মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বৈশাখ মাসের শুক্লাপক্ষের তৃতীয়া তিথি অক্ষয় তৃতীয়া নামে প্রসিদ্ধ। ভক্তদের কাছে, এই দিনটির গুরুত্ব দীপাবলীর থেকে কোনও অংশে কম নয়। ব্যবসায়ীরা হালখাতা পুজো, লক্ষ্মী-গণেশের আরাধনা করেন এদিন। তাছাড়াও বাংলার ঘরে ঘরে বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে দিনটির। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পালিত হয় একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের। এদিন থেকেই জগন্নাথ মন্দিরে শুরু হয় চন্দনযাত্রা উৎসবের (Chandanyatra Utsav)।
কী এই চন্দনযাত্রা উৎসব (Chandanyatra Utsav)
প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন পুরীর জগন্নাথধামে চন্দনযাত্রা উৎসবের (Chandanyatra Utsav) সূচনা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনটিকেই এই রথ নির্মাণের কাজ শুরুর জন্য বেছে নেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ। এদিন থেকেই জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার জন্য তিনটি বড় মালা বয়ে আনেন তিনজন সেবায়েত। সব মিলিয়ে কার্যত উৎসবের মেজাজ ধরা পড়ে এদিন জগন্নাথদেবের মন্দিরে।
ইংরেজি মাস হিসেবে ধরলে জুলাই এবং বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আষাঢ় মাসে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা উৎসব। ওই দিন মন্দিরে তৈরি এই রথে চেপেই মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রা। অগণিত মানুষের ঢল নামে সেই দিন পুরীতে। রথের পবিত্র দড়ি একবার স্পর্শ করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে জগন্নাথ ভক্তরা ভিড় জমান পুরীতে। চন্দনযাত্রা উৎসব শেষে এই রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়। এই সময়টা অত্যন্ত ব্যস্ততার সঙ্গেই কাটে মন্দিরের সেবায়েতদের।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত অনুযায়ী চন্দনযাত্রার (Chandanyatra Utsav) ব্যাখা
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়, বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বলছেন, “আমার শরীরের তাপ জুড়োচ্ছে না। মলয় প্রদেশ থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর, তা হলে তাপ জুড়োবে।” তার পর বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরীপাদ পূর্বভারতে নীলাচলে জগন্নাথধাম পুরীতে এসে রাজার কাছে পূর্ব স্বপ্নগত সমস্ত কথা বললেন। রাজা গোপালের জন্য এক মণ মলয়জ চন্দন, ২০ তুলা কর্পূর এবং এই চন্দন বহে নিয়ে আসার জন্য দুইজন সেবকের ব্যবস্থা করেদিলেন। মাধবেন্দ্র পুরীপাদ রাজার কাছে মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন। পথে রেমুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে সেখানে শয়ন কালে স্বপ্ন দেখেন, গোপাল এসে বলছেন, “হে মাধবেন্দ্র পুরী, আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি। এখন কর্পূর সহ এই চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন। গোপীনাথের অঙ্গে চন্দন লাগালেই আমার অঙ্গ শীতল হবে।” সকালে শ্রীমাধবেন্দ্র পুরিপাদ পূজারীর নিকট রাত্রের স্বপ্নের সমস্ত কথা বলিলেন। পূজারী প্রভু শুনে খুব খুশি হলেন এবং কর্পূর আর চন্দন ঘষে শ্রীগোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। দীর্ঘ ২১ দিন ধরে এইভাবে প্রত্যহ পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। ভক্তদের মতে, সেইদিন থেকেই চন্দন যাত্রা শুরু হল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours