মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ও তাঁর কন্যার সঙ্গে দেখা করতে তিহাড়ে পৌঁছে গেল তৃণমূলের ২ সাংসদ। শুক্রবার, তৃণমূলের ২ প্রতিনিধি— দলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন এবং বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল জেলবন্দি অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করেন।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও অনেক আগে থেকে কলকাতায় জেলে বন্দি রয়েছেন দলের একদা মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত, তাঁকে দেখতে দলের তরফে কাউকে জেলে পাঠানো হয়নি। অথচ, অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করতে একেবারে তিহাড়ে পৌঁছে গেল ২ জন সাংসদ! রাজনৈতিক মহলের কাছে এই বিষয়টির অন্য তাৎপর্যপূর্ণ রয়েছে।
পার্থ বনাম অনুব্রত
রাজনৈতিক মহলের মতে, দুই দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি দুই হেভিওয়েট নেতার ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দুরকম আচরণ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর উপর থেকে কার্যত ‘হাত তুলে নেয়’ তৃণমূল। প্রথমে পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে সাসপেন্ড করা হয়। তারপর দল থেকেও তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
উল্টোদিকে, গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতর (Anubrata Mondal) ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। এখনও তিনি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি পদে বহাল। তাঁকে সাংগঠনিক পদ থেকেও সরায়নি তৃণমূল। দল থেকে তো বরখাস্তের প্রশ্নই নেই। এমনকি, একাধিক সমাবেশে ‘কেষ্ট’-র ওপর আস্থা রাখতেই শোনা গিয়েছে তৃণমূলনেত্রীর গলায়। দল যে অনুব্রতর পাশে রয়েছে, তা নিজ মুখে ঘোষণা করেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেষ্ট-সাক্ষাতের নেপথ্যে কোন রসায়ণ?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এখন অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করতে গেল তৃণমূল প্রতিনিধিদল? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। বীরভূম জেলাকে নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন কেষ্ট। দলে তো তাঁকে ‘বীরভূমের বাঘ’ বলেও উল্লেখ করা হয়। এখন গরু পাচারকাণ্ডে সেই ‘বাঘ’ এখন তিহাড়ের ‘খাঁচায়’ বন্দি। গতকালই, অনুব্রতর (Anubrata Mondal) শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। আগামী একমাস শুনানি হবে কি না, তার নিশ্চিয়তা নেই। ফলত, গোটা জুন মাসটাই হয়ত, জেলেই থাকতে হবে কেষ্টকে।
আরও পড়ুন: বাবার শুনানি স্থগিত, মেয়ের জামিন খারিজ! আপাতত তিহাড়েই কেষ্ট-সুকন্যা
নজের পঞ্চায়েত ভোট?
দলে ‘দক্ষ সংগঠক’ হিসাবে পরিচিত অনুব্রত (Anubrata Mondal)। পঞ্চায়েত হোক বা বিধানসভা, অতীতে একাধিক ভোট বৈতরণী পার করিয়েছেন কেষ্ট। সব ভোটে কেষ্ট-ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তা নিয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মনে কোনও সন্দেহ নেই। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে, কেষ্টর থাকা আর না থাকার মধ্যে ফারাকটা বিলক্ষণ জানে দল। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা দরকার ছিল। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য বীরভূম জেলায় তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে দলের নেতৃত্বের জন্য অনুব্রতর কোনও বার্তা থেকে থাকলে, তা আদান-প্রদান হবে।
পাশে থাকার বার্তা?
রাজনৈতিক মহলের আরেকটা অংশ মনে করছে, নিজের থেকেও কেষ্টর বেশি উদ্বেগ তাঁর মেয়েকে নিয়ে। একই মামলায় মেয়ে সুকন্যাও তিহাড়ে বন্দি। ফলে, মেয়ের স্বার্থে যদি কেষ্টর মুখ খুলে যায়, তাহলে তৃণমূলের মাথাদের জন্য আরও বিপদ বাড়বে। শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় কয়েকজনকে রাজসাক্ষী করা হতে পারে বলে বৃহস্পতিবারই আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। এবার গরু পাচার মামলায় যদি অনুব্রত (Anubrata Mondal) মুখ খোলেন, তাহলে কী হতে পারে, তা আগাম আঁচ করে হয়ত ভয় পাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যে কারণে, দল যে তাঁর পাশে আছে, সেই বার্তা অনুব্রতকে দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।
সব মিলিয়ে কেষ্টকে দেখতে তৃণমূল প্রতিনিধিদলের তিহাড় যাত্রাকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে তুমুল আলোড়ন!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours