রামনগরী অযোধ্যা-সাত
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, অযোধ্যা থেকে ফিরে: ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে উৎসবের মেজাজে দেখছিলাম অযোধ্যাকে (Ram Mandir)। বাড়ির দেওয়াল থেকে দোকানের দরজা, সর্বত্র লেখা জয় শ্রীরাম। তরুণ প্রজন্ম স্মার্ট ফোনের গেম ভুলে মেতেছে রামের নামে। সকাল সন্ধ্যা কপালে তিলক এঁকে ঘুরছে তারা। কর্মযজ্ঞের অযোধ্যাকে পর্যবেক্ষণ করতে ভাড়া করলাম টোটো। গেলাম স্টেশন এবং এয়ারপোর্টে। সেখানেও তুঙ্গে ব্যস্ততা। রাম রাজ্যে রাম ফিরবেন। ব্যস্ততা তো স্বাভাবিক। নতুনভাবে সেজে উঠছে অযোধ্যা। মন্দির উদ্বোধন হলে ৩ লাখ ভক্তের পা পড়বে প্রতিদিন। বেশিরভাগ ভিড়ই সামাল দিতে হবে স্টেশন এবং বিমানবন্দরকে। তাই সাজো সাজো রব। স্টেশন দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটা রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম। দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন আস্ত একটা বিশ্বমানের বিমানবন্দর। আধিকারিকরা বললেন, প্রতিদিন ৬০ হাজার মানুষ গড়ে যাতায়াত করতে পারবেন অযোধ্যা স্টেশনের মাধ্যমে। বিমানবন্দরে গিয়ে দেখলাম সেখানেও একই চিত্র। আমরা যখন গিয়েছিলান তখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেননি। হোটেলে ফেরার পথে টোটো চালক বললেন, সামনেই বাবরি মসজিদের আইনজীবী থাকেন, যাবেন সেখানে? আমরা উত্তর দিলাম, অবশ্যই। রাস্তার ধারে টোটো দাঁড়াল। আঙুল দিয়ে টোটো চালক দেখিয়ে দিলেন ইকবাল আনসারির বাড়ি।
ইকবাল আনসারির বাড়িতে
রামপথের (Ram Mandir) ঠিক বাঁদিকে যেখানে রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, সেখানেই পড়ছে ইকবাল আনসারির বাড়ি। বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি গাড়ি মেরামতির দোকান। জানা গেল এগুলি তাঁরই (ইকবাল আনসারির)। বাড়ির অদূরে বর্জ্য পদার্থ ফেলার জায়গা। আমরা পৌঁছাতেই দেখলাম ইকবাল আনসারির বসার চেম্বারে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ভিড়। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মিডিয়ার গাড়ি। উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ইকবাল। বয়স প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই। শরীরে মেদ নেই বললেই চলে। মাঝারি উচ্চতার ইকবাল আনসারি স্বাগত জানালেন আমাদের। আলাপচারিতায় জানলেন, আমরা কোথা থেকে এসেছি। প্রসঙ্গত, ইকবাল আনসারির বাবা ছিলেন হাসিম আনসারি। যিনি বাবরি মসজিদের আইনজীবী ছিলেন প্রথম থেকেই। মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকার সময়ই মৃত্যু হয় হাসিম আনসারির। তার পর থেকেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ইকবাল। সাক্ষাৎকার শুরুর প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম ‘‘শরীর কেমন রয়েছে?’’ স্মিত হেসে উত্তর দিলেন, কোনও অসুবিধা নেই। এবার আসল প্রসঙ্গে ঢুকলাম। রাম মন্দির (Ram Mandir) তৈরি হচ্ছে কেমন লাগছে? ইকবাল আনসারি জবাব দিলেন, ‘‘রামের মন্দির তৈরি হওয়াতে অযোধ্যার মুসলিম সমাজের মতো আমিও খুশি। রাম আমাদের সকলের।"
সকল ধর্মের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন রামচন্দ্র
এরপরেই তিনি নিজের মোবাইল বের করে দেখাতে থাকলেন, হিন্দুধর্মের বিভিন্ন উৎসবে তাঁর সামিল হওয়ার চিত্র। তাঁর সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্ন করেছিলাম, উদ্বোধনের দিন আমন্ত্রণ পেলে যাবেন? জানালেন, নিশ্চিত যাব। (প্রসঙ্গত জানুয়ারির প্রথমেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা-কর্মীরা ইকবাল আনসারির বাড়ি গিয়ে দিয়ে এসেছেন আমন্ত্রণপত্র)। অযোধ্যার হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির কথাও শোনা গেল ষাট ছুঁইছুঁই ইকবালের মুখে। পরবর্তীকালে সংবাদমাধ্যমের সুবাদে জেনেছি, অযোধ্যার বিমান বন্দরের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপরে ফুলও ছোড়েন তিনি। এবার রাম মন্দিরের উদ্বোধনে সামিল হবেন ইকবাল। রামের ঘরে ফেরা সত্যই তাৎপর্যপূর্ণ। জাতি-ধর্ম-বর্ণের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে রাম মন্দির (Ram Mandir)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours