মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলির মধ্যে অন্যতম হল কোচবিহারের মদনমোহন রাসপূর্ণিমার মেলা। যাকে রাসমেলা (Rash Yatra 2023) বলা হয়ে থাকে। এই মেলা আনুমানিক ২০০ বছরের পুরনো। দেশ বিভাগের আগে পুর্ববঙ্গ থেকে প্রচুর মানুষ এই রাসমেলায় অংশগ্রহণ করতেন। এখনও দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এই রাসমেলা দেখতে এসে থাকেন। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো এবং কালীপুজোর পর রাসমেলার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। শান্তিপুর, নবদ্বীপ রাসের মতো এই রাসও বৈষ্ণবদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মন্দিরে পূজিত হন ছোট মদনমোহন। আজ ২৭ নভেম্বর থেকে এই মেলা শুরু হবে এবং প্রায় ২০ দিন চলবে। তারপর ভাঙা রাসের মেলা বেশ কিছুদিন চলে।
পূজিত হন ছোট মদনমোহন (Rash Yatra 2023)
কোচবিহারে রথের মেলার মতো রাসমেলাও খুব ঐতিহ্যবাহী। চারমাসের নিদ্রা ত্যাগ করে রাসমেলার (Rash Yatra 2023) সময় জেগে ওঠেন ছোট মদনমোহন। মদনমোহন ঠাকুরকে ১০৮ ঘটি জল, দুধ, ঘি, মাখন দিয়ে স্নান করানো হয়। জানা যায়, উল্টো রথের পর যখন বড় মদনমোহন মাসির বাড়িতে আসেন, সেই সময় ছোট মদনমোহন নিদ্রায় চলে যান। তারপর চারমাস পরে ঘুম ভাঙে এবং এই রাসের সময় জেগে ওঠেন। এরপর চলে পুজোর প্রস্তুতি। যে কোনও শুভ কাজের আগে মদনমোহনকে পুজো করা হয়। ছোট এবং বড় মদনমোহনকে মন্দিরে নিত্যপুজো প্রত্যকে দিন করা হয়। রাসের সময় ছোট মদনমোহন মন্দিরের বাইরে স্থাপনা করা হয় আর ছোট মদনমোহন মন্দিরে পূজিত হন।
কীভাবে এই রাসমেলার সূচনা?
কোচবিহারের মদনমোহন রাসমেলার (Rash Yatra 2023) ইতিহাস আনুমানিক ২০০ বছরের পুরাতন। ১৮৯০ সালে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমলে মদনমোহন মন্দিরের স্থাপনা করা হয়। এই মেলায় প্রচুর বৈষ্ণব ভক্ত এবং পর্যটকদের আগমন ঘটে থাকে। কোচবিহারের রাজাদের আরাধ্য দেবতা মদনমোহন। তিনি পরম বৈষ্ণব। এই মেলার প্রধান আকর্ষণীয় কেন্দ্র রাসচক্র। এই রাসচক্রে থাকে মানব কল্যাণ এবং সর্বধর্মের সমন্বয়। প্রতি বছর এই রাসচক্র নির্মাণ করে থাকেন এক স্থানীয় মুসলমান পরিবার। এই বছর তৈরি করছেন আলতাফ মিয়া। তবে রাসের চক্র নির্মাণ করতে গেলে বৈষ্ণব মতে নিরামিষ খেয়ে শুদ্ধ হতে হয়। রাসচক্রের মধে নানান দেবদেবী এবং বৌদ্ধ স্থাপত্যের কারুকার্য করা থাকে।
মেলায় নানা পসরা
কোচবিহারের রাসমেলায় (Rash Yatra 2023) নানান পসরার দোকান বসে। মাটির জিনিস থেকে শুরু করে বাঁশ, বেত, লোহা, ঘরের আসবাব ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়াও কাপড়, কাঠের জিনিস, নানান মিষ্টি, বেলুন, খেলনা ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়। প্রচুর খাবারের দোকান লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও বাংলাদেশেরও অনেক জিনিস মেলায় পাওয়া যায়। যেমন-জামদানি শাড়ি, ইলিশ মাছ, নলেন গুড় ইত্যাদি। কোচবিহারে এই বছর ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভূটান থেকেও প্রচুর ব্যবসায়ীরা যোগদান করবেন। এই মেলায় কয়েকশো কোটি টাকার বেচাকেনা হয় বলে ব্যবসায়ীরা মতামত দিয়েছেন। সরকার, প্রশাসন এবং পর্যটন দফতর থেকে মেলাকে ঢেলে সাজানো হয় প্রত্যেকবার।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours