তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
খাদ্যরসিক বাঙালির স্থূলতা বাড়ছে। মেদ (Obesity) জমছে শরীরে। ভুঁড়ির ভারে দৌড়নো কিংবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামায় সমস্যা হচ্ছে। এমনকী শরীরের ভার নিতে পারছে না হাঁটু! তাই হাঁটুর যন্ত্রণা, পায়ের পেশির নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বেড়েছে স্থূলতার সমস্যা। সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।
কী বলছে সমীক্ষার রিপোর্ট?
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে দেশজুড়ে স্থূলতার (Obesity) সমস্যা বেড়েছে। যে কয়েকটি রাজ্যে স্থূলতার সমস্যা অতিরিক্ত দেখা দিচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষত স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা মারাত্মক বাড়ছে। প্রাক প্রাথমিক স্কুল থেকেই যে সব শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন দেখা দিচ্ছে, পরবর্তীতে তারা মারাত্মকভাবে স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। শহুরে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা বেশি। এ রাজ্যের ৩০.৪ শতাংশ শহুরে বাসিন্দা স্থূলতার সমস্যায় জর্জরিত। বাদ নেই গ্রামীণ এলাকা। ওই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২২.৪ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ এ রাজ্যে স্থূলতার সমস্যায় ভোগেন। আর এই ভুক্তভোগীদের একটা বড় অংশ স্কুলপড়ুয়া। অর্থাৎ, বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ছেলেমেয়েদের মধ্যেই স্থূলতার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
স্থূলতা কি কেবল মোটা হওয়া? বিএমআই কী?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র শরীরের গঠন মোটা হলেই তাকে স্থূলতার (Obesity) সমস্যার শিকার বলা যায় না। বিএমআই হিসাব কষে জানা যায় স্থূলতায় আক্রান্ত কিনা! বিএমআই-এর পুরো নাম বডি মাস ইনডেক্স। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যে কোনও মানুষের ওজন কিলোগ্রাম এককে নিয়ে তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির উচ্চতার দ্বিগুণ ভাগ করলে তার শরীরের বিএমআই জানা যায়। প্রত্যেক মানুষের উচ্চতা আলাদা হয়। তার নিরিখে বোঝা যায়, সেই উচ্চতায় কতখানি ওজন শরীরের জন্য ঠিক! তাই এই বিএমআই হিসাব কষে তবেই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন সেই ব্যক্তি স্থূলতার শিকার কিনা।
স্থূলতার সমস্যা কোন কোন ঝুঁকি বাড়াতে পারে?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, স্থূলতা (Obesity) ডেকে আনতে পারে নানান শারীরিক জটিলতা। যেমন, স্থূলতার জেরে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ হৃদপিণ্ডের রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে। হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন করে, এমন শিরাগুলোতে চর্বি জমে। ফলে, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্থূলতার সমস্যা হলে কাজের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। ফলে, অনেক সময়েই পেশির কার্যশক্তি কমতে থাকে। শরীরে অতিরিক্ত মেদ বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে বলে জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল। ডায়বেটিস, কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় স্থূলতা।
কীভাবে স্থূলতার মোকাবিলা করবেন?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জীবনযাপনের বদলেই পাওয়া যাবে মেদহীন সুস্থ জীবন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, স্থূলতার (Obesity) সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, প্রথমেই নজর দিতে হবে খাদ্যাভ্যাসে। কী খাচ্ছি, কতটা পরিমাণ খাচ্ছি আর কেন খাচ্ছি, এই তিন প্রশ্নকে মাথায় রেখেই নিজের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাদের পরামর্শ, অতিরিক্ত তেলমশলা যুক্ত খাবার একেবারেই নয়। বাদ দিতে হবে প্রিজারভেটিভ খাবার। বিরিয়ানি, পিৎজা কিংবা হটডগ, এই ধরণের ফাস্টফুডের অভ্যাস ডেকে আনছে বিপদ। দিনে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। তবে, নরম পানীয় কিংবা কৃত্রিম স্বাদযুক্ত বিভিন্ন পানীয় একেবারেই খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। ভাত কিংবা রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কারণ, তাতেই শরীর এনার্জি পাবে। কিন্তু পরিমাণে সংযত হতে হবে। ভাত কিংবা রুটি নূন্যতম পরিমাণে খেয়ে শশা, ডাল, সব্জি খেতে হবে।
তবে, খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত যোগ্যাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আধুনিক ব্যস্ত জীবনে অনেকেই যোগ্যাভাসে অভ্যস্থ নন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রতি দিন নিয়ম করে যোগাভ্যাস করতে হবে। শারীরিক কসরত করলে মেদ কমবে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস অত্যন্ত জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাদের পরামর্শ, প্রতি দিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। তবেই শরীর ও মন সচল থাকবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours