School Hygiene: অনেক স্কুলেই নেই শৌচালয়, হাইজিন উইক-এ কাঠগড়ায় রাজ্যের পরিকাঠামো! 

রাজ্যের কয়েক হাজার স্কুলপড়ুয়া নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে, রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই পড়াশোনা করছে
School_Hygiene
School_Hygiene

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

সুস্থ থাকার প্রথম শর্ত পরিচ্ছন্নতা! হাত-পা পরিষ্কার করা, নিয়মিত স্নান, শৌচালয়ের ব্যবহার, শৌচাগারে পর্যাপ্ত জলের ব্যবহার আর মেয়েদের ঋতুস্রাব হলে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এগুলি সম্পর্কে স্কুলেই পাঠ দেওয়া হোক শিশুদের। স্বাস্থ্যবিধি (School Hygiene) নিয়ে সতর্কতা তৈরি হলে জনস্বাস্থ্য নিয়েও সচেতনতা তৈরি হবে। এমনই পরিকল্পনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। মে মাসে তাই হাইজিন উইক পালন করা হয়। কিন্তু যে রাজ্যের একাধিক জেলায় স্কুলে একটিও শৌচালয় নেই, সেখানে স্বাস্থ্যবিধির পাঠ অনেকটাই সোনার পাথরবাটি বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কী অবস্থায় রয়েছে রাজ্যের স্কুলগুলি? 

সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সংস্থা বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, অসম সহ পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যের স্কুল নিয়ে সমীক্ষা চালায়। স্কুলের স্বাস্থ্যবিধির (School Hygiene) পরিকাঠামো নিয়েই মূলত ওই সমীক্ষা হয়। তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় বহু স্কুল 'নো-টয়লেট'! অর্থাৎ, স্কুলে একটিও শৌচালয় নেই। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূমের অবস্থা এরমধ্যে সবচেয়ে শোচনীয়! জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরের ২২ শতাংশ স্কুল 'নো-টয়লেট' অর্থাৎ, ২২ শতাংশ স্কুলে একটিও শৌচালয় নেই। বীরভূমের ১৭ শতাংশ স্কুল ও পুরুলিয়ার ১২ শতাংশ স্কুলে একটিও শৌচালয় নেই। 

স্কুলে শৌচালয় না থাকায় কোন সমস্যা বাড়ছে?

স্কুলে শৌচালয় (School Hygiene) না থাকার জেরে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। বিশেষত মেয়েরা স্কুলছুট হচ্ছে। কারণ, ঋতুস্রাবের সময় তাদের শৌচালয়ের বিশেষ প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকায়, তাদের সমস্যা হয়। তাই ঋতুস্রাব হলে অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায় মেয়েরা স্কুলেই যায় না। তাছাড়া, তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সম্পর্কেও সচেতন করা হয় না। ফলে, নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। স্কুলে শৌচালয় না থাকা এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বলেই জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। স্কুলপড়ুয়ারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তখনই ওয়াকিবহাল হবে, যখন তারা অন্তত শৌচালয় ব্যবহারের সুযোগ পাবে। সেই পরিকাঠামো না থাকলে, স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন, এই শব্দগুলি শুধু বইয়ের পাতার শব্দ হয়েই থেকে যাবে। জীবনে তার প্রয়োগ করতে তারা শিখবে না। স্কুলে শৌচালয় না থাকার জন্য নানা রোগের শিকার হচ্ছে পড়ুয়ারা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনা মহামারির সময় মানুষ টের পেয়েছেন, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি কতখানি জরুরি। রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি কতখানি সাহায্য করে। কিন্তু যেখানে রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে শৌচালয়, জলের কল নেই, সেখানে নানা সংক্রামক রোগ শক্তি বাড়াবে এবং পড়ুয়ারাও নানা ভাইরাসঘটিত রোগে ভুগবে, এই আশঙ্কা অমূলক কিছু নয়। কলেরা, ডায়ারিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি তাই সব সময় গ্রামীণ এলাকায় বেশি হচ্ছে। বিশেষত এ রাজ্যের শিশুদের মধ্যে ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই জানা যায়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, স্কুলে শৌচালয় না থাকার জেরেই এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

কী বলছে ইউনিসেফ? 

করোনা মহামারির প্রথম পর্ব শেষ হতেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল ইউনিসেফ (United Nations children's Funds)। তারা এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, করোনা মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্তত সজাগ হোক সমস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যবিধির তালিম দেওয়া হোক। বিশেষত হাত ধোয়ার উপরে বাড়তি জোর দেওয়া হোক। কীভাবে সাবান দিয়ে দু'হাত ঘষে ধুতে হবে, তা নিয়ে তাদের সচেতন করতে হবে। তবে, সেই বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছিল, অধিকাংশ স্কুলে পর্যাপ্ত জল নেই। তাই কতখানি স্বাস্থ্যবিধি (School Hygiene) বজায় থাকবে, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাবে। রাজ্যের কয়েক হাজার স্কুলপড়ুয়া নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে, রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই পড়াশোনা করছে। মহামারির একাধিক ঢেউ পেরিয়েও হুঁশ ফেরেনি রাজ্য সরকারের। নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি, মিড-ডে মিল নিয়ে গড়মিলের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের নূন্যতম সুরক্ষা কবচ। এমনটাই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles