মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বুধবারই পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (PFI) ওপর পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার (Central Goverment)। বেআইনি কাজকর্মের জন্য পিএফআইয়ের সমস্ত সহযোগী সংস্থা এবং অনুমোদিত সংস্থার উপরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। অনলাইনেও পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার গতিবিধি রুখতে পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র। পিএফআই এবং আটটি সহযোগী সংস্থার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পিএফআইকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা জরিমানার নির্দেশ কেরল হাইকোর্টের
পিএফআই বরাবরই দাবি করে এসেছে যে, তাদের লড়াই দেশের সাধারণ নাগরিকের জন্যে। কিন্তু তথ্য অন্য কথা বলছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলি পিএফআই- এর আড়ালে ভারতে জেহাদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমনই প্রমাণ হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। পিএফআই- এর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগ রয়েছে, সেই দাবি আগেই করেছিলেন গোয়েন্দারা। ধীরে ধীরে পিএফআই- কে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে।
২০১৫ সালে পিএফআই এর নেতারা ইউসুফ আল কারযাভীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে দিল্লিতে ইজিপ্ট দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন ইউসুফ আল কারযাভী। কর্ণেল গদ্দাফির খুনে বড় ভূমিকা এই আন্তর্জাতিক জঙ্গির। সব জানা সত্ত্বেও এই জঙ্গির সমর্থনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল পিএফআই।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের নিষিদ্ধ ঘোষণার পরেই, পিএফআইকে 'বেআইনি সংগঠন' আখ্যা তিন রাজ্যের
কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামিক স্টেট ও জেএমবির মতো বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে পিএফআইয়ের যোগাযোগের কথা বলা হয়েছিল। ‘নর্ডিক মনিটর’ নামে সুইডেনের স্টকহলমের একটি গোয়েন্দা প্ল্যাটফর্মের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আল কায়দা-যোগে অভিযুক্ত তুরস্কের একটি সংগঠনের সঙ্গে পিএফআইয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ‘ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস অ্যান্ড হিউম্যানিটেরিয়ান রিলিফ’ (আইএইচএইচ) নামে তুরস্কের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অতিথি হয়ে পিএফআইয়ের জাতীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ই এম আব্দুল রহমান এবং পি কোয়া ইস্তানবুলে গিয়েছিলেন। আইএইচএইচের সঙ্গে আল কায়দার যোগ রয়েছে। ২০১৪ সালে সিরিয়ায় জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। বলা হয়েছে, তুরস্কের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি-র সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করে আইএইচএইচ। আরও অভিযোগ, ২০১৬ সালে তুরস্কে যখন সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়, তখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিল পিএফআই। আবার ‘পিএফআইয়ের উপরে ভারতীয় পুলিশের নির্যাতন’-এর অভিযোগ তোলা হয়েছিল তুরস্কের সরকারি সংবাদমাধ্যমেই।
পিএফআই- এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের অভিযানে, অপারেশন অক্টোপাসের দ্বিতীয় রাউন্ডে, এনআইএ, এটিএস এবং রাজ্য পুলিশ সংগঠনের কার্যালয় থেকে, 'মিশন ২০৪৭' সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতকে গৃহযুদ্ধে ও অশান্তিতে জর্জরিত করা, ২০৪৭ সালের মধ্যে অপারেশন গাজওয়া-ই-হিন্দ সম্পূর্ণ করা এবং ভারতে ইসলামি শাসন জারি করা।
গোয়েন্দা সূত্রে বেশ কিছু বড় রহস্য সামনে এসেছে। পিএফআই- এর যে অ্যাকাউন্টগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেখানে জমা অর্থের একটা বড় অংশ উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলি থেকে এসেছে। কাতার, বাহারিন, কুয়েত এবং তুরস্কে পিএফআই-এর তহবিল ও নেটওয়ার্কেরও হদিশ মিলেছে। কর্ণাটক এবং কেরালা ছিল পিএফআই-এর মানি ব্যাঙ্ক এবং এখান থেকে টাকা সারা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়া হত। আর সেই টাকাতেই চলত দেদার বেআইনি কার্যকলাপ। উপসাগরীয় দেশ থেকে যে অর্থ আসত তা স্থানীয় অনুদান হিসেবে দেখানো হত। রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন নামে পিএফআই -এর একটি দাতব্য সংস্থার অ্যাকাউন্টে সৌদি আরব থেকে আসা প্রচুর কালো টাকা জমা হত।
তদন্তে দেখা গিয়েছে, পিএফআই এবং পিএফআই- এর রাজনৈতিক সংস্থা এসডিপিআই -এর অনেক সিনিয়র নেতা এনজিও- র কাজের নামে তুরস্কে যেতেন। মূলত তুরস্ক থেকে ভারত বিরোধী অ্যাজেন্ডা স্থির করা হতো। তুরস্কে, পিএফআই-এর সদস্যরা সিরিয়ায় সন্ত্রাসে যে সব সংস্থা থেকে হাওলার মাধ্যমে টাকা আসত তাদের সঙ্গে দেখা করত।
শুধু তাই নয়, এন আই এ-এর কাছে পিএফআই এবং এসডিপিআই-এর সঙ্গে যুক্ত এমন কিছু মানুষের তালিকা রয়েছে যারা ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে। সূত্রের খবর, পিএফআই-এর অ্যান্টি-ইন্ডিয়া ব্রিগেড এই অ্যাজেন্ডায় কাজ করছিল, কিন্তু অপারেশন অক্টোপাস প্রতিটি পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয়।
+ There are no comments
Add yours