মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জৈব ও প্রাকৃতিক চাষের ওপর নির্ভর করে বেড়ে উঠছে দেশের পরিবর্তনশীল কৃষি ব্যবস্থা। এবার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনের (Beekeeping) মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, যা ক্ষুদ্র কৃষকদের জীবিকা ব্যবস্থায় একটি অসাধারণ প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, মধু উৎপাদন দেশে কৃষকদের জীবনশৈলীরও পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
লকডাউনের সময় থেকেই উদ্যোগ শুরু
প্রসঙ্গত, গত ২০২০-২১ সালে করোনা আবহে লকডাউন চলাকালীন নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন দেশবাসী। কৃষির গুরুত্ব কতখানি, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তাঁরা। যদিও, ওই সময় কেন্দ্র আত্মনির্ভরতার বার্তা দিয়েছিল। একইসঙ্গে গুরুত্ব দিয়েছিল কৃষিজ ফসলে। তার ফলস্বরূপ উষরমুক্তি প্লাস প্রকল্পে ও ১০০ দিনের কাজে সবজি চাষে জোর দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হয় সবজি চাষ, উদ্যান পালন। তাতে একদিকে যেমন বাজারে পর্যাপ্ত সবজির জোগান থাকবে, একইসঙ্গে আয় বাড়বে গোষ্ঠীর সদস্যদের। এবার কৃষকদের মৌমাছি পালনের (Beekeeping) ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
মৌমাছি পালন কীভাবে করবেন কৃষকরা?
প্রসঙ্গত, শুরু হয়েছে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌমাছি পালন (Beekeeping)। এর জন্য দরকার বিশেষ ধরনের বাক্স, যেখানে মৌমাছিদের কলোনি থাকবে। ২০-৫০ হাজার মৌমাছি থাকবে একটি কলোনিতে। কৃষি প্রধান এলাকা, যেখানে সরষে, তিষি, ফুল চাষ হয় এবং বনভূমি এলাকায় ওই বাক্স রাখতে হবে। একজন চাষিকে কমপক্ষে ৪০-৫০টি বাক্স রাখতে হবে মৌমাছি পালনে। খরচ পড়বে ৫ হাজার টাকা। তার সঙ্গে শ্রমিকের খরচ ও কখনও মৌমাছিদের চিনি অথবা গুড়ের রস করে খাওয়ানোর খরচ। মৌমাছি পালনের মরশুম নভেম্বর থেকে মে-জুন মাস। মরশুমে একজন চাষি ২-৩ মাসে একটা কলোনিতে ১২-১৪ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। বাজারে বিভিম্ন নামী কোম্পানির থেকে অনেকগুণ উৎকৃষ্টমানের হবে এই মধু।
লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব মডেল
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে ভারতে মধু উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ৭০ শতাংশ অবদান হল অসংগঠিত ক্ষেত্রের। এই নিরিখে মৌমাছি পালনকে (Beekeeping) সবচেয়ে লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি-ব্যবসার মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন, মধু উৎপাদন আমাদের কৃষকদের আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের জীবনশৈলীরও পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি দেশের যুব জনগোষ্ঠীকে ব্যবসায়িক মনোভাবের মাধ্যমে মৌমাছি পালন এবং নতুন সম্ভাবনাগুলি উপলব্ধি করার আহ্বান জানান।
কী বলছে সমীক্ষার রিপোর্ট?
সম্প্রতি, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ 'মন কি বাত'-এর প্রেক্ষাপটে ভারতব্যাপী একটি সমীক্ষা করেছে। যেখানে ৪০ জন মৌমাছি পালক এবং ৪০টি মৌমাছি পালনকারী (Beekeeping) দল অংশগ্রহণ করেছিল। সমীক্ষাটি ছিল দেশের ২৬টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৬টি জেলা জুড়ে। তাতে দেখা গেছে, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলি সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনী কর্মসূচির মাধ্যমে মৌমাছি পালনের অনুশীলনকে উন্নত করতে সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের এইসব কর্মসূচি প্রায় ৩২.৫০ শতাংশ মৌমাছি পালনকারীকে অনুপ্রাণিত করেছে। মৌমাছি পালনের লাভজনক দিক প্রায় ২৭.৫০ শতাংশ ব্যক্তিকে মৌমাছি পালনে উদ্বুদ্ধ করেছে। সফলতার নিরিখে সর্বমোট ২২.৫০ শতাংশ একক মৌমাছি পালনকারী এটিকে ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। লক্ষণীয় হল, মৌমাছি পালন সহায়ক চাষের বিকল্প হিসাবে সত্যিই একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours