মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাসায়নিক এবং কীটনাশকের ব্যবহার এখন সাধারণত সব জমিতেই হয়। এতে অনেক সমস্যা রয়েছে, একদিকে যেমন জমির ফলনশীলতা কমে যায়, অন্যদিকে আবার যে ফসল উৎপাদিত হয় সেগুলোও রাসায়নিক প্রভাব মুক্ত হয় না। যার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের উপর। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের দিকে ঘুরতে গেলে আমাদের নজরে পড়বে সেখানকার বাড়ির উঠানগুলোতে, প্রতিটি পরিবার নিজেদের প্রয়োজন মত শাক-সবজি চাষ করেন, যেগুলিতে কোনরকম রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার করা হয় না। বর্তমানে এই জৈব চাষ (Organic Farming) সম্পর্কে নানা রকমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় কৃষি মন্ত্রক ইতিমধ্যে চলতি বছরের ২৫শে অগাস্ট জৈব চাষের (Organic Farming) উপযোগিতা এবং কী কী উপায়ে এই চাষ করা যেতে পারে সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। মানে জৈব চাষের (Organic Farming) বিষয়ে সরকারও এখন কৃষকদের উৎসাহিত করছে।
কী এই জৈব চাষ (Organic Farming)
জৈব চাষ (Organic Farming) হল প্রাচীন ভারতীয় কৃষি পদ্ধতি। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের মাটিতে ঠিক এই পদ্ধতিতেই চাষ করা হতো। জৈব চাষের (Organic Farming) সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এখানে বাইরে থেকে কোন কিছু সংগ্রহ করতে হয় না আশেপাশে যা কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকে সেটা দিয়েই জৈব চাষ (Organic Farming) করা যেতে পারে। এতে কৃষকদের চাষের খরচ যেমন বেঁচে যায়, তেমনি জৈব চাষ (Organic Farming) যে জমিতে হয় সেই জমির উর্বরতা কখনও নষ্ট হয় না। যেমন ধরুন জৈব চাষ (Organic Farming) করতে জমির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য গোবর সার ব্যবহার করা হয়। ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলগুলিতে গোপালন এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তাই গোবর সার পেতে খুব বেশি সমস্যা হয় না এবং কৃষক নিজেই এই সার তৈরি করতে পারে। ভারতবর্ষের প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি যেহেতু এই জৈব চাষ (Organic Farming) তাই জৈব চাষে যে সার ব্যবহার করা হয় সেগুলোর নামকরণেও বৈদিক রীতির ছোঁয়া রয়েছে যেমন এই গোবর সারকে বলা হয় বীজামৃত (বীজ + অমৃত) বা জীবামৃত (জীব + অমৃত)। অর্থাৎ জৈব চাষ (Organic Farming) করতে প্রয়োজন বলতে একটি জমি, গোবর সার, বীজ এবং কর্ষণ করার জন্য লাঙ্গল অথবা ট্রাক্টর। বাইরে থেকে আমদানি করার কিছুই নেই এই চাষে। কৃষকের পক্ষে এই চাষ সাশ্রয়ীও বটে। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ কৃষকদের অভিযোগ থাকে যে চাষে তেমন লাভ করা যায় না অর্থাৎ যে পরিমাণ ইনভেস্ট করতে হয় চাষে সেই পরিমাণ মত লাভ হয় না এতে কৃষকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন কিন্তু এর বিকল্প জৈব চাষ (Organic Farming) হতে পারে। রাসায়নিক বা কীটনাশক মুক্ত চাষ যেমন এখানে সম্ভব, তেমনি এই চাষ লাভজনকও বটে কারণ এখানে ইনভেস্ট বলতে তেমন কিছুই নেই।
জৈব চাষ (Organic Farming) কেন প্রয়োজনীয়
এটা ঠিক কথা যে গ্রিন রেভুলেশন বা সবুজ বিপ্লবের পর থেকেই দেশের শস্য উৎপাদন বেড়েছে, আগের থেকে আরও বেশি পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারেন কৃষকরা। কিন্তু এর অপর একটি দিক হলো যে যথেচ্ছ ভাবে রাসায়নিক এবং কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে, জল দূষিত হচ্ছে এবং উৎপাদিত ফসলেও রাসায়নিক প্রভাব থেকে যাচ্ছে যার ফলে মানুষের শরীর খারাপ হচ্ছে। জৈব চাষকে (Organic Farming) তাই বলা যেতে পারে এটি প্রকৃতিবান্ধব চাষ। জমি দূষিত হয় না জল দূষিত হয় না উৎপাদিত ফসলও রাসায়নিক প্রভাব মুক্ত থাকে এবং খাদ্য হিসেবে মানুষ টাটকা সবজি গ্রহণ করতে পারেন জৈব চাষের (Organic Farming) মাধ্যমে। গবেষণাতে দেখা গেছে যে, জৈব চাষ (Organic Farming) হয় যে জমিতে সেই জমির জল ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় আবার জমিতে নিউট্রিশন সাইকেলও চলতে থাকে। জৈব চাষের (Organic Farming) জমিতে কীটপতঙ্গের উৎপাত হয় না বললেই চলে। এ বিষয়ে কৃষক চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা
খরচ সাশ্রয়ী এবং কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় জৈব চাষের (Organic Farming) বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও প্রকৃতিবান্ধব এই চাষ করতে কৃষকদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্কিম চালু করেছে, যার মধ্যে একটি হলো "ভারতীয় প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতি", ইতিমধ্যে এই স্কিমের অন্যতম প্রজেক্ট হিসেবে ৪.০৯ লক্ষ হেক্টর জমি, দেশের ৮ টি রাজ্যে বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষি মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে জৈব চাষ (Organic Farming) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিশন এবং এটি যাতে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে সারা দেশে সে বিষয়ে সচেষ্ট কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষি মন্ত্রকের এই প্রজেক্টের নাম "ন্যাশনাল মিশন অন ন্যাচারাল ফার্মিং"। কৃষি মন্ত্রক তাদের গাইডলাইনে এই জৈব চাষের (Organic Farming) উদ্দেশ্য গুলিও বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছে।
সেগুলি হল,
১) দেশে খরচ সাশ্রয়ী, কীটনাশক মুক্ত, প্রকৃতিবান্ধব এবং কৃষকদের লাভজনক চাষ।
২) দেশি গরু এবং স্থানীয় সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার।
৩) দেশের প্রতিটি প্রান্তে জৈব চাষের (Organic Farming) বিপ্লব আনা।
৪) জৈব চাষ (Organic Farming) থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল কে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করা।
চলবে........
+ There are no comments
Add yours