মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গত জানুয়ারি মাসে এক পাকিস্তানি তরুণীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ভারতীয় ব্যক্তির হৃদযন্ত্র। চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসকরা সফলভাবে ওই তরুণীর শরীরে হৃদযন্ত্র বসাতে সক্ষম হন। যার ফলে, নতুন জীবন লাভ করেন ওই পাক তরুণী। এমনকী, অস্ত্রোপচার খরচসাপেক্ষ হলেও, তা মকুব করে দেওয়া হয়। আর সেই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিদ্বেষমূলক ও হিন্দু-বিরোধী মন্তব্য করে বসলেন প্রতিবেশী দেশের এক মৌলবী (Pakistani Imam)।
পাকিস্তানি ধর্মগুরুর ধর্মীয় সুড়সুড়ি...
এমনিতেই ভারত-পাক দুই দেশের সম্পর্ক (India Pakistan Relation) তলানিতে। সেই পরিবেশের মধ্যেও এই ঘটনা যখন চারদিকে প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক তখনই এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়ে গিয়ে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দেওয়ার কথা বললেন পাকিস্তানি ধর্মগুরু (Pakistani Imam)। ওই পাক ইমামের মতে, দাতা হিন্দু (ইমামের কথায় ‘বিধর্মী’) হওয়ায় কোনও পুণ্যলাভ হবে না ওই ব্যক্তির। তাঁর এই কাজ গৃহীত হবে না। কারণ, পাক ইমামের মতে, পুণ্য অর্জন করতে হলে নাকি মুসলিম হয়ে মরতে হয়। ইমামের ভাবখানা এমন যেন মেয়েটি হৃদযন্ত্র গ্রহণ করে দয়া করেছে। তাঁর মতে, মেয়েটি সাহসী। এর কারণ হিসেবে ইমাম জানান, এতদিন ওই হৃদপিণ্ড হিন্দু দেহে থাকায় ঈশ্বরের কাছে ঝুঁকত। এবার ওই মেয়েটির জন্য হিন্দু হৃদপিণ্ড আল্লার সামনে ঝুঁকবে।
এগোচ্ছে ভারত, পিছোচ্ছে পাকিস্তান
পাক ইমামের (Pakistani Imam) এই মন্তব্য সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যদিও, সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি মাধ্যম। তবে, নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েন ওই পাক ইমাম। ইমামের বক্তব্যের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এক শ্রেণি পাকিস্তানিদের ভারত-বিদ্বেষ (India Pakistan Relation)। ইমাম মোয়াজ্জেম কিংবা পাক জনগণের একটা বড় অংশ ভারত এবং ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম সম্পর্কে কী মত পোষণ করেন তা তাঁদের ভাষাতেই বহিঃপ্রকাশ পায়। আজ ভারত একদিকে যেখানে উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে, সেখানে অন্ধ ভারত-বিরোধিতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে ক্রমশ পিছিয়ে যেতে যেতে কার্যত দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান।
কী হয়েছিল পাক তরুণীর
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে প্রথম বার ভারতে এসেছিলেন পাক তরুণী আয়েশা রেশান। সেই সময় একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। পাঁচ বছর ধরে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন ১৯ বছর বয়সি আয়েশা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে তাঁর শরীরে ৬৯ বছর বয়সি এক ব্রেন ডেথ রোগীর হার্ট বসানো হয় (India Pakistan Relation)। ওই রোগীর দেহ দিল্লি থেকে উড়িয়ে চেন্নাই নিয়ে আসা হয়েছিল।
তরুণীর পরিবার কী বলছে
আয়েশার মা সনোবর রেশান তাঁর মেয়েকে কার্যত জীবনদান দেওয়ার জন্য ভারতীয় চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “নিজের মেয়েকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখতে বড় কষ্ট হচ্ছিল। খুব কষ্ট পাচ্ছিল ও। ওর এই অবস্থা আমরা খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমরা ভারতীয় চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হই। আমার মেয়ে এখন সুস্থ। আমাদের বিল মেটাবার খুব বেশি সক্ষমতা ছিল না। তবুও চিকিৎসকরা আমাদের ভারতে আসতে বলেন এবং তারা চিকিৎসা করে আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে তুলেছেন।” জানা গিয়েছে, এখন অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন পাকিস্তানের (India Pakistan Relation) সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা ওই তরুণী। ভালোভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারছেন ওই ছাত্রী। বর্তমানে করাচিতে পড়াশোনা চালাচ্ছেন ওই তরুণী। ভবিষ্যতে আয়েশা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চান।
উদার মনের পরিচয় ভারতীয় চিকিৎসকদের
অঙ্গদানের ক্ষেত্রে ভারতে অনেক নিয়ম কানুন আছে। কিন্তু পাকিস্তানি তরুণীর ভারতীয় চিকিৎসকরা অনেক উদার মনের পরিচয় দিয়েছেন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া সহ ওই পরিবারের চিকিৎসার খরচ মকুব করে দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের (Heart Transplant Cost) ক্ষেত্রে ৩৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে। চিকিৎসার আয়েশার চিকিৎসার বিপুল খরচ বহন করেছিল ভারতীয় (India Pakistan Relation) একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চেন্নাইয়ের চিকিৎসক এবং রোগীরা মিলে তৈরি করেছেন।
ভারত ও পাকিস্তানের তফাত কোথায়
অথচ, ইমাম (Pakistani Imam) যে বক্তব্য রাখলেন তাতে পরবর্তীতে কোন পাকিস্তানি রোগী ভারতে (India vs Pakistan) সাহায্যপ্রার্থী হলে চিকিৎসকরা সে বিষয়ে নতুন করে ভাববেন। যদিও ভারত “বসুধৈব কুটুম্বকম” তত্ত্বে বিশ্বাসী। যে কারণে, শত বৈরিতা সত্ত্বেও, পাক তরুণীর জন্য হৃদয় উজাড় করে দিয়েছে ভারত। সেখানে, শুধু ঘৃণা আর বিদ্বেষ নিয়েই বেঁচে রয়েছে প্রতিবেশী। আর এখানেই তফাত ভারত ও পাকিস্তানের (India Pakistan Relation)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours