মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যের ছেলে সৌভিকের বাড়ি রয়েছে লন্ডনে! এমনই দাবি করল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতিতে মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হওয়ার পরই তদন্তে জড়িয়ে যায় তাঁর ছেলে ও স্ত্রীর নাম। চার্জশিটেও উঠে আসে সৌভিক ও শতরূপার নাম। এরপর আদালত সমন করলে আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা দুজনেই। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ইডি-র বিশেষ আদালতে ছিল সেই আত্মসমর্পণ ও জামিনের আবেদনের শুনানি। এদিন দুজনের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনল ইডি। ইডির দাবি, লন্ডনে একাধিক সম্পত্তি রয়েছে সৌভিকের এবং তার জন্যই বারবার বিদেশ সফর করেছেন মানিক পুত্র। এ প্রসঙ্গে আদালতে টেনে আনা হয় শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট প্রসঙ্গও।
ইডির কী দাবি?
এদিন আদালতে ইডি দাবি করেছে, ‘এই মামলায় ড্রামাটিক ডেভেলপমেন্ট (নাটকীয় মোড়) সামনে এসেছে।’ শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের উপমা টেনে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করে ইডির আইনজীবী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কোথাও একটা পচন ধরেছে। এই দুর্নীতির প্রধান নায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য। মানিকের দুর্নীতিতে তাঁর স্ত্রীরও সক্রিয় ভূমিকা আছে, তিনি সব জানতেন।” এদিন ইডি-র তরফে আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র ও ফিরোজ এডুলজি জানান, ২০১৭-তে সৌভিক ইউকে গিয়েছিলেন। ইডি সব নথি খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছে ওই বছরে দুবার বিদেশে গিয়েছিলেন মানিক-পুত্র। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য গিয়েছিলেন বলেই দাবি করে ইডি। তাঁদের এই বিদেশ যাত্রা নিয়ে কোনও তথ্য দেয়নি বলে জানায় ইডি। ওই দু'বারই আবাসিক ভিসার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন সৌভিক।
ইডি আদালতে আরও জানিয়েছে, শুধুমাত্র লন্ডন ভ্রমণ নয়, ২০১২ সাল থেকে মানিক ভট্টাচার্য সপরিবারে অন্তত ২০ বার বিদেশযাত্রা করেছেন। চিন, মলদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউকে, ইউরোপ, মালয়েশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন তিনি। এইসব সফরে ৫ কোটি টাকার মত খরচ হয়েছে বলেও জানান মানিক। এই ৫ কোটি টাকা কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়নি, ফলে ইডির সন্দেহ এই টাকা দুর্নীতিরই।
সৌভিকের সাফাই
আদালত সূত্রে খবর, এদিন কাঠগড়ায় তোলা হলে মানিক পুত্র বলেন, "২০১৬ সালের অগাস্ট মাসে আমি প্রথম লন্ডনে গিয়েছিলাম। পড়াশোনার জন্যই ভিসার আবেদন করেছিলাম। বায়োমেট্রিক রেসিডেন্ট পারমিট দেওয়া হয়েছিল সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। আমার কোনও বাড়ি নেই। আমি লন্ডনের বোর্ডিংয়ে থাকতাম। ২০১৭ সালে আমি কোনও ভিসার আবেদন করিনি।"
বিচারক কী বললেন?
এদিন ইডির একাধিক দাবি শোনার পরই বিচারকের প্রশ্ন, “এত তথ্য থাকার পরেও কেন তদন্তকারী অফিসাররা মানিকের স্ত্রী বা পুত্রকে গ্রেফতার করলেন না?” এই জবাবে ইডি-র আইনজীবী বলেন, “আমরা গ্রেফতার করিনি, কারণ সেই পর্যায়ে প্রয়োজন ছিল না। আমরা কাস্টডিয়াল ট্রায়াল করতে চাই।” এছাড়াও বিচারক ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছেন, “সৌভিক ভট্টাচার্যের বাড়ি রয়েছে তা কী ভাবে প্রমাণিত হচ্ছে? পালটা ইডির আইনজীবী জানান, আবাসিক ভিসার আবেদন জানিয়েছিলেন সৌভিক। এর থেকেই প্রমাণিত তিনি তথ্য গোপন করছেন।
বিদেশমন্ত্রককে চিঠি ইডির
ইডি সূত্রে খবর, মানিকের লন্ডনে সম্পত্তি আছে কিনা জানতে বিদেশমন্ত্রককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানো হয়েছে অভিবাসন দফতরেও। অভিবাসন দফতরের সাহায্য নিয়ে সৌভিকের লন্ডন যাত্রার খতিয়ান বের করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
মানিকের স্ত্রী ও ছেলেকে ধমক বিচারকের
মানিকের ছেলে ও স্ত্রীর আইনজীবী ও ইডি-র আইনজীবীর মধ্যে যখন সওয়াল-জবাব চলছে, তখন কোর্টরুমের মধ্যে মানিকের ছেলে সৌভিক ভট্টাচার্য ও স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্কে কথা বলতে দেখা যায়। এই দৃশ্য দেখেই কার্যত ধমক দেন বিচারক। বিচারক বলেন, “আপনারা কাস্টডিতে আছেন। জামিনের আবেদনের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা স্বাধীন নয়। এমন কোনও আচরণ করবেন না যাতে কোর্ট কোনও পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এভাবে কথা বললে কলকাতা পুলিশকে ডেকে লকআপে পাঠাতে বলব।”
+ There are no comments
Add yours