মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গাজা সীমান্তের কাঁটাতার কেটে গত শনিবার ইজরায়েলে অনুপ্রবেশ করেছিল হামাস বাহিনী। ৪ দিনের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর গাজা সীমান্ত জঙ্গি-মুক্ত করে পুনরুদ্ধার করল ইজরায়েলি সেনা। যুদ্ধে এখনও অবধি ৩ হাজার নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২০০ জন ইজরায়েলি। ৯০০ জন মারা গিয়েছেন গাজায়। তবে, লড়াই (Israel Hamas War) এখনও শেষ হয়নি। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, জঙ্গিগোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবে না সেনা। সেই মতো, বড় অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইজরায়েলি সেনা।
ইজরায়েলকে বাঁচিয়েছে ‘আয়রন-ডোম’
শনিবার দক্ষিঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। গাজা স্ট্রিপ থেকেই ইজরায়েলের ওপর হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ইজরায়েলের দিকে ধেয়ে এসেছিল ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট। ইজরায়েলের দাবি, ২০ মিনিটে প্রায় ৫ হাজার রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল ইজরায়েলের ওপর। কিন্তু, বেশিরভাগ রকেটকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করে দেয় ইজরায়েলের ‘আয়রন-ডোম’। কিন্তু, ঝাঁকের মধ্যে থেকে বহু রকেটগুলি আছড়ে পড়ে ইজরায়েলের বুকে (Israel Hamas War)।
বর্বর, নির্মম হত্যালীলার সাক্ষী বিশ্ব
শুধু আকাশপথে নয়, হামাস বাহিনী হামলা চালানো হয় সমুদ্রপথ ও স্থলপথেও। গাজা সীমান্ত জুড়ে ৪০ কিমি লম্বা কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা দিয়ে সেই বেড়া কেটেই অনুপ্রবেশ করেছিল হামাস জঙ্গিরা। সীমান্ত পেরিয়ে গাড়ি নিয়ে ইজরায়েলের গাজা-সীমান্তবর্তী শহরে ঢুকে পড়ে শয়ে-শয়ে সশস্ত্র জঙ্গি। পাশাপাশি, প্যারাগ্লাইড করে আকাশপথে ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ইজরায়েলি সেনা ছাড়াও শয়ে শয়ে অসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্মম হত্যালীলা চালায় জঙ্গিরা। বিরি নামক একটি জায়গাতেই হামাসের যোদ্ধারা শতাধিক নাগরিককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানা গিয়েছে (Israel Hamas War)। আর শুধু হত্যা করাই নয়। হত্যার সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। কোথাও তরুণীকে হত্যা করে তাঁর নগ্ন দেহ শহরজুড়ে ঘোরানো হয়। আবার কোথাও অপহরণ করে পণবন্দি করা হয় শতাধিক ইজরায়েলবাসীকে। জঙ্গি হামলায় মোট ১২০০-র বেশি ইজরায়েলির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯০০-রও বেশি সাধারণ ইজরায়েলি নাগরিকই রয়েছেন।
ইজরায়েলি জবাবে খতম হামাসের দুই শীর্ষ কর্তা
হামাসের এই অতর্কিত হামলার জবাব দিতে যুদ্ধ ঘোষণা (Israel Hamas War) করে ইজরায়েল। হামাস-অধ্যূষিত ও নিয়ন্ত্রিত গাজা স্ট্রিপে মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ে ইজরায়েলি বোমা-ক্ষেপণাস্ত্র। ইজরায়েলি সেনার জবাবি হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজার একাংশ। গাজাতেই হামাসের মূলকেন্দ্র বা ঘাঁটি। ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের দাবি, হামাসের ৫০০টি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। ইজরায়েলের বায়ুসেনা আইএএফ দাবি করেছে, তারা হামাসের অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রী জাওয়াদ আবু শামলাকে খতম করেছে। পাশাপাশি, জঙ্গি সংগঠনের রাজনৈতিক ব্যুরোর অন্যতম সিনিয়র সদস্য জাকারিয়া আবু মামারকেও খতম করা হয়েছে বলে দাবি ইজরায়েলি সেনার। ১৫০০ হামাস জঙ্গির দেহ উদ্ধার করা হয়েছে গাজা স্ট্রিপ ও তার আশেপাশের এলাকাগুলি থেকে। অন্যদিকে, গাজা প্রশাসনের তরফে এখনও অবধি ৭৬৫ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
গাজায় জরুরি পরিষেবা বন্ধ করল ইজরায়েল
শুধু হাতে মারা নয়, হামাসকে ভাতে মারার ব্যবস্থাও করেছে ইজরায়েল (Israel Hamas War)। সোমবার গাজাকে চারদিক থেকে ঘিরতে ট্যাঙ্ক বাহিনীকে নামায় আইডিএফ। বন্ধ করে দেওয়া হয় জল, খাবার ও বিদ্যুতের লাইন। গাজার এই সমস্ত জরুরি পরিষেবা ইজরায়েলের উপর নির্ভরশীল। মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘের তরফে বলা হয়, গাজায় ইজরায়েলি বিমান হানায় ৭৯০টি আবাসন ধ্বংস হয়েছে। এছাড়াও ৫৩৩০টি আবাসন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজায় বর্তমানে গৃহহীন অবস্থায় রয়েছেন ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০০ জন। এদের সিংহভাগই স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
‘গ্রাউন্ড অ্যাসল্ট’-এর প্রস্তুতি ইজরায়েলের
মঙ্গলবার ইজরায়েলের তরফে জানানো হয়, তারা গাজা সীমান্ত পুনরুদ্ধার করেছে। গাজার সীমান্ত ফের এখন ইজরায়েলি সেনার নিয়ন্ত্রণে। সে দেশের সেনার তরফেও বিবৃতিত জানানো হয়েছে, গাজার সীমান্ত ও দক্ষিণ অংশের অধিকাংশ অঞ্চলই পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ১২টিরও বেশি শহর থেকে উৎখাত করা হয়েছে হামাস বাহিনীকে। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধিনতা দেওয়া হয়েছে। হামাসের ঘাঁটি ধ্বংস করতে এবার পূর্ণ শক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চলেছে তাদের সেনা (Israel Hamas War)। এর জন্য প্রস্তুতি সারা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ‘গ্রাউন্ড অ্যাসল্ট’ শুরু হবে। অর্থাৎ, এবার গাজায় নেমে হামাস-নিধন অভিযান চালাবে আইডিএফ। তাঁর হুমকি, গাজা আর পুরনো দিনে ফিরবে না। ফলে, এটা সহজেই অনুমেয় যে, আগামী কয়েকদিন যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours