মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রশ্মিকা মান্দানা, ক্যাটরিনা কাইফ ও সারা তেন্ডুলকরের মধ্যে মিল কোথায়? এই প্রশ্নটা কাউকে করলে তিনি সহজেই উত্তর দিয়ে দেবেন। কারণ, সাম্প্রতিককালে এই তিনজনই খবরের শিরোনামে। নেপথ্যে ‘ডিপফেক’ (Deepfake)। এই তিন কন্যাই সমাজমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স পরিচালিত ‘ডিপফেক’ ভিডিও কারসাজির শিকার। এবার সমাজমাধ্যমে এই বিকৃতি রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ করল কেন্দ্র।
শুরুটা হয়েছিল বলি অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানাকে দিয়ে। তার পর আরেক বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। বাদ যাননি ক্রিকেট আইকন সচিন তেন্ডুলকরের কন্যা সারাও। সম্প্রতি, সমাজমাধ্যমে বলিউড অভিনেত্রী রশ্মিকার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওয় দেখা যায়, একটি স্বল্পবসন পরে তিনি লিফট থেকে বেরিয়ে আসছেন। পরে জানা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রযুক্তির মাধ্যমে (Deepfake) অন্য একজনের মুখের ওপর রশ্মিকার মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিজের ‘ডিপফেক’ ভিডিও দেখে ভীত রশ্মিকা
রশ্মিকার এই ‘ডিপফেক’ (Deepfake) ভিডিও নিয়ে নেটপাড়ায় তীব্র শোরগোল পড়ে যায়। নিজের ‘ডিপফেক’ দেখে নিজেই রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে বলেন, “আমি খুব ব্যথিত এবং দুঃখিত। এই ঘটনা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। যাঁরা সব সময় ক্যামেরাতে কাজ করেন তাঁদের জন্য এই ধরণের ‘ডিপফেক’ ভিডিও অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। আমি আমার পরিবার, বন্ধু পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ, আমার মতো নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত। যদি আমি স্কুল ছাত্রী হতাম তাহলে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা আরও মুশকিল হতো।”
‘ডিপফেক’-এর কবলে ক্যাটরিনা ও সচিন-কন্যা
রশ্মিকার পাশে দাড়ান মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন। তিনি অবিলম্বে এই পন্থা বন্ধের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে, যারা এটা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবিও তোলেন বলিউডের ‘শাহেনশা’। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও ‘ডিপফেক’-এর (Deepfake) বিরুদ্ধে সরব হয়। শুধু রশ্মিকা নন, এর পর আরেক বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের ছবিও একইভাবে ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে অবমাননাকর ও কুরুচিকর করা হয়। বাদ পড়েননি সারা তেন্ডুলকরও। সাম্প্রতিককালে, তাঁর এবং ভারতীয় ক্রিকেটের ‘প্রিন্স’ শুভমান গিলের সম্পর্ক নিয়ে চারদিকে নানা গল্প ছড়িয়ে পড়ছে। সেই ফাঁকে ‘ডিপফেক’ কারবারিরা সারা এবং শুভমানের একটি ছবি প্রকাশ করে। পরে জানা যায়, ছবিতে শুভমান নয়, ছিল সারার ভাই তথা সচিন-পুত্র অর্জুন। তাঁর মুখের জায়গায় শুভমানের মুখ বসিয়ে সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।
‘ডিপফেক’-কে আইনত অপরাধ ঘোষণা কেন্দ্রের
সমাজমাধ্যমের পাতায় বাড়তে থাকা সেলেবদের ছবি ও ভিডিও ঘিরে বিকৃতি ঘটানোর প্রবণতা রুখতে এবার আসরে নামল কেন্দ্র। ‘ডিপফেক’ বানানো এবং তা সামজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ ঘোষণা করল কেন্দ্র। এই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত সামজিক মাধ্যমগুলিকে আইনি নোটিশ পাঠালো কেন্দ্রীয় সরকার। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “ডিপফেক ভিডিওর ব্যাপক বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকল সামজিক মাধ্যমগুলিকে ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যদি এই ভিডিওগুলিকে সামজিক মাধ্যমে আটকানো না যায়, তাহলে কেন্দ্রের তরফ থেকে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
আইনি নোটিশে কী বলা হয়েছে?
সামজিক মাধ্যমে পাঠানো কেন্দ্রের আইনি নোটিশে বলা হয়, “২০০০ সালের তথ্য প্রযুক্তির ৬৬ডি ধারায় অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি যদি কম্পিউারে অন্য কোনও ব্যক্তির ছবি বা ভিডিও বিকৃত করে সামজিক মাধ্যমে বিনিময় করে, তাহলে আইন অনুসারে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ৩ বছর পর্যন্ত হাজতবাস হতে পারে। সামজিক মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও নিয়ে কোনও প্রকার অভিযোগ এলে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছবি বা ভিডিওকে মুছে দিতে হবে।” সেই সঙ্গে নোটিশের মধ্যে এক্স, ফেসবুক, ট্যুইটারকে রশ্মিকা মন্দনার ‘ডিপফেক’ (Deepfake) ভিডিও মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামজিক মাধ্যমে গ্রাহকদেরকেও ফেক ভিডিও বিনিময় করার বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের , Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours