Rath Yatra 2022: পুরীর রথযাত্রার তিন রথের আলাদা মাহাত্ম্য আছে, জানেন কি?

Jagannath Rath Yatra 2022: রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় জিনিস হল এই রথ তিনটি। প্রথমে যাত্রা শুরু করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ। তারপর সুভদ্রা এবং শেষে জগন্নাথ...
puri-rathyatra-1
puri-rathyatra-1

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সংস্কৃত ভাষায় রথ মানে গাড়ি এবং যাত্রা মানে মিছিল। ক্ষণিকের জন্য জগন্নাথদেবকে রথের উপর দর্শন করাকে বহু পুণ্য কর্মের ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি এতই পবিত্র যে, কেউ যদি এই দিনে রথ স্পর্শ করে অথবা এমনকি রথের দড়ি স্পর্শ করে, তাহলে বহু পুণ্য কর্মের ফল লাভ করতে পারেন।

জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় আজও আমরা দেখে থাকি, প্রতিবছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশ পরম্পরাক্রমে পুরীর রাজপরিবারের নিয়মানুযায়ী যিনি রাজা উপাধিপ্রাপ্ত হন, তিনি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর পরপর তিনটি রথের সামনে এসে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথের সম্মুখভাগ ঝাঁট দেওয়ার পরই পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।

আরও পড়ুন: বিপদ এড়াতে বিপত্তারিণী পুজো! জানুন এই ব্রতর মাহাত্ম্য

পুরীর রথযাত্রা উৎসব হচ্ছে, বড় ভাই বলরাম বা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন যাত্রার স্মারক। তিন জনের জন্য আলাদা আলাদা তিনটি রথ। রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় জিনিস হল এই রথ তিনটি। প্রথমে যাত্রা শুরু করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ। তারপর সুভদ্রা এবং শেষে জগন্নাথ।

পুরীর এই রথ তিনটির আলাদা আলাদা নাম। জগন্নাথ দেবের রথ — নন্দী ঘোষ, বলরামের রথ — তালধ্বজ ও সুভদ্রার রথ — দর্পদলন নামে পরিচিত। প্রতি বছর উল্টোরথের পর রথ তিনটি ভেঙে ফেললেও রথের পার্শ্বদেবদেবীর মূর্তি, সারথি ও ঘোড়াগুলিকে সযত্নে তুলে রাখা হয়। 

এবারে রথ তিনটির একটু পরিচয় দেওয়া যাক :

আরও পড়ুন: যোগিনী একাদশী কবে জেনে নিন, ব্রত পালনের নিয়মবিধি জানেন তো?

নন্দীঘোষ (জগন্নাথ): কথিত আছে, এই রথটি দেবরাজ ইন্দ্র শ্রীজগন্নাথদেবকে প্রদান করেছিলেন। এই রথ নির্মাণে ছোট বড় ৮৩২টি কাঠের টুকরো লাগে। উচ্চতা ৪৪’২” বা ১৩.৫ মিটার ও দৈর্ঘ্য প্রস্থ ৩৪’৬” x ৩৪’৬”। আগে ১৮টি চাকা থাকলেও, বর্তমানে ১৬টি থাকে। রথের ধ্বজার নাম ত্রৈলোক্যমোহিনী ও রশির নাম শঙ্খচূড় নাগিনী। দ্বারপাল ব্রহ্মা ও ইন্দ্র। রথে উপস্থিত নয় জন পার্শ্ব দেবগণ হলেন — বরাহ, গোবর্ধন, কৃষ্ণ/গোপীকৃষ্ণ, নৃসিংহ, রাম, নারায়ণ, ত্রিবিক্রম, হনুমান ও রুদ্র। এঁদের সঙ্গে রয়েছেন ধ্যানমগ্ন ঋষিরা — নারদ, দেবল, ব্যাসদেব, শুক, পরাশর, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র ও মরীচি। লাল ও হলুদ কাপড়ে মোড়া এই রথে কালো রঙের চারটি ঘোড়া হল— শঙ্খ, বলাহক, শ্বেত ও হরিদাক্ষ। রথের সারথি দ্বারুজ ও রক্ষক গরুড়। রথের কলসের নাম হিরন্ময়। রথের দ্বারপাল জয়, বিজয়। রথের রজ্জুর নাম শঙ্খচূড়। রথের নেত্রের নাম তৈলক্ষ মোহিনী। রথের অধীশ্বর প্রভু জগন্নাথ।

তালধ্বজ (বলভদ্র/বলরাম): ৭৬৩টি ছোট বড় কাঠের টুকরো দিয়ে নির্মিত এই রথ। এই রথের উচ্চতা ১৩.২ মিটার। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ৩৩’ x ৩৩’। আগে ১৬টি থাকলেও এখন চাকার সংখ্যা ১৪টি। ধ্বজার নাম উন্মনী এবং রশির নাম বাসুকী নাগ। ন’জন পার্শ্বদেবতা হলেন — গণেশ, কার্তিক, সর্বমঙ্গলা, প্রলম্ব, হলায়ুধ, মৃত্যুঞ্জয়, নাটেশ্বর, মহেশ্বর ও শেষদেব। দ্বারপাল রুদ্র ও সাত্যকি। সারথি মাতলি এবং রক্ষক বাসুদেব। রথের শ্বেতবর্ণের চারটি ঘোড়ার নাম তীব্র, ঘোর, শ্রম (স্বর্ণনাভ) ও দীর্ঘ (দীর্ঘশর্মা)। সুদর্শন চক্রের পাশে দুটি পাখির (কাকাতুয়া) নাম স্বধা ও বিশ্বাস। রথটি সবুজ ও লাল কাপড়ে মোড়া। রথের ধ্বজার/পতাকার নাম উন্মনী। 

দর্পদলন (সুভদ্রা): ৫৯৩টি টুকরো কাঠ দিয়ে তৈরি এই রথের উচ্চতা ৪২’৩” বা ১২.৯ মিটার এবং দৈর্ঘ্য – প্রস্থ ৩১’৬” x ৩১’৬”। চাকার সংখ্যা ১২। ধ্বজার নাম নাদম্বিক এবং রশির নাম স্বর্ণচূড় নাগ। ধ্বজার পাশের পাখি দুটির নাম শ্রুতি ও স্মৃতি। রথটি লাল ও কালো কাপড়ে ঢাকা। ন’জন পার্শ্বদেবী হলেন — চণ্ডী, চামুণ্ডা, মঙ্গলা, উগ্রতারা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, বিমলা ও বরাহি। দ্বারপালিকা — ভূদেবী ও শ্রীদেবী। সারথি অর্জুন আর রক্ষক জয়দুর্গা। লাল রঙের ঘোড়া চারটির নাম রচিকা, মোচিকা‚ জিতা ও অপরাজিতা। 

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles