মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: একটা সময় তালপাতার হাতপাখার সঙ্গে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য (Bengal Tradition) নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল। তারপর বিদ্যুৎ সংযোগের প্রসার ঘটল। ক্রমশ কমতে থাকল হাতপাখার ব্যবহার। যদিও কিছুদিন আগেও বিদ্যুৎ হঠাৎ চলে গেলে বাড়ির সকলের হাতে উঠে আসত এই তালপাতার হাতপাখাই। এখন সেটাও কমে এসেছে। তবু বিভিন্ন মেলায় এই হাতপাখার পসরা সাজিয়ে বসেন গুটিকয়েক মানুষ। তেমনই একজন চকভৃগুর প্রবীণ নাগরিক প্রভাসবাবু। আধুনিক যুগের আড়ালে তিনি একান্তে তৈরি করে চলেছেন একের পর এক তালপাতার হাতপাখা।
রাজ-রাজাদের আমলে বিপুল প্রসার
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হাতে তৈরি এই পাখার প্রচলন তেমন না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে কারিগররাও। রাজ-রাজাদের আমলে বিপুল প্রসার ঘটে এই তালপাতার হাতপাখার। তারপর ব্রিটিশরাজ থেকে শুরু করে জমিদারি ব্যবস্থাতেও বড় বড় তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে ছিল। কারিগরি শিল্পের দৌরাত্ম্যে প্লাস্টিকের হাতপাখার জনপ্রিয়তা বিস্তার লাভ করে। তাই শহুরে মানসিকতার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এই শিল্প (Bengal Tradition)। তবে তা ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন প্রবীণ কারিগর প্রভাস মোহন্ত। গত ৪০ বছর ধরে তিনি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কয়েক দশক আগের মতোই এখনও তাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজে সাহায্য করে চলেন তাঁর স্ত্রী।
নতুন প্রজন্মের কারিগর আর নেই
বালুরঘাটের শিক্ষক তথা সাহিত্যিক গগণ ঘোষ বলেন, 'এক সময় তালপাতার হাতপাখা ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যের (Bengal Tradition) প্রতীক। বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ারকন্ডিশন সহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক জিনিস বাজারে ছেয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমেছে তালপাতার হাতপাখার। ফলে বিক্রি না হওয়ায় কারিগররা হাতপাখা বানানো বন্ধ করে অন্য কাজে মন দিয়েছেন। গ্রাম থেকেও উঠে গিয়েছে সারি সারি সব তালগাছ। বিশ্বায়নের প্রভাবে এই শিল্পের অবক্ষয় দুঃখের। চকভৃগুর বাসিন্দা তরুণ মাহাত বলেন, 'বর্তমানে হাতপাখার ব্যবহার না থাকায় পেশাদার কারিগররা তা বানানো বন্ধ করেছেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে অন্য কাজে মনঃসংযোগ করেছেন তাঁরা। ফলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পীসত্তা। এই হাতপাখা তৈরির জন্য নতুন প্রজন্মের কারিগর আর নেই।
কী বললেন শিল্পী?
শিল্পী প্রভাস মোহন্ত বলেন, 'গাছে উঠে তালপাতা, গাছের পাতলা বাকল সহ বিভিন্নরকম সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে পড়তে হয়। এমনকী বাজারদরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাতপাখার সরঞ্জামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০টা হাতপাখা তৈরি করি। গ্রামের কিছু মানুষ এখনও তা কেনেন। কিন্তু সেই জায়গাও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। সরকারি তরফে কোনও সাহায্য বা ভাতা পেলে এই শিল্পের ঐতিহ্যকে (Bengal Tradition) বাঁচিয়ে রাখতে পারব।'
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours