মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এবারে নওশাদ সিদ্দিকির (Naushad Siddique) জামিন মামলায় হাইকোর্টে বিচারপতির প্রশ্নের মুখে রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্টে উঠল ভাঙড়ের বিধায়কের জামিন সংক্রান্ত মামলা। বুধবার এই মামলার শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। ধর্মতলার কর্মসূচিতে একসঙ্গে ৮৮ জনকে কেন গ্রেফতার করা হল, পুলিশের কাছে জানতে চাইল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ। অন্যদিকে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে এত দিন ধরে জেলে রাখা নিয়ে মুখ খুললেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও তিনি বিধানসভার স্পিকার নয়, একজন আইনজীবী হিসেবে প্রশ্ন করেছেন, নওশাদ (Naushad Siddique) এতদিন জেলে কেন?
বিচারপতির প্রশ্নের মুখে রাজ্য
প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি ধর্মতলায় আইএসএফের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ধুন্ধুমার কাণ্ড ডোরিনা ক্রসিংয়ে। সেখান থেকে নওশাদ-সহ বাকিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকে একাধিক মামলায় এখনও জেলেই রয়েছেন নওশাদ (Naushad Siddique)। আর এই নিয়েই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের রাজ্যকে প্রশ্ন, একই ঘটনায় কেন ৮৮ জনকে গ্রেফতার? প্রতিরোধমূলক গ্রেফতারিতে কেন এতদিন ধরে জেলে ৮৮ জন? বিচারপতির আরও প্রশ্ন, ‘এই ধরনের ঘটনায় ১-২ জন নেতা বা নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিকে হেফাজতে নিলেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু ৮৮ জন? এই ৮৮ জনের ভূমিকা প্রমাণ করার মত ভিডিও রেকর্ডিং আছে তো?’
বুধবার হাইকোর্টে নওশাদের (Naushad Siddique) হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি এদিন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘একটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৮৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক মাসের বেশি সময় জেলে রয়েছেন তাঁরা।’ যা শুনে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘এমন কী গুরুত্বপূর্ণ বিক্ষোভ ছিল যে একসঙ্গে এতজনকে গ্রেফতার করতে হল পুলিশকে?’ একদিকে বিচারপতি যেমন রাজ্য ও পুলিশকে এই ঘটনায় তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন, অন্যদিকে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। বেঞ্চ বলে, ‘নেতাদেরও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়।’
বিচারপতির নির্দেশ
বিচারপতির প্রশ্নের পর রাজ্যের বক্তব্যে বিস্মিত কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের যুক্তি, আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসের নামে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুলিশের মতে, এগুলি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু বিচারপতিরও প্রশ্ন, একটা মিছিল থেকে ৮৮ জনকে কী করে গ্রেফতার করা হয়। ফলে আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকির জামিন সংক্রান্ত মামলায় সেদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও কারা আহত হয়েছে সেই সংক্রান্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট পুলিশকে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ১ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
নওশাদের জামিন মামলায় মন্তব্য বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের
জেলে থাকার কারণেই বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি নওশাদ (Naushad Siddique)। সম্প্রতি, ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা নওশাদকেও ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিন বুধবার নওশাদের জেল হেফাজতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাব দিতে গিয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর মতামত একজন আইনজীবী হিসেবে। এরপর আজ বিধানসভার স্পিকারকে নওশাদের (Naushad Siddique) পক্ষে বলতে শোনা গেল। তিনি তাঁর জেলে থাকা নিয়ে বলেন, ওনার আইনজীবীদের উচিত ছিল এ বিষয়ে যুক্তিযুক্ত ভাবে পদক্ষেপ করা। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এত দিন জেলে রাখার মত কারণ আছে বলে মনে করি না।” আবার বিচারপতির মন্তব্যেও বলেন, “বিচারপতিরা তো বেল দিতেই পারেন। এমন কথা বলার কী মানে আছে? তিনি তো নির্দেশ দিতেই পারেন। বিচারপতি হিসেবে যদি উনি মনেই করেন যে, জামিন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। সে ভাবে তিনি নির্দেশ দিতেই পারেন। বেল হয়ে যাবে বলেই আইনজীবী হিসেবে মনে করি।”
+ There are no comments
Add yours