তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
প্রতি মিনিটে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বয়স কিংবা নারী নাকি পুরুষ, কোনও বিশেষ পরিচয় নয়। যে কেউ এই বিপদের শিকার হতে পারেন। বাঁচার একমাত্র উপায় খাদ্যাভ্যাস! ভারতে ডায়াবেটিস (Diabetes) আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ২০ বছরের পর থেকেই ডাযাবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। শিশুদের মধ্যেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তবে, ইংল্যান্ডের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য। শুধুমাত্র খাবার নিয়ন্ত্রণ করেই ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। রাশ টানা যেতে পারে এই ক্রনিক সমস্যার।
কী বলছে সমীক্ষা?
আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের অনুমান ছিল, ৭ কোটির বেশি ভারতীয় ডাাবেটিসে (Diabetes) আক্রান্ত। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-র রিপোর্ট জানাল, পরিস্থিতি তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ। ১০ কোটি ভারতীয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মানুষ প্রি-ডায়াবেটিক। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে তাঁরা ডায়বেটিসে আক্রান্ত হবেন। আর এই রিপোর্ট যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
উদ্বেগের কারণ কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস (Diabetes) জীবন যাপনের মান কমায়। অর্থাৎ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে, অন্য যে কোনও রোগের ঝুঁকি বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে। আর ডায়াবেটিস আক্রান্তের হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা, চোখ সহ একাধিক অঙ্গের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশপাশি গর্ভবতীর ডায়াবেটিস থাকলে, তা গর্ভস্থ শিশুর জন্য নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। ভারতে যে বিপুল হারে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে, তাতে পরবর্তী প্রজন্ম কতখানি সুস্থ জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
নতুন গবেষণা মুক্তির কী পথ (Diabetes) দেখাচ্ছে?
ডায়াবেটিস নিয়ে সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উঠে এসেছে স্বস্তির বার্তা। ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খাদ্যাভ্যাসে রাশ টানলে ডায়াবেটিসের (Diabetes) ঝুঁকি কমে। ২০ থেকে ৬০ বছরের নানা বয়সের ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও প্রি-ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়ে একদল ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ গবেষণা চালান। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র খাবারে রাশ টানলে এক বছরের মধ্যে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। কোনও ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে না। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারকেই মূল হাতিয়ার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, নানা রকমের খাবার মেনুতে থাকুক। ডায়াবেটিস আক্রান্তকে কখনোই এক রকমের খাবার যেমন, ভাত, রুটি বা ন্যুডলস বেশি পরিমাণে দিয়ে পেট ভরানো যাবে না। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন সব রকমের খাবার অল্প অল্প পরিমাণে দিয়ে খাবার তৈরি করতে হবে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে পর্যাপ্ত সব্জি, চিকেন কিংবা ডিম, তার সঙ্গে রাখতে হবে খেজুর, কিসমিসের মতো ড্রাই ফ্রুটস। তাহলে কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে খনিজ পদার্থ, প্রোটিন, ফাইবার আবার ভিটামিন পাওয়া যাবে। আবার জলখাবারে পাউরুটি বা মুড়ি খেলেও সঙ্গে থাকুক কলা, বেদানা, আপেল, পেয়ারার মতো ফল। তাঁরা জানাচ্ছেন, নানা রকমের ফল যেমন, আপেল, কলা, স্ট্রবেরি, নাশপাতি এক সঙ্গে টুকরো করে কেটে টক দই মিশিয়ে খেলে খুব উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত দুধ, টক দই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। নিজের ওজন বুঝে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফাইবার, ফ্যাট জাতীয় খাবার মেনুতে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে, মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন, কেক, রসগোল্লা, পেস্ট্রি একেবারেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল। তবে, সবচেয়ে জরুরি সময় মতো খাবার খাওয়া। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই রোগীর খাবারের মাঝে দীর্ঘ ব্যবধান থাকে। সেটা চলবে না। নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
+ There are no comments
Add yours