মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অতি ভারী বৃষ্টিতে কয়েক সপ্তাহ আগেই নাজেহাল হয়েছিল উত্তর ভারতের জনজীবন (North India Flood)। তার রেশ এখনও চলছে। বেশ কয়েক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও জল জমেই রয়েছে। কিন্তু উত্তর ভারতের বাসিন্দাদের চিন্তা এবং উদ্বেগ বাড়িয়েছে হাওয়া অফিসের ঘোষণা। ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, মঙ্গলবার থেকে উত্তর ভারতে ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মৌসম ভবন আরও জানিয়েছে, এর জেরে বন্যাবিধ্বস্ত (North India Flood) উত্তর ভারতে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে আরও ভয়াবহ। প্রসঙ্গত, রবিবারই ফের বিপদসীমা অতিক্রম করেছে যমুনা।
বিপর্যস্ত উত্তর ভারত...
হিমাচলে বন্যায় (North India Flood) ৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে রবিবার। এদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে ধসের কারণে এবং তিনজন বন্যার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। অন্যদিকে, ভারী বৃষ্টি, মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে বিপর্যস্ত সম্পূর্ণ উত্তরাখণ্ড। দেবভূমির একাধিক রাস্তা ধসের কারণে অবরুদ্ধ। যমুনেত্রী হাইওয়ে সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ। শুক্রবার রাতে লাদাখেও একাধিক জায়গায় মেঘভাঙা বৃষ্টির খবর মিলেছে। অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীরেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার থেকে ভারী বৃষ্টির কথা শুনিয়েছে হাওয়া অফিস।
কী বলছে হাওয়া অফিস?
উত্তর ভারতে ব্যাপক বৃষ্টি ও বন্যার (North India Flood) পরে মাঝে কয়েক দিনের বিরতি। তারপরে ফের ভ্রুকুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের। উত্তর ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত প্রত্যাবর্তন করছে মঙ্গলবার থেকেই, এমনটাই বলছে মৌসম ভবন। ২৫ জুলাই থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে জানা গিয়েছে। রবিবার হাওয়া অফিসের আধিকারিকরা বলেন, ‘‘হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’’ বর্ষার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তাঁরা বলেন, ‘‘উত্তর-পশ্চিম ভারতে ১ জুন থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৪০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে ৩১৮.৮ মিলিমিটার।’’ আইএমডি জানিয়েছে, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে শুধুমাত্র পূর্ব উত্তর প্রদেশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে। স্বাভাবিকের থেকে ২৯ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে যোগী রাজ্যে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং রাজস্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিম রাজস্থানে। মঙ্গল ও বুধবার জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখে বৃষ্টি হবে বলে জানা গিয়েছে। আইএমডি জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু তার স্বাভাবিক অবস্থানের দক্ষিণে চলছে এবং পশ্চিম প্রান্তটি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস গুজরাত ও মধ্য মহারাষ্ট্রের জন্য লাল সতর্কতা জারি করেছে। এই অঞ্চলে ২০৪.৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের আশা করছে৷
কমলা সতর্কতা জারি মহারাষ্ট্রে...
সোমবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে মধ্য মহারাষ্ট্রে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সে রাজ্যের পালঘর, থানে এবং রায়গড়-সহ সাতটি জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। হাওয়া অফিস বলছে, ১১৫.৬ মিলিমিটার থেকে ২০৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে এই সময়ের মধ্যে। এই পূর্বাভাসের মধ্যে হাওয়া অফিস বন্যার (North India Flood) সম্ভাবনাও দেখছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশ, বিদর্ভ, ছত্তিসগড়, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, রায়ালসিমা, কর্নাটক, কেরল ও পুদুচেরিতে মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা বিপর্যস্ত অসমে ফের এই বৃষ্টির সম্ভাবনা চিন্তায় ফলেছে সেখানকার প্রশাসনকে। সোমবার ভারতের উপকূলীবর্তী রাজ্য কর্নাটকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কর্নাটক, কেরল ও পুদুচেরিতে মঙ্গল ও বুধবার বৃষ্টি হবে। অন্যদিকে হাওয়া অফিসের মতে, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা ও পুদুচেরিতে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হবে।
গুজরাতে জারি কমলা সর্তকতা ও কেরলে বন্ধ স্কুল
গুজরাতে ভারী বৃষ্টির (Heavy Rainfall) কারণে দ্বারকার সিনহন এবং ঘি ড্যামে জলস্তর ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, জুনাগড়, সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের বন্যার জলস্তর নামতে শুরু করেছে। প্রশাসন দুর্গতদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষকে সরানো হয়েছে বলে খবর। এরই মাঝে রবিবার গুজরাতের মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে হাওয়া অফিসের ঘোষণা, ‘‘২৪ জুলাই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে গুজরাতে। পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যের দ্বারকা, রাজকোট, ভাবনগর প্রভৃতি জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্যাপক বৃষ্টি হবে।’’ গুজরাতের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সেরাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জুনাগড়ের এলাকায় জলস্তর প্রতিটি বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে খবর।
সোমবার অতিভারী বৃষ্টির (Heavy Rainfall) পূর্বাভাস রয়েছে কেরলে। এর জেরে কেরলের কুন্নুর, ওয়ানাদ, কোঝিকোড় জেলায় স্কুলগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেরলের এই পরিস্থিতির কারণে মৎস্যজীবীদের আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্র যাত্রায় নিষেধ করা হয়েছে। মৌসমভবন বলছে, ‘‘২৪ থেকে ২৭ জুলাই অতিভারী বৃষ্টি হবে কেরলে। পাশাপাশি উপকূল এলাকায় ৪০-৫০ কিমি/ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়া বইবে।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours