মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পুরীর রথযাত্রার দড়ি যেত একসময় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কুলিনগ্রাম থেকে। রবিবার এই গ্রামের ৫০০ বছরের পুরনো রথযাত্রায় (Rath Yatra 2024) সামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার ভক্ত। পূর্ব বর্ধমানের এই রথ আজও টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেই ইতিহাসকেই। অন্যদিকে রবিবার রথযাত্রার দিন বারাসতে (Barasat) ধরা পরল এক অনন্য ছবি। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই টান দিলেন রথের দড়িতে। এমন নানা ঘটনা-ঐতিহ্য-ইতিহাস নিয়েই মহা সমারোহে বাংলাতে পালিত হল রথযাত্রা। পা মেলালেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত।
কুলিনগ্রামের রথযাত্রা (Rath Yatra 2024)
জানা যায়, ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর ছেলে লক্ষ্মীকান্ত বসুকে পুরীর জগন্নাথ দেবের রথ টানার জন্য বর্ধমানের কুলিনগ্রাম থেকে রথের দড়ি আনার নির্দেশ পান। লক্ষীকান্ত বসু রথ টানা দড়ি নিয়ে পুরীতে গিয়েছিলেন। তারপর থেকেই শুরু হয় জামালপুরের ঐতিহ্যমন্ডিত এই রথযাত্রা। মাঝখানে কখনও বন্ধ হয়নি। ৮ দিনের পরিবর্তে ৯ দিনের রথ হয় এখানে। এলাকার মানুষরা জানিয়েছেন, একটা সময় ছিল যখন নিয়মিত ভাবে পুরীতে কুলিনগ্রাম থেকেই রথের (Rath Yatra 2024) দড়ি যেত, তবে ধীরে ধীরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এলাকায় বসু পরিবারের সদস্যরা কাজের সূত্রে এখন আর গ্রামে থাকেন না। তাঁরা নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছেন। তবে গ্রামে রথযাত্রা হয় ধুমধাম করেই।
কী বলছেন উদ্যোক্তারা?
কাঠের তৈরি রথের উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ১৬ ফুট। ৬টি লোহার চাকা রয়েছে রয়েছে রথে। তিন তলা এই রথে রথের ওপরের তলায় থাকেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। গ্রামের মাঝেই গড়ে উঠেছে জগন্নাথ মন্দির। সেখান থেকে বিশেষ পুজো করা হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে থেকে দেবব্রত সিংহ বলেন, “চৈতন্যদেব যখন এসেছিলেন তখন থেকে এই রথ। সেই থেকে রথ চলে আসছে। ৫০০ বছরের বেশি সময় হয়ে গেল। পট্টডোর এক সময় পুরীতে যেত। তা বিলুপ্ত হয়। তবে আমরা আবার সেই প্রথা ফেরাতে চাইছি।”
বারাসাতে (Barasat) হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির নজির
রথের (Rath Yatra 2024) রশি গড়ে দিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির। এমনই চিত্র দেখা গেল বারাসতে। হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে টান দিলেন রথের রশিতে। ধর্ম যার যার উৎসব তো সবার, এই কথা আক্ষরিক অর্থে সত্যি হল বারাসতে। পশ্চিমবঙ্গের দূর্গা পুজোর সময় দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে অনেক জায়গাতেই উৎসবে মেতে ওঠেন। খবরের শিরোনামেও আসে সেই ঘটনাগুলি। এবার রথযাত্রাতেও সেই ছবি ধরা পরল। ঘুচে গেল দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভেদাভেদ। জগন্নাথ দেব হয়ে উঠলেন সবার প্রভু।
রথটি বানিয়েছেন এক মুসলিম
জানা গিয়েছে, বারাসতের এই রথটি যিনি তৈরি করেছেন তিনিও আদতে একজন মুসলমান। বারাসতের কাজীপাড়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাই আজ রাজ্য জুড়ে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবিবার রথযাত্রার সামিল হন দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ। ভারতের মধ্যে সবথেকে বড় রথযাত্রা হয় পুরীতে। ঘণ্টা-কাঁসর, জয় জগন্নাথ ধ্বনিতে শ্রী ক্ষেত্র ছিল একেবারে মুখরিত (Rath Yatra 2024)। এর পাশাপাশি রথ নিয়ে বের হয়েছিল ইসকনও। মাহেশের রথেও পা মেলান অসংখ্য ভক্ত। কিন্তু এরই মধ্যে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠল বারাসতের কাজীপাড়ার রথযাত্রা। উদ্যোক্তাদের কথায়, এই উৎসবে কোনও রাজনৈতিক রঙ নেই। বারাসত পুরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সকলের উপস্থিতি থাকে এইদিন।গত ৬ বছর ধরে এইভাবেই হয়ে আসছে সম্প্রীতির মেলবন্ধন রথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়ে।
শাসনেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবি
তবে শুধু বারাসতের কাজীপাড়াতে নয়, উত্তর ২৪ পরগনার শাসনেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। রাজনৈতিক হানাহানির খবরে প্রায় শিরোনামে আসে শাসন কিন্তু সেসবকে ছাপিয়ে রবিবার খবরের শিরোনামে এল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রথযাত্রা। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে শাসনের সর্দারহাটিতেও দেখা গেল বারাসতের কাজীপাড়ার মতো ছবি। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই রথের রশিতে টান দিয়ে সামিল হলেন উৎসবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours