মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দুর্ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। ভগবান সহায়, হয়নি। পরে অসুস্থতায় মৃত্যু একরকম নিশ্চিত, এমনটা ভেবেছিলেন চিকিৎসকরাও। কিন্তু বেঁচে আছেন অপূর্ব সামন্ত। তখন কোনও স্বপ্নই ছিল না তাঁর চোখে। পরিবারের লোককে চিকিৎসক বলেই দিয়েছিলেন, হাতে বেশি সময় নেই। ভগবানকে ডাকার পাশাপাশি, ছেলে যা যা ভালবাসে, সে সব খাওয়ানোর কথাও বলেছিলেন। দিয়েছিলেন শেষ দিনগুলি সুখে কাটানোর পরামর্শও। যাঁর সম্পর্কে এই সব পরামর্শ, সেই অপূর্ব সামন্তও তখন নিজের মৃত্যুই চেয়েছেন। কিন্তু এখন ঘাটালের (Paschim Medinipur) সেই যুবক অপূর্ব স্বপ্ন দেখান অনেককে। হুইল চেয়ারে বসেই দেশকে সম্মানিত করার স্বপ্ন দেখেন নিজে। এবার প্রথম বিদেশেও যাচ্ছেন স্বপ্ন সফল করতে।
চোখেমুখে দেশের জন্য পদক জেতার স্বপ্ন (Paschim Medinipur)
আগামী সোমবার থেকে তাইল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ‘ড্রাগন বোট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ’। তাতে ভারতীয় প্যারা দলের প্রতিনিধি অপূর্ব। তিনি বললেন, ‘‘আপাতত আমার একটাই স্বপ্ন। দেশের হয়ে পদক জয়।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহর থেকে অনেকটাই দূরে দাসপুরের দুবরাজপুর গ্রামে বাড়ি অপূর্বর। ২০১৭ সালে মারাত্মক বাইক দুর্ঘটনা। বাইকের হ্যান্ডেলটা ভেঙে ঢুকে গিয়েছিল কোমরে। প্রথম বার সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরলেন। কিন্তু মেরুদণ্ডের আঘাত শয্যাশায়ী করে দেয়। দিনের পর দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে ‘বেড সোর’ হয়ে যায়। এক সময়ে পিঠে ‘সংক্রমণ’ হয়ে যায়। তখনই জবাব দিয়ে দেন স্থানীয় (Paschim Medinipur) চিকিৎসকরা। আর অপূর্ব কোনও রকমে বাইরের দিকে চেয়ে থাকতেন এক ফালি জানালা দিয়ে। জানালা নয়, অপূর্ব প্রথম বার আলো দেখতে পেয়েছিলেন ফেসবুকে। তাঁর শরীরের অবস্থার কথা জেনে ফেসবুকেরই এক বন্ধু জানান, চিকিৎসা আছে। সঠিক জায়গায় গেলে চিকিৎসা করানো যায়। একটু একটু করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অপূর্ব। তাইল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে অবশ্য তাঁর চোখেমুখে অনেক স্বপ্ন। আগে হুইল চেয়ারে ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। বাস্কেটবল, ভলিবলও খেলেছেন। কিন্তু এখন ড্রাগন বোটই তাঁর মূল খেলা।
হুইল চেয়ার ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেন (Paschim Medinipur)
ড্রাগন বোট খেলা এখনও ভারতে তেমন জনপ্রিয় না-হলেও দিন দিন তা বাড়ছে বলে দাবি করলেন অপূর্ব। তিনি জানালেন, সম্প্রতি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা হয় বিহারে। সেখানে বাংলার প্যারা দল চ্যাম্পিয়নও হয়। এবার ভারতীয় প্যারা দলে অপূর্ব-সহ রয়েছেন পাঁচ জন। তবে তিনিই একা হুইল চেয়ারে বসা প্রতিনিধি (Paschim Medinipur)। কলকাতায় এক বার একটি প্যারা ম্যারাথনে যোগ দিতে এসেছিলেন অপূর্ব। সেই সময়ে আলাপ হয় কলকাতার নিউরো রিহ্যাব চিকিৎসক সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পরে অপূর্বর প্রশিক্ষণ থেকে এই বিদেশযাত্রায় পাশে রয়েছেন সুপর্ণ। তিনি বলেন, ‘‘অপূর্ব খেলাধুলোর চেয়েও বড় যে কাজটি করে, তা হল হুইল চেয়ারে বসে হুইল চেয়ার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়। খুবই বড় একটা কাজ। ও শেখায়, হুইলচেয়ারে বসেও কী ভাবে ব্যালান্স রেখে খেলাধুলো করা যায়, কী ভাবে সব কাজ স্বনির্ভরতার সঙ্গে করা যায়।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours