মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি নির্ধারণের পক্ষে জোর সওয়াল করলেন মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। নাগপুরে দশেরার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) প্রধান জানালেন, যখনই কোনও দেশে জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন সেই দেশের ভৌগোলিক সীমানাও পরিবর্তিত হয়।
মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘এটা সত্য যে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বিশাল। জনসংখ্যার বিচার আজকাল দুটি উপায়ে হচ্ছে। এই জনসংখ্যার জন্য উপযুক্ত পরিমাণ সম্পদের প্রয়োজন হবে। যদি এই সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে তবে বোঝাও বাড়তে বাড়তে অসহ্য হয়ে উঠবে। সেজন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকটি বিবেচনা করে পরিকল্পনা করা হয়। জনসংখ্যা বিচারের দ্বিতীয় প্রকারটি হল জনসংখ্যাকে একটি সম্পদ – asset– রূপে বিবেচনা করা।’’
#WATCH | Population imbalance leads to changes in geographical boundaries... Population control & religion-based population balance is an imp subject that can no longer be ignored...So a holistic population policy should be brought & should be equally applicable to all: RSS chief pic.twitter.com/hYU6itnO47
— ANI (@ANI) October 5, 2022
সরসংঘচালকের মতে, সেই সম্পদকে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং তার সর্বাধিক ব্যবহারের কথা ভাবতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বের জনসংখ্যার দিকে তাকালে একটা বিষয় মাথায় আসে। কেবল আমাদের দেশের দিকে তাকালে চিন্তাভাবনা হয়ত বদলে যেতে পারে। চিন তার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নীতি পরিবর্তন করে তার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে শুরু করেছে। দেশের স্বার্থ জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিচারধারাকে প্রভাবিত করে। আজ আমরা সবথেকে তরুণ দেশ বলে পরিগণিত হই।’’
আরও পড়ুন: ‘‘রোজগার মানে কেবলমাত্র চাকরি নয়...’’, নাগপুরে মোহন ভাগবত
ভাগবত বলেন, ‘‘আগামী ৫০ বছর পরে, আজকের যুবকরা প্রৌঢ়ে পরিণত হবে, তখন তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য কত যুবক লাগবে সেই হিসাবও আমাদের করতে হবে। দেশের জনগণ তাদের প্রচেষ্টায় দেশকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনই তাদের নিজেদের ও সমাজের জীবিকা নিরাপদ করে। জনতার যোগক্ষেম এবং জাতীয় পরিচিতি ও নিরাপত্তা ছাড়াও এই কয়েকটি বিষয় স্পর্শ করে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সন্তানের সংখ্যার বিষয়টি মায়েদের স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, শিক্ষা, ইচ্ছার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতিটি পরিবারের চাহিদার সঙ্গেও সম্পর্কিত। জনসংখ্যা পরিবেশকেও প্রভাবিত করে। মোটকথা, জনসংখ্যা নীতি অনেক কিছুকে সামগ্রিক ও সমন্বিতভাবে বিবেচনা করে প্রণয়ন করতে হবে, সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে, জনসচেতনতার মাধ্যমের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তবেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নিয়মকানুন ফলদায়ী হবে।’’
তাঁর মতে, ‘‘২০০০ সালে, ভারত সরকার সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে জনসংখ্যা নীতি নির্ধারণ করেছিল। সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল ২.১ এর প্রজননের হার (TFR) লাভ করা। এখন ২০২২ সালে, প্রতি পাঁচ বছরে প্রকাশিত NFHS রিপোর্ট এসেছে। যেখানে সমাজের সচেতনতা ও ইতিবাচক অংশগ্রহণ এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ক্রমাগত সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে ২.১ -এর কম উর্বরতার হার প্রায় ২.০-এ নেমে এসেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রগতির সময়, আরও বিবেচনার জন্য দুটি প্রশ্ন উঠছে।’’
সংঘ প্রধানের জানান, সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবৈজ্ঞানিকদের অভিমত অনুযায়ী, অতি ক্ষুদ্র পরিবার, ছেলে-মেয়েদের সুস্থ সার্বিক বিকাশ, পরিবারে নিরাপত্তাহীনতা বোধ, সামাজিক চাপ, একাকী জীবন ইত্যাদির কারণে ‘পরিবার ব্যবস্থা’ নিয়েও প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা দিয়েছে। একই সময়ে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা।
আরও পড়ুন: মোহন ভাগবতকে ‘রাষ্ট্রপিতা’ আখ্যা ভারতীয় ইমাম সংগঠনের
তিনি বলেন, ‘‘৭৫ বছর আগে আমরা আমাদের দেশে এটি অনুভব করেছি। একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের তিনটি সদ্য স্বাধীন দেশ– পূর্ব তিমোর, দক্ষিণ সুদান এবং কসোভা– ইন্দোনেশিয়া, সুদান এবং সার্বিয়ার একই ভূভাগে জনবিন্যাসের অসন্তুলনের ফল এটা। যখনই কোনও দেশে জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন সেই দেশের ভৌগোলিক সীমানাও পরিবর্তিত হয়। জন্মহারে বৈষম্যের পাশাপাশি দেশে লোভ-লালসা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ ও অনুপ্রবেশও বড় কারণ। এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে জনসংখ্যার ভারসাম্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা উপেক্ষা করা যায় না।’’
ভাগবত যোগ করেন, ‘‘গণতন্ত্রে জনমানসের সঙ্গে সহযোগিতার গুরুত্ব সর্বজনবিদিত। নিয়ম তৈরি করা হয়, সেটি গৃহীত হয় এবং সেই থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল তার থেকেই পাওয়া যায়। যে নিয়মগুলি লাভ দ্রুত চোখে পড়ে, অথবা যে নিয়মগুলির উপকার সময়ের সঙ্গে চোখে পড়ে সেগুলি ব্যাখ্যা করতে হয় না। কিন্তু যখন দেশের স্বার্থে বা দুর্বলদের স্বার্থে মানুষকে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়, সেখানে এই আত্মত্যাগের জন্য জনগণকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে, তাই সমাজে স্ব-এর বোধ ও গৌরব জাগিয়ে রাখা দরকার।’’
+ There are no comments
Add yours