মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পরনে জলপাই উর্দি। পাশে দাঁড়িয়ে ছোট বোন। দাদাকে নকলের চেষ্টা করছে। একজনের বয়স ৬, অন্যজনের ২। দাদা-বোন কারও বোঝার ক্ষমতা তেমন হয়নি। বাড়ির সামনে রাখা আছে তাদের বাবার দেহ! সবাই কাঁদছেন, কিন্তু দুই ছেলেমেয়ের চোখে কোনও জল নেই। তারা বুঝতেই পারছে না ‘বাবা নেই’! এত লোক দেখে কিছুটা ভয় চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল তাদের। তবে থিকথিকে ভিড়ের মধ্যে ঠিক বাবার দেহের কাছে গিয়ে টানটান 'স্যালুট' জানাল ৬ বছরের ছেলে। জন্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে (Anantnag Encounter) সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে গুলির তুমুল লড়াইয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের যে ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদেরই একজন কর্নেল মনপ্রীত সিং (Colonel Manpreet Singh)। শুক্রবার, পঞ্জাবের মোহালি জেলার মুল্লানপুরের গ্রামের বাড়িতে কর্নেল সিংয়ের দেহ এসে পৌঁছয়। ভিড়ে ভেঙে পড়ে এলাকা।
#WATCH | Son of Col. Manpreet Singh salutes before the mortal remains of his father who laid down his life in the service of the nation during an anti-terror operation in J&K's Anantnag on 13th September
— ANI (@ANI) September 15, 2023
The last rites of Col. Manpreet Singh will take place in Mullanpur… pic.twitter.com/LpPOJCggI2
‘শান্তিপূর্ণ’ জায়গায় পোস্টিং নেননি কর্নেল
জঙ্গি দমনে বিভিন্ন অভিযানে যেতেই পছন্দ করতেন কর্নেল সিং। তাই এককথায় ‘পিস পোস্টিং’-এর সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলেন। তাঁর একটাই কথা, সন্ত্রাসবাদীদের ধরে ধরে খতম করবেন। পদোন্নতি পেয়েও ‘শান্তিপূর্ণ’ জায়গায় পোস্টিং নিয়ে চলে যাননি কর্নেল সিং। ভারতীয় সেনার ১৯ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের কর্নেল ছিলেন মনপ্রীত। এই ব্যাটালিয়ন হিজবুল মুজাহিদিনের পোস্টার বয় বুরহান ওয়ানি সহ একাধিক হাই প্রোফাইল জঙ্গি নিধনের কান্ডারি। সেইসব অভিযানে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন বছর চল্লিশের কর্নেল সিং। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন সেনা মেডেলও।
আরও পড়ুন: এদেশেই গোপনে গড়ে উঠেছে আইসিস-এর প্রশিক্ষণ শিবির! ৩০টি জায়গায় হানা এনআইএ-র
ছেলেকে দেখে রাখার আর্জি
অনন্তনাগ এনকাউন্টারে জখম হয়েছিলেন ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট হুমায়ুন ভাট। এরপর তিনি নিজেই স্ত্রীকে ভিডিয়ো কল করেছিলেন বলে খবর। বলেন, "মনে হচ্ছে আর বাঁচব না। যদি আমি মারা যাই আমাদের ছেলেকে তুমি দেখ…। " এই শেষ কথা। তারপর সব শেষ। স্ত্রী ফতিমার সঙ্গে গত বছরই বিয়ে হয়েছিল হুমায়ুন ভাটের। মাত্র ২৯ দিন আগে তাঁদের পুত্র সন্তান হয়েছিল। স্ত্রী, সন্তানকে বাড়িতে রেখে তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন দেশ রক্ষায়। কর্তব্যের প্রতি অবিচল। গত ১০ সেপ্টেম্বর কোকেরনাগ এলাকায় একটি তল্লাশি অভিযান (Anantnag Encounter) চালানোর সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড ছুড়েছিল মনপ্রীত সিং ও তাঁর বাহিনীর জওয়ানদের উপর। সেই অভিযানে মৃত্যু হয় কর্নেল সিং ও তাঁর সঙ্গী মেজর আশিস ধনচাকেরও। পানিপথের বিনঝোল গ্রামের বাসিন্দা আশিসের দেহও এদিন এসে পৌঁছয় তাঁর বাড়িতে। হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের ভিড় জমেছিল মেজরের বাড়ির সামনে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours