মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গি মশার (Dengue mosquito)আতঙ্কে ভুগছে সারা রাজ্য। ডেঙ্গি রোগের বাহক মশার নাম এডিস ইজিপ্টাই (Dengue mosquito) । বলা হয়ে থাকে এডিস মশার (Dengue Mosquito) প্রথম উৎপত্তি স্থান ছিল আফ্রিকায়। বর্ষাকাল এবং অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশে এডিস মশার(Dengue Mosquito) দ্রুত বংশ বিস্তার হয়। একসময় আফ্রিকা থেকে জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্রপথে আমেরিকা এবং এশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মশা।
কীভাবে চিনবেন এডিস মশা (Dengue mosquito)?
এডিস ইজিপ্টাই (Dengue mosquito) মশা খালি চোখে দেখে শনাক্ত করা সম্ভব। কিভাবে শনাক্ত করবেন আসুন জানা যাক।
১) ডেঙ্গি রোগ বহনকারী এই মশার (Dengue mosquito) দেহে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে, তাই এটিকে অনেক সময় টাইগার মশাও বলা হয়ে থাকে। খালি চোখে দেখলেই বুঝতে পারবেন।
২) এডিস মশা (Dengue mosquito) মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। অর্থাৎ খুব বড়ো বা খুব ছোট হয়না।
৩) এডিশ মশার (Dengue Mosquito) অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি কিছুটা লোমশ দেখতে হয়।
৪) এডিস মশার(Dengue mosquito) অ্যান্টেনায় অনেকটা দাড়ির মত থাকে। পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লোমশ দেখতে হয়।
৫) পুরনো টায়ার, লন্ড্রি ট্যাংক, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম বা ব্যারেল, অন্যান্য জলাধার, পোষা প্রাণীর পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক, ফেলে রাখা বোতল ও টিনের ক্যান, গাছের ফোকর ও বাঁশ, দেয়ালে ঝুলে থাকা বোতল, পুরনো জুতা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত খেলনা, ছাদে, অঙ্কুরোদগম উদ্ভিদ, বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র, ইটের গর্ত ও অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলে এডিস মশা (Dengue Mosquito) জন্ম নেয়।
এডিস মশা (Dengue Mosquito) কখন কামড়ায়?
ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) দিনের বেলায় সব চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে বলেই বিশেষজ্ঞ দের মত রয়েছে। বলা হয় যে সকাল ও বিকেলে ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) কামড়ানোর সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি। গবেষণা অনুসারে, মশা দিনের বেলায় সব চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, সূর্যোদয়ের প্রায় ২ ঘন্টা পরে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘন্টা আগে। যদিও, এডিস ইজিপ্টাই (Dengue Mosquito) মশা সূর্যাস্তের পরেও মানুষকে কামড়াতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এডিস মশা (Dengue Mosquito) একাধিক বার কামড়াতে পারে, যখন তাদের ডিম পাড়ার সময় হয়। ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন পায়ের গোড়ালি, কনুইয়ের চারপাশে কামড়ায়। ডেঙ্গি মশার(Dengue Mosquito) একটি কামড়ই একজন ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: আসামে নাবালিকা পরিচারিকা খুন মামলায় নয়া মোড়, দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার জেলাশাসক
'ডেঙ্গি' শব্দটি এলো কোথা থেকে
আফ্রিকার সোয়াহিলি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে ‘কান্ডডিঙ্গা পেপো’। এখান থেকেই থেকে ‘ডেঙ্গি’ নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়। এই শব্দের অর্থ- শয়তানের শক্তির কাছে আটকে যাওয়ার মতো ব্যথা। ডেঙ্গি হলে শরীরে ব্যাথা যন্ত্রণা হয় যে। কারও কারও ধারণা স্প্যানিশ ডেঙ্গি শব্দ থেকে এ রোগের নামকরণ করা হয়, যার অর্থ ‘হাড়ভাঙা জ্বর’। ‘দুষ্ট আত্মার সংস্পর্শে এলে মানুষের হাড়গোড় ভাঙার ব্যাথার যন্ত্রণা সমেত জ্বর হয়। অনেকের ধারণা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গোলাম বা দাসরা এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা এঁকে বেঁকে হাঁটতো, তখন তাদের হাঁটার ভঙ্গিমা ডান্ডি নৌকার মতো হতো বলে, এই জ্বরকে বলা হতো ‘ডান্ডি ফিভার’, সেখান থেকে ডেঙ্গি নাম।
ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) কামড়ের লক্ষণ
সাধারণ ডেঙ্গি মশা কামড় দিলে (Dengue Mosquito) চোখে পড়ে মূলত নিম্নলিখিত এই লক্ষণগুলি-
১. তীব্র জ্বর এবং এই জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়।
২. মাথায় তীব্র যন্ত্রণা
৩. চোখের পেছনের অংশে যন্ত্রণা।
৪. জ্বরের পাশাপাশি সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা সঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. গা বমি দেওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ কিংবা লাল লাল দানা দেখা দেয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গিজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ কিংবা বমির সঙ্গে রক্তপাত।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে কিংবা পেটে জল জমে যাওয়া।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে করণীয়:
একথা মনে রাখতে হবে যে ডেঙ্গি ভাইরাসের কোন স্বীকৃত টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। সুতরাং জীবাণুবাহী ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) নিয়ন্ত্রণ করা এবং তার কামড় থেকে নিজে সুরক্ষিত রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি কর্মসূচীর সুপারিশ করেছে: (১) ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) নিয়ন্ত্রণে প্রচার, সামাজিক সক্রিয়তা, এবং জনস্বাস্থ্য সংগঠন গুলিকে শক্তিশালী করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে প্রতিটি দেশকে। (২) স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিটি বেসরকারি সংস্থার সাথে সরকার কে সমন্বয় রেখে চলতে হবে। (৩) প্রতিটি দেশের সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করতে হবে ডেঙ্গি মশার (Dengue Mosquito) নিয়ন্ত্রণের জন্য। (৪) ডেঙ্গি প্রাদুর্ভাব এর সময় সরকার কে প্রমাণ ভিত্তিক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক পদ্ধতি হ’ল এর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা। জল জমার জায়গা খালি করে অথবা কীটনাশক প্রয়োগ করে অথবা এইসব জায়গায় বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্টপ্রয়োগ করে, ডেঙ্গি মশাকে (Dengue Mosquito) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মানব স্বাস্থ্যের উপর কীটনাশকের কুপ্রভাব ব্যাপক। তাই এই কথাকে মাথায় রেখে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি তে জমা জল কম করাটাই ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভাল উপায়। বিশ্রামের সময় মশারি ব্যবহার করে ডেঙ্গি মশার (Dengue Mosquito) কামড় এড়ানো যেতে পারে।
আমরা কী কী করতে পারিে?
১. বাড়ির আশপাশ যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
২. ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে এবং জল জমার পাত্র থেকে দ্রুত জল বের করতে হবে।
৩. ডেঙ্গু মশা (Dengue Mosquito) নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিন বার স্প্রে বা ফগিং করতে হবে।
৪. পাড়ার আশপাশে কোথাও জল জমে থাকলে, সকলে মিলে পরিষ্কার করতে হবে।
৫. রাত্রি বা দিনে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
৬. বৃষ্টির জল দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে কোথাও জমতে দেওয়া যাবেনা । কারণ , এডিস মশা (Dengue Mosquito) এই জায়গাতেই ডিম পাড়ে।
৭. ডেঙ্গু মশার(Dengue Mosquito) প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির পাশাপাশি ম্যাট ব্যবহার করতে হবে।
৮. এডিস মশা(Dengue Mosquito) যেহেতু দিনের বেলাতে কামড়ায় তাই , দিনের বেলায় সাবধানতা বেশী অবলম্বন করতে হবে।
কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
মশা তাহলে আমাদের জন্য শুধু বিরক্তির কারণই নয় বরং ক্ষুদ্র এই পতঙ্গ থেকে যেকোনো মানুষের জীবন নাশের ঝুঁকিও থাকছে। এটা আমরা খুব ভালো করেই জানি। তাই সাবধানতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মশা, মশাবাহিত রোগ, মশার দমনে এখন আর উদাসীন থাকলে চলবে না। যেভাবে ডেঙ্গি বাড়ছে। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডেঙ্গি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। ডেঙ্গি মশার (Dengue Mosquito) কামড় খেয়ে হাসপাতাল যাওয়ার থেকে ডেঙ্গি মশার (Dengue Mosquito) থেকে সাবধানতা অবলম্বন করাটা বেশি জরুরী। ডেঙ্গি প্রতিকারের চেয়ে মশার প্রতিরোধই হবে যুক্তিযুক্ত। মশা নিয়ন্ত্রণ সফল করতে পারলে নিশ্চিত ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা কমবে এবং ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাই এ বছর ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মশা দমনে আমাদেরকে বেশী মনোযোগী হতে হবে। আর এ জন্যে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নাই।
ডেঙ্গি মশা (Dengue Mosquito) কিন্তু আমাদের ঘরের ভেতরেও বংশবৃদ্ধি করতে পারে যেমন- আমাদের ঘরের ভিতরে ফুলদানি, রান্নাঘরে বা বাথরুমে জমে থাকাজল, কলসি বা বালতিতে রেখে দেওয়া পানি প্রভৃতিতে। তাই ঘরের ভিতরের এসব স্থানগুলো আমাদেরকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে মশারা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। বাড়ির মহিলারা এ কাজে বেশি সচেতন হতে পারেন। ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে মশা সর্ম্পকে আমাদেরকে কিছু সাধারণ জ্ঞান রাখতে হবে যেমন- কোন প্রজাতির মশা আমাদের জন্য ক্ষতিকর বা কোন মশা কখন কামড়ায়, মশাদের জীবনচক্র কেমন, কোথায় কিভাবে বংশবৃদ্ধি করে ইত্যাদি। মশা সম্পর্কে ধারণা থাকলে মশা দমন কিছুটা সহজ হবে।
+ There are no comments
Add yours