Sharada Peeth: একদা কাশ্মীর ছিল শারদা দেশ! জানেন কি এই শক্তি পীঠের মাহাত্ম্য?

হিন্দু বিশ্বাস মতে ১৮টি মহাশক্তিপীঠের অন্যতম এই মন্দির। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই শারদা পীঠ হয়ে উঠেছিল বৌদ্ধধর্মের অন্যতম জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র।
10_08_1186602526
10_08_1186602526

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নীলম নদীর তীরে পাহাড়ি গ্রাম শারদা। এখানেই আছে সুপ্রাচীন তীর্থক্ষেত্র শারদা পীঠ। হিন্দু বিশ্বাস মতে ১৮টি মহাশক্তিপীঠের অন্যতম এই মন্দির। হিন্দু ধর্ম মতে, এখানে সতীর ডান হাত পড়েছিল। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই শারদা পীঠ হয়ে উঠেছিল বৌদ্ধধর্মের অন্যতম জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র।

একদা ছিল জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান। সতীপীঠ। আদতে যেন দেবী সরস্বতীরই আরাধনা কেন্দ্র। আজ তা ভগ্নপ্রায়। পাক অধীকৃত কাশ্মীরে আজ শুধুই স্মৃতির ধ্বংসাবশেষ। উপমহাদেশে জ্ঞানচর্চার অন্যতম কেন্দ্র এই শারদা পীঠে এক সময় অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করেছিলেন কলহন, আদি শঙ্করাচার্য্য, কুমারজীবের মতো পণ্ডিতেরা। ঐতিহাসিকদের মতে, পাণিনি সহ আরও অনেক ভারতীয় পণ্ডিতদের লেখা দীর্ঘদিন এই মন্দিরে রাখা ছিল। প্রাচীন ইতিহাসে অনেক সময়ই কাশ্মীরকে শারদা-দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শারদা পীঠের কারণেই এই নাম দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করেন ইতিহাসবিদেরা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফফরাবাদ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই পীঠ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই মন্দিরের উচ্চতা ১,৯৮১ মিটার।

আরও পড়ুন: আসতে চলেছে জয়েন্ট থিয়েটার কমান্ড! তিন বাহিনীর মধ্যে সংযোগ বাড়ানোই লক্ষ্য, জানালেন রাজনাথ

চিনা পর্যটক এবং বৌদ্ধ পণ্ডিত হিউয়েন সাং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে দু’বছরের জন্য এই মন্দিরে ছিলেন। ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলহনের লেখা রাজতরঙ্গিনীতে শারদা পীঠকে হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অষ্টম শতাব্দীতে বাংলা থেকে একদল পণ্ডিত এই মন্দিরে জ্ঞানচর্চা করতে যান বলে লেখা আছে রাজতরঙ্গিনীতে। ষোড়শ শতাব্দীতে আকবরের নবরত্নের অন্যতম আবুল ফজলের লেখাতেও শারদা পীঠের উল্লেখ আছে। তাঁর লেখা থেকে জানা যায়, এই মন্দির চত্বর সোনায় মোড়া ছিল।

এই সমৃদ্ধির পতন ঘটে চতুর্দশ শতকে। মুসলিম আক্রমণকারীদের হাতে হানি হয় ওই শিক্ষাকেন্দ্রের।  এরপরে কাশ্মীরের মহারাজা গুলাব সিং পুনরায় মন্দির গড়ে তোলেন। পরে ১৯৪৭ সালে এই অঞ্চল পাখতুনদের দখলে চলে যায়। তখন থেকেই যোগাযোগ ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। বর্তমানে এই অঞ্চল পাক অধীকৃত কাশ্মীরের মধ্যেই পড়ে। 

এই মন্দিরে একটি শারদা দেবীর বিগ্রহ ছিল বলে জানা যায়। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাছে এই মন্দির অমরনাথ এবং মার্তণ্ড সূর্যমন্দিরের মতোই পবিত্র। কিন্তু ২০০৫ সালের ভূমিকম্পে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই শক্তিপীঠ। বর্তমানে তা প্রায় খণ্ডহর। ২০০৭ সালে এই মন্দির দর্শন করতে চেয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান কাশ্মীরী পণ্ডিতদের একটি দল। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দেয় পাক সরকার। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এখন আর এই পীঠ দর্শন করতে পারেন না। করতারপুর করিডর খুলে যাওয়ার পর পাক সরকার এই মন্দির নতুনভাবে নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে শোনা গেলেও এখনও এ নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা মেলেনি। তাই এই মন্দির সংস্কারে উদ্যোগী ভারত। সম্প্রতি এই মন্দিরকে দেশের অভ্যন্তরে আনার কথা বলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles