মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের বাহুবলী ডাক্তার-নেতা বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এবং প্রাক্তন আরএমও অভীক দে-কে সাসপেন্ড করল স্বাস্থ্য ভবন, যার মাথায় খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, এই দুই শাসক ঘনিষ্ঠ ডাক্তার নেতা সন্দীপ ঘোষের শাগরেদ বলেই পরিচিত। আরজি কর কাণ্ডে (RG Kar) সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। প্রবল চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সন্দীপ। কিন্তু ইস্তফার দিনেই তাঁকে প্রাইজ পোস্টিং দেয় মমতার সরকার। তাঁকে কলকাতা ন্যাশনালের অধ্যক্ষ করে পাঠানো হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সে পদ খারিজ হয় সন্দীপের। এরপরেই সন্দীপের দুই শাগরেদ হিসেবে নাম উঠে আসে বাহুবলী ডাক্তার নেতা বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ও অভীক দে-র। এবার আন্দোলনের চাপে (West Bengal Government) এতদিন পর সন্দীপের দুই শাগরেদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হল দুজনকেই। শাসক দল ঘনিষ্ঠ এই দুই ডাক্তার নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এতদিন লেগে গেল সরকারের? এই প্রশ্নই উঠছে এখন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘দুই চিকিৎসক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া লোক দেখানো। নিজেদের পিঠ বাঁচানোর প্রচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’’
সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূলের এমন ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা বারবার দেখা গিয়েছে
এই আশঙ্কা উঠছে, তার কারণ অতীতে একাধিকবার এমন নজির সামনে এনেছে রাজ্য সরকার। খুব সম্প্রতি সন্দেশখালির ঘটনায় শেখ শাহজাহানকে দরাজ সার্টিফিকেট দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (West Bengal Government) তাও আবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে। পরে চাপে পড়ে সেই শাহজাহানকে ছেঁটে ফেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। গত বছর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে কিংবা ২০২২ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁকেও জনরোষের চাপে পড়ে সাসপেন্ড করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। নিয়োগ দুর্নীতিতে দলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেফতার হতেই, তাঁর মাথা থেকেই হাত সরিয়ে নেয় মমতার দল। সাসপেন্ড করা হয় অভিষেক ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে। একইভাবে হুগলির যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করে মমতার দল। প্রশ্ন উঠছে, ব্লক থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজ্য এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীত- গুণ্ডামির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের কি মমতার দল সাসপেন্ড করবে নাকি জনরোষ তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? বিগত কয়েক বছরের এই উদাহরণগুলিই বলে দিচ্ছে এগুলো আসলে ড্যামেজ কন্ট্রোল ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরও মত, আরজি করকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিধানসভায় তড়িঘড়ি করে পাশ করানো অপরাজিতা আইনও হল এই ড্যামেজ কন্ট্রোলের অঙ্গ।
হাসপাতালে গুণ্ডামি চালাতেন শাসক সন্দীপ ঘনিষ্ঠ দুই ডাক্তার নেতা (RG Kar)
প্রসঙ্গত, সন্দীপের দুই শাগরেদ বিরূপাক্ষ ও অভীক দুজনেই যে তৃণমূলের অতি ঘনিষ্ঠ তা ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে বারবার। বাহুবলী প্রভাবশালী এই দুই ডাক্তার নেতাকেই আরজি কর কাণ্ডের পরের দিনই সেমিনার রুমে দেখা গিয়েছিল। প্রশ্ন তখনই ওঠে যে বহিরাগত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা আরজি করের সেমিনার রুমে কী করছিলেন সেদিন? ডাক্তার নেতা অভীক দে আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য স্তরের পদাধিকারীও ছিলেন। কিন্তু নিজেদের পিঠ বাঁচাতে রীতিমতো প্রেস বিবৃতি জারি করে তাঁকে ছাঁটাই করা হয়। এরপরে তাঁকে চাকরি থেকেও বরখাস্ত করে সরকার। অন্যদিকে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। ডাক্তারি ছাত্রদের পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেওয়া, রেজিস্ট্রেশন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া ছাড়াও ডায়মন্ডহারবারের এক মহিলা চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এবং ডায়মন্ড হারবারের জুনিয়র ডাক্তাররা।
কড়া বিবৃতি চিকিৎসক সংগঠনের
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে এক বিবৃতি লেখা হয়েছে। তাতে মমতা সরকারের ড্যামেজ কন্ট্রোলের (RG Kar) প্রচেষ্টার তত্ত্বকে তীব্র সমালোচনা ধরা হয়েছে। কেন এই বিলম্বিত বোধোদয়? সে প্রশ্নও রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি, সন্দীপ-বিরূপাক্ষ-অভীকদের মাথাদেরও শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চিকিৎস সংগঠন নিজেদের বিবৃতিতে লেখেন, ‘‘আমরা মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভোটের সময় থেকেই এঁদের বিরুদ্ধে বলে এসেছি। মামলা করা হয়েছে। তার পর সন্দীপ ঘোষের কুকীর্তি নিয়েও বহু বার বলেছি। অধরা রয়ে গেছে আমাদের স্বর। আমাদের প্রার্থী-সমর্থকদের প্রতিহিংসামূলক বদলি করা হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে, কাউন্সিলে ডাকা হয়েছে। জল বাড়তে বাড়তে এখন মাথার ওপর উঠে গিয়েছে এবং আরজি করে আমাদের বোনের নারকীয় দুর্ঘটনার ২৭ দিন বাদে (RG Kar) প্রশাসনের টনক নড়েছে। গ্রেফতার এবং সাসপেনশন হচ্ছে। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পদত্যাগের হিড়িক উঠেছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল। না আমরা আনন্দিত নই। এদের মাথার উপর যে মাথারা রয়েছে, তাদের শাস্তি না পাওয়া অবধি আমরা স্বস্তি পাব না।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours