Nil Sasthi 2024: ‘নীলের ঘরে দিয়ে বাতি, জল খাওগো পুত্রবতী’, শুক্রবার নীলষষ্ঠী, জানেন এই ব্রতর তাৎপর্য?

Nil Sasthi Brata: বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় নীল ষষ্ঠী, জানেন এই ব্রতর আসল কাহিনি?
nil-shasti
nil-shasti

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই তেরো পার্বণেরই অন্যতম হল নীল ষষ্ঠীর ব্রত (Nil Sasthi 2024)। সন্তানের সুখ, সুস্বাস্থ্য সৌভাগ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে এই ব্রত পালন করেন বাংলার মায়েরা। গ্রাম থেকে শহর বাংলার মায়েদের কাছে একটি প্রবাদ খুবই জনপ্রিয়, 'নীলের ঘরে দিয়ে বাতি, জল খাওগো পুত্রবতী।' পুত্রের কথা বললেও বর্তমানে পুত্র বা কন্যা সকল সন্তানের মঙ্গল কামনা করে এই পুজো-অর্চনা করেন বাঙালি ঘরের বউরা। এখন অবাঙালিদের মধ্যেও এর প্রচার হয়েছে। 

কবে নীল ষষ্ঠী

বাংলা বছরের একেবারে শেষে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পালিত হয় নীল ষষ্ঠী (Nil Sasthi 2024)। অনেকে একে নীলের পুজোও বলেন। সন্তানের মঙ্গলকামনায় এই দিন মা ষষ্ঠীকে পুজো অর্পণ করা হয়, সেই সঙ্গে উপোস করে অভিষেক করা হয় ভগবান শিবের। শিব পুজোর বিশেষ নিয়ম আছে। আগামী ১২ এপ্রিল, শুক্রবার পালিত হবে নীল ষষ্ঠী। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে সেদিন ২৯ চৈত্র ১৪২৯। এইদিন সন্ধ্যায় নীলের আরাধনা করা হবে।

নীল ষষ্ঠীর পিছনের কাহিনি

প্রচলিত কাহিনি অনুসারে পিতা দক্ষের আয়োজিত যজ্ঞে স্বামী মহাদেবের অপমান সহ্য করতে না পেরে আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে দেহত্যাগ করেছিলেন শিব-পত্নী সতী। তারপর নীলধ্বজ রাজার ঘরে নতুন জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। সেই জন্মে তাঁর নাম হয় নীলাবতী। এই কন্যার সঙ্গে শিবের বিয়ে দেন রাজা নীলধ্বজ। অর্থাত্‍ দেবী পার্বতীর আর এক নাম হল নীলাবতী। গ্রাম বাংলার প্রচলিত কাহিনি অনুসারে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনেই বিয়ে হয়েছিল মহাদেব ও নীলাবতীর। সেই কারণে নীল ষষ্ঠী (Nil Sasthi 2024), চৈত্র সংক্রান্তি ও গাজন শিব দুর্গার বিয়ের উত্‍সব হিসেবে পালিত হয় আমাদের রাজ্যের অনেক জায়গায়। গাজনের সময় গ্রাম বাংলায় শিব ও পার্বতী সেজে ভিক্ষা সংগ্রহের ছবিও দেখা যায়।

নীলের ব্রত কথা

অনেককাল আগে একটি  গ্রামে এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর পত্নী বাস করতেন। তাঁদের দেবতায় বড় ভক্তি। কিন্তু তারা নীলের ব্রতের কথা জানতেন না। তাঁদের সংসারে বারবার সন্তান আসে। কিন্তু তারা কেউই বেশিদিন বাঁচত না। একাধিক বার সন্তান হারিয়ে ভেঙে পড়েন ওই দম্পতি। সংসারের সব সুখ তাদের কাছে অমূলক মনে হত।  দুঃখের কথা মহাদেবকে খুলে বলতে তাঁরা কাশীবাসী হন। একদিন কাশীতে মণিকর্ণিকায় ডুব দিয়ে তাঁরা পাড়ে বসে দুঃখ করছেন। এমন সময় কোথা থেকে এক বুড়ি এসে তাঁদের কাছে জানতে চাইল  'তোরা কাঁদছিস কেন?' বামুনীও কাঁদতে কাঁদতে তাঁদের দুঃখের কথা জানাল। ওই বৃদ্ধা ছিলেন ছদ্মবেশে মা ষষ্ঠী। তিনি তখন জিজ্ঞাসা করলেন,তাঁরা নীল ষষ্ঠী ব্রত করেন কিনা। তাঁরা তো অবাক। বামুনী জিগ্যেস করল, সে আবার কী? বুড়ি তখন জানাল, পুরো চৈত্র মাস সন্ন্যাস যাপন করে করে সংক্রান্তির আগের দিন মা ষষ্ঠী ও ভগবান শিবের পুজো করে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। সেদিন নিরামিষ খেতে হয়। শরবত খেয়ে ভাঙতে হয় উপবাস। এতে তুষ্ট হন  শিব ঠাকুর। আর মঙ্গল করেন সন্তানদের।  এই কথা বলে মা ষষ্ঠী কোথায় যেন মিলিয়ে গেলেন। ষষ্ঠীবুড়ির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ওই ব্রাহ্মণী ফের সন্তান লাভ করেন। সেই থেকেই সন্তানের মঙ্গল কামনা করে নীল ষষ্ঠীর ব্রত (Nil Sasthi Brata) পালন করে আসছেন বাঙালি মায়েরা।

আরও পড়ুন: শুরু হল হিন্দু নববর্ষ 'বিক্রম সংবত ২০৮১', জানেন এর তাৎপর্য?

কীভাবে পালন করা হয় নীল ষষ্ঠী

চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সারাদিন নির্জলা উপবাস রাখতে। সন্ধেবেলা শিবলিঙ্গে জল ঢেলে মহাদেবের পুজোর প্রসাদ মুখে দিয়ে উপবাস ভাঙা হয়। উপোস ভাঙার পরও এদিন ফল, সাবু ইত্যাদি ছাড়া ময়দার তৈরি খাবারই খেতে হয়। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পঞ্জিকা অনুসারে ষষ্ঠী তিথি নয়। তা হলেও এদিন নীল ষষ্ঠীর ব্রত পালন করা হয়। নীল ষষ্ঠীতে (Nil Sasthi Brata) ষষ্ঠী দেবীর সঙ্গেই সন্তানের মঙ্গল কামনা করে মহাদেবের আরাধনা করা হয়ে থাকে। শিবের মাথায় বেলপাতা, ফুল ও একটি ফল ছুঁয়ে রাখতে হয়। অপরাজিতা বা আকন্দ ফুলের মালা পরিয়ে, সন্তানের নামে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করতে হয় 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।' 

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles