Lord Kartikeya: দেবাদিদেব মহাদেব কেন দেব সেনাপতির পদটি ছেড়ে দিয়েছিলেন কার্তিককে?

কার্তিক কি চিরকুমার? কেন তিনি দেব সেনাপতি? লিখছেন রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী অলোকেশানন্দ
Lord_Kartikeya_(1)
Lord_Kartikeya_(1)

স্বামী অলোকেশানন্দ

আমি কিছুদিন তামিলনাড়ুতে ছিলাম। এখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোক থাকলেও মুরুগন্‌ অর্থাৎ কার্তিকের (Lord Kartikeya) পুজোর খুব প্রচলন আছে। কার্তিক সম্বন্ধে এখানকার মানুষের কাছ থেকে যা জেনেছি, তা সকলকে জানানোর জন্যই আমার এই ছোট একটি লেখা।

পৌরানিক কাহিনী, কবি কালিদাসের কাব্য এবং এখানকার জনশ্রুতি অনুযায়ী কার্তিকের জন্ম কৃত্তিকা নক্ষত্র তিথিতে। ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে তারকাসুর যখন স্বর্গের দেবতাদের খুব অত্যাচার করতে লাগল, তখন দেবতারা শিবের কাছে একটি পুত্রের জন্য প্রার্থনা করতে লাগলেন। কারণ তারকাসুর বধের জন্য শিবপুত্রের প্রয়োজন, তাও আবার তার বয়স হতে হবে সাতদিন। তারকাসুর সাধনা করে এইরূপ বর পেয়েছিলেন ব্রহ্মার কাছ থেকে।

সংক্ষেপে কার্তিকের (Lord Kartikeya) জন্ম

শিব ও পার্বতী সেই সময় গভীর তপস্যায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। দেবতারা শিবের ধ্যান ভাঙানোর জন্য রতি ও মদনদেবকে পাঠালেন। কিন্তু এদের কামনাময় নৃত্যে ধ্যান ভাঙল না। তখন কামদেব শিবের উপর কামবান ছুড়ে দিলেন। তাতে শিবের ধ্যান ভেঙে গেল। কিন্তু ক্রোধে তাঁর ত্রিনয়ন থেকে অগ্নি বেরিয়ে মদনদেবকে ভস্ম করে দিলেন। অন্যদিকে, কামের প্রভাবে পার্বতীর সঙ্গে মিলনে জন্ম হল কার্তিকের। জন্ম হয় শরবনে। তাই কার্তিকের আরেক নাম সারস্বত। ঘটনাচক্রে শিশু কার্তিক এসে পড়ে শরবনের সরোবরে। সেখানে তখন ছয়জন কৃত্তিকা স্নান করছিলেন। তাঁরা শিশুটিকে কোলে নিয়ে দেখেন, তাঁর ছয়টি মাথা। ক্ষুধার্থ শিশুটিকে ছয় কৃত্তিকা মিলে দুগ্ধ পান করালেন। ছয় মুখে ছয়জনের দুগ্ধ পান করেছেন, তাই নাম ষড়ানন।  তাঁরাই লালন-পালন করাতে তাঁর নাম হয়ে গেল কার্তিকেয় বা কার্তিক (Lord Kartikeya)।

কীভাবে শুরু গৃহস্থের বাড়িতে পুজো (Lord Kartikeya)?

এই কৃত্তিকারা ছিলেন ঋষি পত্নী। সেই ঋষিরা কার্তিককে মেনে নিতে পারেনি, এমনকি ভেবেছেন যে ওই ঋষি পত্নীদের অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক থেকেই কার্তিকের জন্ম। তাই তাঁদের তাড়িয়ে দেন। কার্তিক তাঁদের মায়ের সন্মান দিয়ে রেখে দেন। পরে তাঁদের সহায়তায় গৃহস্থ লোকেরা কার্তিকের পুজো শুরু করেন সন্তানের মঙ্গলের জন্য। এমনকি ওই ঋষি পত্নীরা এমন  প্রচার করেছেন, যার সন্তান নেই অর্থাৎ অপুত্রক সে যদি কার্তিকের পুজো করে, তা হলে সেই বিঘ্ন নাশ হবে। আরও প্রচার হল, যদি কার্তিকের পুজো না করে, তাহলে অপদেবতা গৃহস্থের ঘরে প্রবেশ করে অমঙ্গল ঘটাবে। সেই থেকেই গৃহস্থের বাড়িতে কার্তিকের (Lord Kartikeya) মূর্তি রেখে দিলেই পুজো করতে হয়, না হলে অমঙ্গল হবে। তাই সেই মূর্তি পুজো করে বিসর্জন দেবার রীতি।

দক্ষিণ ভারতে কার্তিক (Lord Kartikeya) পুজোর প্রচলন ভালোই

মহাভারতে তাঁকে স্কন্দ নামেও পাওয়া যায়। বাংলায় কার্তিক পুজো খুব বেশি না হলেও দক্ষিণ ভারতে কার্তিক পুজোর প্রচলন আছে ভালোই। তামিল ভাষায় কার্তিক এখানে মুরুগান্‌, মালয়ালম ভাষায় মায়ুরী কন্‌দস্বামী। আবার কন্নড় ও তেলেগুতে তিনি সুব্রহ্মণ্য নামে পরিচিত। তামিল দেশের সকল লোক খুব ভক্তি করেন এবং তাঁরা বিশ্বাস করেন, তামিল দেশের রক্ষাকর্তা তিনি। যেখানে যেখানে তামিল সম্প্রদায়ের লোকের আধিক্য, সেখান সেখানে মুরুগান্‌ অর্থাৎ কার্তিকের (Lord Kartikeya) পুজোর প্রচলন আজও আছে। যেমন দক্ষিণ ভারত ছাড়াও সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কাতে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ শ্রদ্ধা ও খুব ভক্তি করেন। তার জন্য শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ অংশে কার্তিকের উদ্দেশে কথারাগাম উৎসর্‌গিত করেছেন। সিঙ্ঘলি ভাষায় কথারাগম-এর অর্থ দেবালয়।

কার্তিক (Lord Kartikeya) কি চিরকুমার?

অনেকের ধারণা কার্তিক চিরকুমার। বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনি ও তামিল রাজ্যে জনশ্রুতি–কার্তিকের দুটি বিয়ে। শিব ও পার্বতীর তপস্যা ও সংযম থেকে কার্তিকের জন্ম। জন্মের ছয় দিনের দিন কার্তিকের বিয়ে হয় দেবসেনার সঙ্গে। কেউ বলেন, তিনি ব্রহ্মার কন্যা আবার কেউ বলেন, ইন্দ্রর কন্যা। কেউ কেউ বলেন, দেবসেনাকে বিয়ে করে নাম হয় দেব সেনাপতি। আবার অনেকে বলেন তার জন্মের ছয়দিনের মধ্যে বড় হয়ে যাওয়া, তারকাসুর বধ, দেবতাদের যে কোনও যুদ্ধে কার্তিকের (Lord Kartikeya) বীরত্ব প্রকাশ-এই সব কারণে শিব দেবসেনার পদটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই তিনি দেব সেনাপতি।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles