Jhargram: নেট পরীক্ষায় পাশ করলেন রাজ্যে প্রথম ঝাড়গ্রামের শবর যুবক

Jhargram: নেট পরীক্ষায় পাশ করা যুবককে ঘিরে খুশির হাওয়া শবর সম্প্রদায়ের মানুষের মনে
Jhargram
Jhargram

 মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাবা ও মা দু’জনেই নিরক্ষর।  নেট (ন্যাশানাল এলিজিবিটি টেস্ট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাক লাগালেন ঝাড়গ্রামের লোধা-শবর সমাজের এক যুবক। তাঁর নাম কার্তিক শবর। সম্প্রতি বেরিয়েছে নেট পরীক্ষার ফলাফল। ফলাফলে দেখা যায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। তিনি হলেন পরিবারের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষিত সদস্য। 

মেধাবী যুবকের পড়াশুনার খরচ কে দিতেন জানেন?

কার্তিকের বাড়ি ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশাকাঁথি গ্রামে। গ্রামের আশাকাঁথি নিম্ন বুনিয়াদি হাইস্কুলে প্রাথমিক স্তরে পড়াশুনার পর জয়পুর হাইস্কুলে ৭২ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন।  তারপরই পড়াশুনার ছেদ পড়ে যাওয়ার কথা ছিল কার্তিকের। কারণ, কার্তিক মাধ্যমিক পাশ করার পরই তাঁর বাবা নির্মল শবর জানিয়ে দেন, পড়াশুনার খরচ সামলাতে পারবেন না। তারপরই কার্তিকের পাশে দাঁড়ান শিক্ষিকা মিতালি পাণ্ডা। তিনি বর্তমানে পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা।  কর্মসূত্রে একসময় মিতালীদেবী জয়পুর স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। সেখান থেকেই কার্তিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তাঁর আর্থিক অবস্থা জানতে পেরে ওই শিক্ষিকাই কার্তিককে বাঁকুড়ার গড় রাইপুর হাইস্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করান। সে থেকেই এখনও পর্যন্ত কার্তিকের সমস্ত খরচ সামলান ওই শিক্ষিকা। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ৮৬.৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করার পর জামবনি ব্লকের কাপগাড়ি সেবাভারতী মহাবিদ্যালয় থেকে  ভূগোলে অনার্স করেন। ২০২১ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ঝাড়গ্রামের সেবায়তন শিক্ষক শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিএড করছেন।

কী বললেন মেধাবী ওই যুবক?

কার্তিক বলেন, মাধ্যমিকের পর পড়াশুনা আর হত না। দিদিমণি পাশে না দাঁড়ালে এতটা পথ আসতে পারতাম না।  দিদিমণি শুধু আর্থিক ভাবেই সাহায্য করেননি, সবসময় পরামর্শ দিয়েছেন। বড় হয়ে অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে আমার। ঝাড়খণ্ডে কিছু শিক্ষকের জন্য আবেদন করেছি। দিদিমণির কাছে সাহায্য চাইতে লজ্জা লাগে। এবার নিজেকে কিছু করতে হবে।

কী বললেন মেধাবী যুবকের পাশে দাঁড়ানো শিক্ষিকা?

শিক্ষিকা মিতালি পাণ্ডা বলেন, আমি ভীষণ খুশি। কার্তিক আমার এক সন্তানের মতই। নেট পাশের থেকে সবচেয়ে বড় কথা কার্তিক ভাল মনের মানুষ তৈরি হয়েছে। তার জীবনে বাধা অনেক এসেছে। কিন্তু সেই বাধা তাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। গবেষণা করার ক্ষেত্রে ওর পাশে কেউ দাঁড়ায় আরও ভাল হবে।

কী বললেন ঝাড়গ্রাম লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সভাপতি?

কার্তিকের বাবা নির্মল শবর ও মা পুষ্পরানি শবর দিনমজুরের কাজ করেন। কার্তিক তিন ভাই-বোন। বড় দিদি প্রতিমা শবর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বোন শ্রীমতী শবর বাংলা নিয়ে ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় স্নাতকোত্তরে পড়াশুনা করছেন। ঝাড়গ্রাম জেলা লোধা-শবর  সেলের সদস্য  তথা ঝাড়গ্রাম লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সভাপতি খগেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, লোধা শবর সমাজের কেউ নেট পাশ করেনি।  চাকরি পেলে খুবই ভাল হবে। কার্তিককে দেখে লোধা-শবর ছেলে-মেয়েরা অনুপ্রাণিত হবে। লোধা-শবর মানুষজন প্রশাসনের কাছে যেতে চায় না। সেজন্য বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে তাঁদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। সেবাভারতী কলেজে ভূগোলের অধ্যাপক প্রণব সাহু বলেন, লোধা-শবর উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ কার্তিক।  তাঁর উচ্চ মেধা জাতীয় স্তরে পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles