মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্বাধীন ভারতে এমন নজির দেখা যায়নি। তৃণমূল সরকারের জামানায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Kolkata Medical College), যেন ফিরে গেল ব্রিটিশ ভারতের সময়ে, অন্তত ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমনি বলছেন রাজ্যের বিশিষ্ট মানুষেরা।
স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ মত, ২২ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Kolkata Medical College) ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ সেই নির্দেশ বাতিল করে স্বাস্থ্য দফতর। আর এরপরেই গোলমাল শুরু হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ, অবস্থান বিক্ষোভ, মিছিল এমনকি ছাত্ররা অনশন শুরু করে। কয়েক সপ্তাহ পরে চিকিৎসক বিনায়ক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের মত সমাজকর্মীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পড়ুয়ারা অনশন তুলে নেন। কিন্তু তারা স্বঘোষিত ছাত্র নির্বাচনের কথা জানান।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Kolkata Medical College) সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ছাত্রদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন পড়ুয়ারা। নিজেরাই কর্তৃপক্ষকে নির্বাচনের দিন জানিয়ে ছাত্র ভোট পরিচালিত করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীন ভারতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে ফিরে এল সেই সময়।
আরও পড়ুন: রাজ্যকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়ার আর্জি সুকান্ত-শুভেন্দুর! আশ্বাস কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দীর্ঘদিন বন্ধ। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনে ও উন্নতিতে যে অর্থ ছাত্র সংসদের কাছে থাকার কথা, তার বরাদ্দও বন্ধ। ব-কলমে সব টাকা থাকছে তৃণমূলের নেতাদের কাছে। হস্টেলের ঘর কে পাবে, সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে শাসক দল। কলেজের অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে যথেচ্ছ অর্থের অপচয় হচ্ছে। কিন্তু তার হিসাব বোঝা যাচ্ছে না। কোনও কিছুতেই স্বচ্ছতা নেই। পড়ুয়াদের প্রতিনিধি না থাকায়, তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনও মতামত দিতে পারছেন না। এই রকম পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাইছেন পড়ুয়াদের একাংশ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের প্রতিনিধি কলেজের সমস্ত সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করুক, এটাই মত অধিকাংশ পড়ুয়ার।
আগামীকাল ছাত্রদের স্বঘোষিত নির্বাচন হওয়ার কথা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Kolkata Medical College)। বুধবার মনোনয়ন জমা দেওয়া ও প্রত্যাহারের শেষ দিন। সব কাজ চললেও কলেজের অধ্যক্ষ এবং সুপার হাসপাতালে যাচ্ছেন না। তারা স্বাস্থ্য ভবনে থেকেই যাবতীয় কাজ করছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছেন, ই-মেল মারফত তারা ছাত্র নির্বাচন প্রসঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। নির্বাচনের দিন, মনোনয়ন জমা, প্রত্যাহার সবটাই ই-মেল করে জানানো হয়েছে। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি তারা কিছু জানেন না। কোনও ই-মেল পাননি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, "স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ মতই সব কাজ হবে।" স্বাস্থ্য ভবন ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন বাতিল করেছে। ছাত্ররা স্বঘোষিত নির্বাচন করছে। সেই ছাত্র সংসদ আদৌও বৈধ হবে কি? কর্তৃপক্ষের থেকে যে অর্থ বরাদ্দ হয় ছাত্র সংসদের জন্য, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সংসদ সেই বরাদ্দ অর্থ পাবে?
এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর দিতেই চান না কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Kolkata Medical College) কর্তৃপক্ষ। তবে, ছাত্রদের কথায়, অধিকারের জন্য তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন। যদিও চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা, যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে মেডিক্যাল কলেজে সমস্যা আরও বাড়বে। এই সবকিছুর জন্য শেষ পর্যন্ত পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটবে কিনা, সে নিয়েও সংশয় রয়েছে।
+ There are no comments
Add yours