Kanaksi Khimji: গুজরাটই ছিল তাঁর আদি বাড়ি, জানেন বিশ্বের একমাত্র হিন্দু শেখ কনকসি খিমজির গল্প?

Worlds Only Hindu Sheikh: ওমানের সুলতানকে টাকা ধার দিতেন এই হিন্দু পরিবার! জানুন কনকসি খিমজির কাহিনী
parliament_-_2024-05-21T120725548
parliament_-_2024-05-21T120725548

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু শেখ! সে আবার কীভাবে হয়? শেখতো আরবদের উপাধি। কিন্তু জানেন কি বিশ্বের একমাত্র হিন্দু শেখ (Worlds Only Hindu Sheikh) কনকসি খিমজির (Kanaksi Khimji) বসবাস ওমানে। যদিও তাঁদের আদি বাড়ি গুজরাটে। তখনও ওমান বিশ্বের ‘অয়েল পাওয়ার’ হয়ে উঠেনি। তখন দেশটির সমুদ্রবন্দর দারুণ শক্তিশালী। ওই সময়ে এক হিন্দু ব্যবসায়ী গুজরাট থেকে ভাগ্য অন্বেষণের জন্য পাড়ি দিলেন ওমানে। ১৮৭০ সালে গুজরাটি ব্যবসায়ী রামদাস খাদ্য শস্য, চা, মশলা নিয়ে ওমান উপকূলে তাঁর জাহাজ লাগালেন। মাসকাটে রামদাস ও তাঁর সন্তানরা গড়ে তুললেন তৎকালীন ওমানের (Oman) সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক এন্টারপ্রাইজ খিমজি রামদাস গ্রুপ।

হিন্দু শেখের রহস্য

শেখ সাধারণত একটি মুসলিম উপাধি যা নেতা, শিক্ষক বা সন্মানীত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কনকসি খিমজিই (Kanaksi Khimji) হচ্ছেন পৃথীবির একমাত্র হিন্দু যার রয়েছে ‘শেখ’ (Worlds Only Hindu Sheikh) উপাধি। সেই সময় ওমানের (Oman) সুলতান সা’ইদ রামদাসের পরিবারের কাছ থেকে ব্যবসায়িক পুঁজি ধার করতেন। সা’ইদ হলেন লিজেন্ডারি সুলতান, প্রয়াত কাবুজের বাবা। পরবর্তীতে কাবুজ সুলতান হলে রামদাসের নাতি কনকসি খিমজিকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দান করেন। তাঁকে ‘শেখ’ উপাধিও দিয়েছিলেন সুলতান।

গুজরাটের সঙ্গে আত্মিক টান

১৪৪ বছর আগে ১৮৭০ সালে কনকসি খিমজির (Kanaksi Khimji) পিতামহ রামদাস থ্যাকারসি গুজরাটের (Gujarat) উপকূলীয় শহর  মান্ডভি থেকে ওমানের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। ব্যবসায়ী হিসাবে, তাঁরা ভারত থেকে শস্য, চা এবং মশলা নিয়ে গিয়েছিলেন। ওমানের খেজুর, শুকনো চুন এবং লবনের বিনিময়ে তাঁরা ব্যবসা শুরু করেন। কনকসি খিমজি মুম্বইতে পড়াশোনা করে ১৯৭০ সালে ব্যবসার দায়িত্ব নেন। ১৯৩৬ সালে মাসকাটে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি মুম্বইতে পড়াশোনা করেন। ওমানে হিন্দুদের যে শ্রদধার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর কারণ খিমজিরাই। ওমানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাড়ালেও হিন্দু মূল্যবোধ ও ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিদেশেও ছড়িয়ে দিয়েছেন খিমজিরা।

ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান

 ভগবান শ্রীনাথজি তথা নারায়ণের প্রতি অগাধ বিশ্বাস খিমজিদের। নিরামিষ ভোজী খিমজি (Kanaksi Khimji) তাঁর ভারতীয় শিকড়ের সাথে ওমানকে মোশানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান শুধু ওমানে বাণিজ্যই করে না, সে দেশের মানুষের জন্যও জনহিতকর নানান কাজে নিযুক্ত থাকে। কনকসি খিমজির নিরলস প্রচেষ্টা তাঁর সংস্থাকে সারা বিশ্বের কাছে এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সম্মানীয় ভারতীয় কনকসি খিমজি। মাসকাটে প্রথম ইংরেজি ভারতীয় স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন কনকসি। এখন ওমানে ৩৫ হাজার ছাত্রদের জন্য ১৯টি ভারতীয় স্কুল রয়েছে। 

আরও পড়ুন: অলিম্পিক্সে ভারতীয় ভোজ! প্যারিসে নীরজদের পাতে ভাত-ডাল-রুটি, সঙ্গে কী?

ওমানের উন্নতি 

ওমানে (Oman) লক্ষ লক্ষ ভারতীয় বাস করে, বেশিরভাগ ধনী গুজরাটি ব্যবসায়ী। ওমান খুব কম মুসলিম দেশের মধ্যে একটি যেখানে হিন্দু মন্দির রয়েছে। মুসলিম ও হিন্দুদের সম্পর্ক বৈষম্য ও কলহমুক্ত। এর একটি কারণ ওমানের উন্নতিতে খিমজিদের ভূমিকা। সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল কনকসি খিমজিরই (Kanaksi Khimji) । তাঁর বাবা গোলকদাস খিমজির থেকে যখন তিনি দায়িত্ব নেন তখনও  ওমানে মোটরচালিত নৌযান জাহাজ চালু করা হয়নি। এর আগে, দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময়, মিত্র বাহিনীর পুরো ঘাঁটির জন্য খিমজিদের সরবরাহকারী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। "এটি আমাদেরকে রাজস্ব আয় করার এবং আমাদের ভিত্তি শক্তিশালী করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা দ্রুত সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এবং মেরিটাইম শোর সাপোর্টের শিল্প শিখেছি।" এক অনুষ্ঠানে নিজেই একথা বলেছিলেন কনকসি খিমজি। মাসকাটে স্থাপিত প্রথম ব্যাঙ্ক ছিল এইচএসবিসি , ৬০ বছর আগে এই ব্যাঙ্কের ভবন নির্মাণ করেছিল খিমজি রামদাস (কেআর) গ্রুপ। এর আগে লেনদেন হতো বিনিময় বা রূপার মাধ্যমে। বাইত আল ফালাজ, বর্তমানে রুউই নামে পরিচিত, ওমানের প্রথম বিমানবন্দরও খিমজি গ্রুপ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। খিমজিরাই ১৯৬৯ সালে প্রথম ফোর্ড ডিলারশিপ অর্জন করেছিলেন এবং মজার ব্যাপার হল, ওমানের (Oman) সুলতান তাদের প্রথম গাড়ির অর্ডার দিয়েছিলেন।

ওমান ক্রিকেটে খিমজিদের ভূমিকা

পারিবারিক ভাবে ক্রিকেট অনুরাগী কনকসি খিমজি (Kanaksi Khimji) হলেন ওমান ক্রিকেট বোর্ডের ফাউন্ডিং চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালে তার হাত ধরেই ওমান ক্রিকেটের যাত্রা শুরু। আজকের ওমান ক্রিকেটের যে অবয়ব তার জন্য খিমজি’র অবদান সবচেয়ে বেশি। ওমান ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, আমেরাত স্টেডিয়াম তাঁর ভিশনেরই একটি অংশ। ওমান ক্রিকেটে কনকসি খিমজির অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১১ সালে আইসিসি তাঁকে লাইফ টাইম সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। বর্তমানে কনকসি খিমজির ছেলে পঙ্কজ খিমজি ওমান ক্রিকেটের দায়িত্বে রয়েছেন।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles