাবি, ‘‘কিছু গোষ্ঠী এবং ব্যক্তি আমাদের (আদানি) নাম, সুখ্যাতি, বাজারে অবস্থান নষ্টের জন্য অনেকে বাড়তি কাজ করছেন।’’ অন্যদিকে, হিরানন্দানি গ্রুপ অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে, তার মুখপাত্র বলেছে তাদের সংস্থা সর্বদা সরকারের সঙ্গে ও জাতির স্বার্থে কাজ করেছে এবং তা চালিয়ে যাবে। তাদের মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতির ব্যবসা করি না। আমাদের সংস্থা বরাবর দেশের স্বার্থে সরকারের সঙ্গে কাজ করে। আগামী দিনেও করবে।’’
‘‘তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কথা বলি না’’, হুঙ্কার নিশিকান্তের
এই গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ও আইনজীবী জয় অনন্তকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। এমনকী, যে সব সংবাদমাধ্যম তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের খবর প্রকাশ করেছে, তাদেরও আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। তবে, এই আইনি নোটিশের বিরুদ্ধে পাল্টা তৃণমূল সাংসদকে আদালতে মুখোমুখি হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ। একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিশিকান্ত বলেন, ‘‘অনেক চিঠি হয়েছে, এবার নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলার আদালতে দাঁড়িয়ে বলুন মহুয়া।’’ একইসঙ্গে, তিনি মহুয়ার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও শুনিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আদালতই শেষ কথা বলবে। আমি তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কথা বলি না।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours