মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আগামীকাল ৭ জুলাই, শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী রথ ও রথের মেলা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম রানিগঞ্জের (Asansol) সিয়ারসোল রাজবাড়ির রথযাত্রা। প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন এই রথ। শুধুমাত্র একটি পুজো অর্চনা নয় বরং রানিগঞ্জ সহ সামগ্রিক খনি অঞ্চলের এক ঐতিহ্য মণ্ডিত সাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশ। এখানে আশেপাশের জেলা থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি এখন চরম তুঙ্গে।
কে প্রচলন করেছিলেন রথযাত্রা (Asansol)?
কথিত আছে কয়লা শিল্পের প্রসারকে কেন্দ্র করে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে রানিগঞ্জের (Asansol) সিয়ারসোল অঞ্চলে হাজির হয়েছিলেন আলেকজাণ্ডার কোম্পানির অন্যতম কর্মচারী গোবিন্দ প্রসাদ পণ্ডিত। পরবর্তী ক্ষেত্রে তিনি সিয়ারসোল মৌজার জমির ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেন। ১৮৬০ সালে গোবিন্দ পণ্ডিত রানিগঞ্জের পুরানো রাজবাড়ি অঞ্চলে গোবিন্দ প্যালেস নির্মাণ করেন। যা বর্তমানে খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে। গোবিন্দ পণ্ডিতের মেয়ে হরসুন্দরী দেবী ব্রিটিশরাজের পক্ষ থেকে মহারাণী উপাধি পেয়ে ১৮৭৭ সালে তাঁদের কুলদেবতা দামোদরচন্দ্র জিউ-এর পূজা অর্চনা উপলক্ষে রানিগঞ্জে রথযাত্রার প্রচলন করেন। তবে সেই সময় রথটি কাঠের নির্মিত ছিল। হরসুন্দরী দেবীর বিবাহ হয়েছিল সিঙ্গুরের মতিলাল মালিয়ার সাথে। সেই থেকে রানিগঞ্জে মালিয়া পরিবারের বসতি। হরসুন্দরী দেবীর সময়ে বানানো কাঠের রথটি পরবর্তী ক্ষেত্রে আগুন লেগে পুড়ে গেলে, ১৯২৩ সালে রাজা প্রমথনাথ মালিয়া কলকাতার এক সংস্থার মাধ্যমে নয়টি গম্বুজ বিশিষ্ট নবরত্ন মন্দিরের আদলে বর্তমানের পিতলের রথটি নির্মাণ করেন।
ত্রিতল বিশিষ্ট রথ
আসানসোলের (Asansol) রানিগঞ্জের ত্রিতল এই রথটি (Rath Yatra of Searsole Rajbari) প্রায় ৩০ ফুট উঁচু ও ৮-১০টন ভারী। রথ যাত্রা উৎসবের পূণ্য তিথিতে রথের তৃতীয় স্তরে আরূঢ় হন রাজ পরিবারের কুল দেবতা দামোদরচন্দ্র জিউ। এরপরেই ভক্তগণ এই রথের দড়ি টেনে নিয়ে যান। যদিও বর্তমানে এই রথ লরির সাথে বেঁধে চালিত হয়। দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম হন এই রথ যাত্রার মেলায়।
আরও পড়ুনঃ কামদুনিকাণ্ডে নির্যাতিতার ছোটভাইকে ‘প্রাণে মারার হুমকি’, শোরগোল
আয়োজকদের বক্তব্য
বিগত কুড়ি বছর ধরে রানিগঞ্জের (Asansol) এই ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা কর্মসূচি ও মেলার আয়োজন করে আসছে সিয়ারসোল স্পোর্টস এণ্ড কালচার্যাল সংস্থা। সংস্থার পক্ষ থেকে হৃদয়লাল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “আগে এখানকার রথের মেলায় কৃষি ভিত্তিক সরঞ্জাম পাওয়া গেলেও বর্তমানে তার পরিমাণ কমে এসেছে। এর প্রধান কারণ কৃষি ভিত্তিক এলাকা বর্তমানে খনি শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। তবে রানিগঞ্জের ঐতিহ্য মণ্ডিত রথযাত্রা উপলক্ষ্যে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। রথযাত্রার (Rath Yatra of Searsole Rajbari) দিনগুলিতে প্রতিদিনই দামোদরচন্দ্র জিউ-এর পূজা অর্চনার ব্যবস্থা থাকে। এই মুহূর্তে রথযাত্রা আয়োজন উপলক্ষ্যে জোর কদমে প্রস্তুতি চলছে।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours