Post Poll Violence: ৪০ হাজার ঘরবাড়িতে লুটপাট, এক লক্ষ পরিবার ঘরছাড়া, হামলা চলেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়েও!

ভয় দেখিয়ে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ছিনতাই করেছিল তৃণমূলের স্থানীয় মাতব্বররা, অভিযোগ এমনটাই।
Post_Poll_Violence
Post_Poll_Violence

ঠিক দু-বছর আগের কথা। ২০২১ সালের ২ মে। কোভিড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজ্যে। কিন্তু তাতে কী। শাসক তৃণমূল তখন ফের 'মধুভাণ্ড' ফিরে পাওয়ার নেশায় বুঁদ। ভোটের ফলে যখন পরিষ্কার হয়ে গেল, তৃতীয়বারের জন্য মসনদের দখলদারি তাদের হাতেই থাকছে, তখনই যেন বেরিয়ে পড়ল নখ-দন্ত। বিরোধীদের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনটাই। তাদের অভিযোগ, বিজয়োল্লাসের নামে শুরু হয়ে গেল প্রতিপক্ষকে 'টাইট' দেওয়ার কাজ। তাদের স্মৃতিতে ভাসছে, চটুল গান, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অভব্য অঙ্গভঙ্গি, রাস্তার দোকানে ভাঙচুর এবং বিরোধী দলের কর্মীদের প্রতি হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড-কিছুই বাদ যায়নি। ভয়ঙ্কর সেইসব ঘটনা নিয়েই আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্ব।

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাজ্যজুড়ে নির্যাতনের চিত্রটা ছিল ভয়ঙ্কর। শুধুমাত্র ২ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত রাজ্যে রাজনৈতিক হত্যার সংখ্যা প্রায় ৪০। প্রায় ৩৫০০ গ্রাম প্রত্যক্ষভাবে হিংসার শিকার হয়, ৪০ হাজার ঘরবাড়ি প্রত্যক্ষভাবে লুটপাট হয় এবং ১ লাখ মানুষকে নিজের প্রার্থী নিজে নির্বাচন করে ভোট দেওয়ার জন্য ঘরছাড়া হতে হয়। কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন, তফশিলি জাতি-উপজাতি কমিশন, নারী সুরক্ষা কমিশন এবং শিশু সুরক্ষা কমিশন এই বিষয়ে বিস্তৃত তথ্য দিয়েছে। এই রাজনৈতিক হিংসার (Postpoll Violence) দায়ভার কার? বিরোধীরা বারবার এই প্রশ্ন তুললেও এখনও তার উত্তর মেলেনি।

পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদানের জন্য আক্রমণ!

২ মে রবিবার থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, নয়ানান, শেরখানচক, বয়ালে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর চলে। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, ইসলামপুর, বীরভূমের দুবরাজপুর, নানুরে শাসক-বিরোধীদের চিহ্নিত করে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং বাড়ির মা-বোনের সম্ভ্রমহরণ করার চেষ্টা হয়। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সেইসময় জোরালো অভিযোগ উঠেছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমডাঙা বিধানসভার সন্দেশখালি, ছোট শেয়ারা, বসিরহাট এবং হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভার পারঘুমটি, রূপমারি, মাধবকাটি, হাটগাছায় দোকানপাট ভাঙচুর হয়, লুটপাট ও বোমাবাজি চলে। উল্লেখ্য, বসিরহাটে মহকুমা শাসকের বাড়ির সামনেই একটি বাড়িতে লুটপাট (Postpoll Violence) হয়। বসিরহাটে প্রায় পাঁচশো বাড়িঘর, দোকানপাট লুটপাট করে দুষ্কৃতীরা। এছাড়াও মালঞ্চ, বামনপুকুর, কালীনগর এলাকায় প্রায় ত্রিশটির বেশি দোকান লুট করে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করে দুষ্কৃতীরা। হাড়োয়ার উচিলদহ গ্রাম এবং মিনাখাঁতে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি করে ঘরছাড়া করে তৃণমূলের গুন্ডারা, এমনটাই অভিযোগ রয়েছে। আবার ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকায় ভাঙচুর, লুটপাট এবং বুলডোজার চালিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়। প্রধান অভিযোগের তির ছিল শওকত মোল্লার দিকে।

পর্ব ১: গলায় সিসিটিভি-র তার পেঁচিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছিল অভিজিৎ সরকারকে!  

উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল থানার সামনে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় এক তরুণের। দেগঙ্গাতে প্রচুর মানুষ ঘরছাড়া হয় অত্যাচারে। বাড়িতে বাড়িতে ভয় দেখিয়ে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ছিনতাই করে তৃণমূলের স্থানীয় মাতব্বররা, অভিযোগ এমনটাই। এলাকার মানুষের আরও অভিযোগ, শাসকদলের নেতারা এই অপকর্মে পূর্ণ মদত দিয়েছেন। লক্ষ্যণীয় হল, পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক উৎসব নির্বাচনের পর এই সন্ত্রাস (Postpoll Violence) নিয়ে শাসকদল একটাও বিবৃতি দেয়নি। 

পর্ব ২: ৩-৪ মাসে খুন ৬২ জন, দুষ্কৃতীরা ছাড়েনি অন্তঃসত্ত্বাকেও!

হুগলির আরামবাগে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা একটি কাপড়ের দোকান ভাঙচুর করে কাপড় লুট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। গোঘাটে এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর দোকান দুষ্কৃতীরা জোর করে ভোট পরবর্তী সময়কালে বন্ধ করে রাখে। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে হাজার মানুষ ঘরছাড়া (Postpoll Violence) হয়ে পড়েছিল। দুর্গাপুরে প্রায় ১০০ পরিবার অত্যাচারে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। 

১৬ মে হাওড়ার জগাছায় ১ নম্বর মৌখালিতে চাঁদখান পাড়াতে সাধারণ ভোটারের উপর দুষ্কৃতী বাহিনী ব্যাপক হামলা (Postpoll Violence) চালায়। বেছে বেছে বিরোধীদের বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি করে। এমনকী তরোয়ালের আঘাতে আঙুল কাটা গেছে এক ব্যক্তির, এমন অভিযোগও দায়ের হয়েছে। বাড়ির সম্পত্তি লুটপাট হয়। 

এলাকা পরিদর্শনে এলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়ে হামলা

৫ মে শপথ গ্রহণের আগে সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন ‘এখন আইনশৃঙ্খলা তাদের (নির্বাচন কমিশন) সামলানো দরকার, এই দুটো দিন আমার হাতে কিছু নেই। যতক্ষণ না পর্যন্ত শপথ নিচ্ছি, ততক্ষুণ পর্যন্ত…’। ৬ মে মেদিনীপুর সদর পাঁচখুরিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন আক্রান্ত (Postpoll Violence) হন। এলাকায় পরিদর্শনে এলে তাঁর কনভয়ে হামলা চলে। হিংসার জেরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগতপ্রকাশ নাড্ডা সেই সময় বলেছিলেন, “বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর সারা পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা সংঘটিত হিংসা চরম সীমায় পৌঁছেছে… যেখানে ভারত সরকারের মন্ত্রীর উপর হামলা হয়ে চলেছে, সেখানে সাধারণ মানুষ কতটা সুরক্ষিত?" রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বলেছিলেন, ‘কোচবিহার থেকে সুন্দরবন সর্বত্র আতঙ্ক আর ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রদায়িক অশান্তি যারা ছড়াচ্ছে, তারা কারও পরোয়া করছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনও চেষ্টা করছে না রাজ্য পুলিশ। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আইনের পরিস্থিতি খুব খারাপ।’ অন্যদিকে, পরিস্থিতির যারা প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছিল, তারা ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও পায়নি বলে দুই বছর পরেও অভিযোগ উঠছে। (চলবে)

 

পর্ব ৪: ছেলে বিজেপি করে, এই 'অপরাধে'ই কি নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল মাকে!

পর্ব ৫: পলাশকে খাটের নিচ থেকে খুঁচিয়ে বের করে নৃশংসভাবে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা!

পর্ব ৬: এমএ পাশ অরূপকে অকালে চলে যেতে হয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপির বুথ এজেন্ট ছিলেন বলে?

পর্ব ৭: দরিদ্র চাষিকে রাজনৈতিক মত প্রকাশের মূল্য দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে!

পর্ব ৮: কমিশনের কোর্টে বল ঠেলে ভোট-পরবর্তী হিংসার দায় এড়িয়েছিলেন তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী!

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles