মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা (Hasimara Airbase) থেকে প্রায় ২৯০ কিলোমিটার এবং সিকিম থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের শিগাৎসে বিমানবন্দরে নিজেদের অত্যাধুনিক জে-২০ যুদ্ধবিমান (J-20 Stealth Fighter Jet) মোতায়েন করেছে চিন (India China Border)।
উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ল কোন ছবি
‘অল সোর্স অ্যানালিসিস’ (All Source Analysis) নামক একটি সংস্থা সম্প্রতি নিজেদের এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডলে একটি উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে। ২৭ মে তোলা ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বিমানবন্দরে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক যুদ্ধবিমান। প্রকাশিত ছবিতে চিহ্নিত করে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বাঁদিকে একটু বড় আকারের ৬টি যুদ্ধবিমান সারি দিয়ে রয়েছে। তার পাশেই তুলনামূলকভাবে ছোট আকারে আরও ৮টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। ছবির ডানদিকে, একটি বড় আকারের সামরিক নজরদারি বিমানও দেখা গিয়েছে।
Analysis of imagery collected over Shigatse Air Base in China shows the deployment of six likely J-20 stealth fighter aircraft near the Indian border. https://t.co/epfzHD3Daa#GEOINT #China #Shigatse #J20 pic.twitter.com/hyijF3T1ao
— AllSource Analysis (@AllSourceA) May 29, 2024
কে এই ‘অল সোর্স অ্যানালিসিস’?
‘অল সোর্স অ্যানালিসিস’ জানিয়েছে, ছবিটি ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা (India China Border) চিন-পরিচালিত তিব্বতের শিগাৎসে বিমানবন্দরের। সংস্থার দাবি, প্রকাশিত ছবির বাঁদিকে রাখা ৬টি হল চিনা বায়ুসেনার (পিএলএএএফ) অত্যাধুনিক জে-২০ যুদ্ধবিমান (J-20 Stealth Fighter Jet)। পাশে রয়েছে ৮টি জে-১০ যুদ্ধবিমান। একেবারে ডানদিকে রয়েছে চিনা বায়ুসেনার কেজে-৫০০ অ্যাওয়াক্স নজরদারি বিমান। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ‘অল সোর্স অ্যানালিসিস’ হল একটি ভূ-মহাকাশীয় নজরদারি (Geo-spatial intelligence) সংস্থা। পৃথিবীর কক্ষপথে মোতায়েন কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি ব্যবহার করে ভূ-মহাকাশীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করাই এই সংস্থার কাজ। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই কাজ করে চলেছে। ফলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে, এই সংস্থার প্রকাশিত ছবি ও তথ্য সত্যি ও নির্ভরযোগ্য।
জে-২০ যুদ্ধবিমান মোতায়েন তাৎপর্যপূর্ণ
শিগাৎসে হল তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১২,৪০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি বিশ্বের উচ্চতম বিমানবন্দরগুলির মধ্যে একটি। একাধারে অসামরিক ও সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এই বিমানবন্দর (Shigatse Airbase)। সাধারণত, এই বিমানবন্দরে সারা বছর জে-১০ এবং কেজে-৫০০ মোতায়েন থাকে। এতে নতুনত্বের কিছু নেই। কিন্তু, এখন ৬টি ‘স্টেলথ’ (চিনের দাবি তেমনটাই) জে-২০ যুদ্ধবিমান (J-20 Stealth Fighter Jet) মোতায়েন হওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বটে। কারণ, সাধারণত চিন তাদের সবচেয়ে আধুনিক এই বিমানগুলিকে পূর্ব সীমান্তে, তথা পূর্ব চিন সাগরের দিকে মোতায়েন করে রাখে। সেখান থেকে ভারতের সীমান্ত (India China Border) ঘেঁষে তিব্বতে এই বিমানগুলিকে কেন চিন এখন মোতায়েন করেছে, সেই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে প্রশ্ন উঠছে।
রাফাল রয়েছে, তাই চিন্তিত নয় ভারত
এই নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্যে নারাজ ভারতীয় বায়ুসেনা। তবে, সূত্রের খবর, ভারত এই নিয়ে বেশি চিন্তিত নয়। কারণ, হাসিমারায় ডগ-ফাইটে পারদর্শী অত্যাধুনিক ১৮টি ফরাসি রাফাল যুদ্ধবিমানের একটি গোটা স্কোয়াড্রন মোতায়েন করে রেখেছে ভারত। ফলে, চিন কোনও কিছু হঠকারিতা করলে, তার সমুচিত জবাব দিতে তৈরি ভারত ও ভারতীয় বায়ুসেনা। ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনেছে ভারত। এর মধ্যে একটি স্কোয়াড্রন বিশিষ্ট ১৮টি যুদ্ধবিমান রয়েছে পাক-সীমান্ত লাগোয়া আম্বালা বায়ু-ঘাঁটিতে। বাকি ১৮টিকে নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় স্কোয়াড্রন রয়েছে হাসিমারা বেসে। তবে, বর্তমানে দুই বেস থেকে চারটি করে বিমান রয়েছে আলাস্কায়। সেখানে মার্কিন বায়ুসেনার সঙ্গে যৌথ মহড়া চলছে।
তিব্বতে বিপুল পরিকাঠামো তৈরি করছে চিন
এমন এই প্রথম নয় যে চিন তিব্বতে জে-২০ যুদ্ধবিমান (J-20 Stealth Fighter Jet) মোতায়েন করল। এর আগেও করেছিল, তবে সংখ্যায় কম। অল সোর্স অ্যানালিসিস-এর আরও দাবি, গত ৫ বছর ধরে ভারত-সীমান্ত (India China Border) লাগোয়া তিব্বতে প্রতিনিয়ত বায়ুসেনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে চিন। নতুন নতুন বায়ু ঘাঁটি নির্মাণ থেকে শুরু করে বর্তমান ঘাঁটিগুলির পরিকাঠামো বৃদ্ধি করছে বেজিং। পাশাপাশি, এই সব ঘাঁটিগুলিতে জে-২০ ফাইটার এবং এইচ-৬ বোমারু বিমান এখন মোতায়েন করা শুরু করেছে।
জে ২০-র জবাবে এস-৪০০ রয়েছে ভারতের
তবে, পিছিয়ে নেই ভারতও। ড্রাগনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চিন-সীমান্তে নিজেদের সামরিক পরিকাঠামো কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে ভারত। বিমান ঘাঁটিগুলিকে আরও মজবুত ও সুরক্ষিত করা হয়েছে। বিমান সুরক্ষিত রাখার জন্য শক্তিশালী শেল্টার নির্মাণ, ঘাঁটির নিরাপত্তায় চারদিকে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (Surface-To-Air Missile) মোতায়েন করা হয়েছে। চিন লাগোয়া পূর্ব সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় রুশ নির্মিত এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার এস-৪০০ মিসাইল মোতায়েন রয়েছে। এই মিসাইল যে কোনও স্টেলথ বিমানকে ট্র্যাক করে ধ্বংস করতে পারদর্শী। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (India China Border) চিন জে-২০ (J-20 Stealth Fighter Jet) নিয়ে আগ্রাসী হলেই ভারত সঙ্গে সঙ্গে এস-৪০০ (S-400) নিক্ষেপ করে জবাব দিতে প্রস্তুত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours