মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) উঠে এল আরও এক নতুন নাম! চাকরি চুরিতে সিবিআই এবং ইডি সমানভাবে তদন্ত চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে একের পর এক এজেন্টের নাম। চন্দন মণ্ডল, তাপস মণ্ডল, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাহিদ ইমামের মত নাম উঠে আসার পাশাপাশি এবারে সামনে এল বীরভূমের নলহাটির এক ব্যক্তি বিভাস অধিকারীর নামও। সূত্রের খবর, নলহাটি-২ ব্লকের শীতলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর গ্রামে বাড়ি বিভাসের। জানা গিয়েছে, তিনি বর্তমানে তৃণমূল লোহাপুর ব্লক সভাপতি। যদিও বিভাসের দাবি, এই মুহূর্তে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু সূত্রের দাবি, পার্থ, মানিকের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম মাথা হলেন বিভাস অধিকারী।
কীভাবে বিভাসের নাম উঠে এল?
কুন্তল ঘোষের গ্রেফতারির পর নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) তদন্তে সবার প্রথমে গোপাল দলপতির নাম উল্লেখ করেন কুন্তল। এরপর গোপাল দলপতির মুখে শোনা গিয়েছিল ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা। ‘কালীঘাটের কাকু’র আসল নাম যে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, তা সামনে আনেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত তাপস মণ্ডল। তারপর ‘রহস্যময়ী নারী’ অর্থাৎ হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম সামনে আনেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ। আর এবার কুন্তল ও গোপাল— দুজনের মুখেই উঠে এল বিভাস অধিকারীর নাম। কুন্তল দাবি করেছেন, তাপসের মত বিভাসও এক জন ‘এজেন্ট’। বিভাসকে কেন তলব করছে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, এই প্রশ্ন করেছিলেন দুর্নীতিতে নাম জড়ানো গোপাল দলপতিও।
কে এই বিভাস?
সূত্রের দাবি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘গুরুভাই’ এই বিভাস অধিকারী (Recruitment Scam)। শিক্ষা ‘দুর্নীতি’র সূচনাপর্বে বিভাসই নাকি পার্থর ‘গুরু’ ছিলেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সূত্রের খবর, বিভাস এমনই এক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা ছিলেন, যাঁর ডাক এড়াতেন না স্বয়ং কেষ্টও। সূত্রের দাবি, বিভাসের ডাকে সাড়া দিয়ে কখনও গ্রামে এসেছেন বীরভূমের কেষ্ট মণ্ডল, কখনও মুকুল রায়, কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এককথায় তাঁর কথা শাসকদলের কোনও নেতাই এড়িয়ে যেতেন না। ফলে এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা দাপুটে এই বিভাস অধিকারী।
আরও পড়ুন: লালগোলার চাকরিপ্রার্থীর আত্মহত্যায় যোগ রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির! কী বললেন বিচারপতি মান্থা
সূত্রের খবর, বিভাস অধিকারী এলাকায় রাজনীতিক ছাড়াও ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, বিভাস অধিকারীর চারটি বি.এড, ডি.এলএড কলেজ রয়েছে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে তাঁর। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। তবে সেই সকল সম্পত্তি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। বিভাস অধিকারী ১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক দেন এবং ইংরেজিতে ব্যাক পান। পরে বহরমপুর থেকে স্পোকেন ইংলিশ শেখেন। মুর্শিদাবাদের পাঁচগ্রামে একটি বাংলা ইংরেজি টাইপ স্কুল চালান। ভাগীরথী করেসপন্ডেন্স কলেজ নামে এর একটি শাখাও গড়ে তোলেন তাঁর মামার সহযোগিতায়। এর পাশাপাশি ২০০০ সাল নাগাদ বহরমপুর থেকে একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। সেই সময় থেকে একটি বেসিক ট্রেনিং স্কুল গড়ে তোলার চেষ্টা চালাতে দেখা যায় তাকে। যদিও ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের থেকে অনুমোদন না পেলেও এনসিইআরটি অনুমোদন থাকায় তাঁর ব্যবসা রমরমিয়ে চলে। কলকাতায় ফ্ল্যাট রয়েছে এখন। সিউড়ির কাছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে (Recruitment Scam)।
তবে সবথেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য, প্রাথমিক টেটে একেবারে প্রথমপর্বে ২ হাজার ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগে (Recruitment Scam) এই বিভাসের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। আর সেই সূত্র ধরেই খোঁজ চালাচ্ছে ইডি। যদিও এ নিয়ে বিভাস অধিকারী বলেন, “আমি চাই আসল সত্য প্রকাশ্যে আসুক। কোনও অবৈধ কিছু নেই। ১০০ বার ডাকলে ১০০ বার যাব। আমি কোনও সক্রিয় রাজনীতি করি না। আগামিদিনে ইডি বা সিবিআই ডাকলে অলওয়েজ ওয়েলকাম। প্রথম থেকে বলে আসছি। ইডি তদন্ত করেছে। আমার যাবতীয় কাগজপত্র যা চেয়েছিল, সবই জমা দিয়েছি। ওরা আজ পর্যন্ত কিছুই পায়নি।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours