ড. জিষ্ণু বসু
আমি একজন বাঙালি হিন্দু। আমার জীবনে আমি কখনও কোনও ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের কোনও ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু বলিনি। আমার স্বর্গতঃ পিতৃদেব রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত ও একান্ত অনুগামী ছিলেন। আমি আশৈশব অন্য ধর্মের শ্রদ্ধেয় প্রাতঃস্মরণীয়দের সম্মান করতেই শিখেছি। আমার ঠাকুরদাদা মশাইও কখনও কোনও ধর্মের বিশ্বাসে আঘাত করেছেন বলে শুনিনি।
সূত্রাপুরের লক্ষীনারায়ণ জীউ মন্দিরের উল্টোদিকে আমাদের ঢাকার বাসাটা ১৯৫১ সালে নেহরু লিয়াকত চুক্তি হওয়ার পরেও ছিল। চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল পাকিস্তানে হিন্দু আর ভারতের মুসলমান শান্তিতে, সসম্মানে থাকতে পারবে। ১৯৫১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ২৪ শতাংশ, ২০১১ সালে তা কমে হয়েছে ৮ শতাংশ। গত দশ বছরে সংখ্যাটা আরও কমেছে। দুপারের বঙ্গভুমিতে হিন্দু বাঙালির মোট জনসংখ্যা ১৯৪১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ১৭ শতাংশ কমে গিয়েছে।
যাঁরা খুন হননি বা ধর্মান্তরিত হননি তাঁরা পালিয়ে এসেছেন। এখনও আসছেন। এই পালিয়ে আসা মানুষের মধ্যে খুব কম, হাতেগোনা হিন্দু হয়ত দারিদ্রের কারণে এখানে এসেছেন। কিন্তু বাকি কেউই এখানে ২ টাকা কেজি চাল খাওয়ার জন্য আসেননি। একান্ত প্রান বাঁচাতে, বাড়ির মেয়েদের ইজ্জত বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন বা কান্ধামাল, দন্ডকারণ্যে গেছেন।
গত বছর থেকে আমরা 'খেলা হবে' স্লোগানটা খুব শুনছি। কিন্তু এই খেলা আমরা বিগত সত্তর আশি বছর থেকে দেখছি। এই খেলায় সবথেকে বড় ভুমিকা ছিল শাসকদের। যিনি রক্ষক তিনিই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
১৯৬৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর, কাশ্মীরের হজরতবাল মসজিদের থেকে উধাও হয়ে গেল পবিত্র কেশরাজি। এই ঘটনায় পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দিলেন ইসলামিক বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আব্দুল হাই। পাকিস্তানের তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি আয়ুব খাঁ ঢাকা বিমানবন্দর ছাড়ার সময় বলে গেলেন, "সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আঘাত এলে তার দায়িত্ব সরকারের নয়!"
১৯৬৪ সালে ভয়াবহ দাঙ্গায় পূর্ববঙ্গের কয়েক হাজার হিন্দু বাঙালির প্রাণ যায়। এই গণহত্যার সঙ্গে, অগনিত হিন্দু মহিলা ধর্ষিতা হন, গ্রাম থেকে শহরে লুঠ আর মহিলা অপহরণ চলে, কয়েকশ মন্দির ভাঙা হয়। ঢাকার টিকাটুলির রামকৃষ্ণ মিশনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরেই মসজিদে কেশরাজি ফিরে এল, অপরাধীও ধরা পড়ল। কিন্তু খেলার একটি অধ্যায়ে সর্বশ্রান্ত হয়ে গেলেন, উদ্বাস্তু হলেন লক্ষাধিক বাঙালি হিন্দু।
২০২২ সালের কলকাতা। নূপুর শর্মার বক্তব্যের বিরুদ্ধে এরাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার যিনি সর্বাধিকারী, তিনি ৯ জুন তারিখে ট্যুইট করলেন, ''আমি জোরালোভাবে দাবি করছি, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য ও ঐক্য রক্ষার স্বার্থে এবং সর্বসাধারণের মানসিক শান্তির প্রয়োজনে বিজেপির অভিযুক্ত নেতা-নেত্রীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।''
১০ জুন সকাল থেকে হাওড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা শুরু হয়। যে সব স্থানে বাঙালি হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানে গ্রামের পর গ্রাম পুড়তে থাকে। ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাতে থাকে। পাঁচলার মতো বহু জায়গায় পুলিশের সামনেই দোকান লুঠ হয়। হিন্দুদের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারপর একসময় পুলিশের দুটি গাড়িও পোড়ানো হয়।
৬ নম্বর জাতীয় সড়ক প্রায় ১১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে। নাশকতা পরপর কয়েকদিন চলতে থাকে। এরাজ্যে হিন্দু দেবদেবী নিয়ে আপত্তিকর কিছু বললে, 'সর্বসাধারণের মানসিক শান্তির' কিছু তারতম্য হয় না। কাশীতে বীরেশ্বর শিবের বরে মা ভুবনেশ্বরী দেবী স্বামী বিবেকানন্দকে পেয়েছিলেন। তাই ছোট্ট বিলে দুষ্টুমি করলে মা তাঁর মাথায়, "শিব, শিব" বলে জল ঢেলে শান্ত করতেন।
হিন্দু বাঙালির জীবনের প্রতিটি অংশ জুড়ে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। ভগবান শিবের নামে কেউ অসম্মানজনক কথা বললে তাকে এই রাজ্যের রাজনৈতিক শক্তি পুরষ্কৃত করে। সম্প্রতি শিব ঠাকুরের নামে অশ্রাব্য কথা বলার প্রতিবাদে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা হয় এমাসের ১৩ তারিখে। অভিযোগকারী ৪১ বছরের ছেলেটির জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পুলিশ তো অভিযোগ গ্রহণ করে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেইনি, বরং ছেলেটিকে বারবার পার্টি অফিসে নিয়ে শাসানি চলছে নিয়মিত, গত ১৮ জুন তারিখে ছেলেটিকে লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। কেন? পশ্চিমবঙ্গ তো বেঙ্গলি হিন্দু হোমল্যান্ড। এখানে কোনও হিন্দুর আরাধ্য দেবতাকে নিয়ে কদর্য কথা বললে পুলিশ কেন এফআইআর গ্রহণ করবে না? কেন অভিযোগকারীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা হবে না? গত ১১ বছর ধরে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার করা একটা বার্ষিক উৎসব হয়ে উঠেছে। কোনও না কোনও একটা অছিলা চাই।
২০১৪ সালের খাগড়াগড়ের ঘটনার পরে সিমুলিয়ার মতো মাদ্রাসার ছবি খবরে উঠে এল। হিন্দুদের নিকেষ করার জন্য কী ভীষণ প্রস্তুতি চলছে। এরাজ্যের সরকার প্রথমে ঘটনাটা ঢাকতেই চেয়েছিল। ২০১৫ সালে জামালপুরের তফশিলি সম্পদায়ের হিন্দুদের উৎসব ধর্মরাজের মেলা ছিল ছুতো। নদিয়া জেলার জুড়ানপুরে সেই বাহানায় খুন করা হল মারু হাজরাদের মত ৫ জন তফশিলি সম্প্রদায়ের গরিব অসহায় হিন্দুকে।
২০১৬ সালের বাহানা ছিল, কমলেশ তিওয়ারির ফাঁসির দাবি। সেই অপরাধে মালদার কালিয়াচকে থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হল। হিন্দু গ্রাম আক্রান্ত হল, গুলিবিদ্ধ হল সাধারণ মানুষ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরেরই শুরু হল ধূলাগড়ের দাঙ্গা। এবারের বাহানা ছিল নবী দিবসের। মিলাত-উল-নবী পালন করার উৎসাহে ধূলাগড়ের মতো বহু জায়গায় আগুন জ্বলল। জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হল ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
২০১৭ সালে উওর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়ায় একটি ১৭ বছরের বালকের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ছিল বাহানা। হিন্দু মন্দির ভাঙা হল, ঘর পোড়ানো হল, বসিরহাটে দিনের আলোয় খুন হলেন নিরীহ হিন্দু। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে আসানশোলে রামনবমীর মিছিল আক্রান্ত হল। প্রাণ গেল নিরীহ হিন্দুদের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের গ্রামে গ্রামে সন্ত্রাস ছড়ানো হয়েছিল। বিডিও অফিসে অফিসে হার্মাদদের ঘর দেওয়া হয়েছিল। নিহত, ধর্ষিতা আর আক্রান্তদের প্রায় সকলেই হিন্দু বাঙালি।
২০১৯ সালে সিএএ বিরোধিতার নামে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে। জাতীয় সড়ক অবরোধ, রেল স্টেশনে স্টেশনে চরম নাশকতা। মাসাধিক কাল উওরবঙ্গ আর দক্ষিণবঙ্গ রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গ্রামে গ্রামে আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বাঙালি হিন্দু, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের থেকে সব হারিয়ে আসা উদ্বাস্তু হিন্দু।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরেও হিন্দুদের উপর এই সিএএ বিরোধী অত্যাচার থামেনি। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ছুতোয় হত্যা, ধর্ষণ আর লুঠের তাণ্ডবলীলা চলল। অর্ধশতাধিক হিন্দু বাঙালির প্রাণ গেল। যাঁরা তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, যাঁরা "ক্যা ক্যা ছি ছি" করে পূর্ববঙ্গের হিন্দু উদ্বাস্তুর অধিকার পেতে দিলেন না, তাঁরা কিন্তু হিন্দু বাঙালির দুঃখের কথা বলবেন না।
ভারতের কোথাও নির্বাচনের নামে এত লোক মারা যান না। এত বর্বরতা কোনও প্রদেশের মানুষের নেই। অথচ আমরা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে কত এগিয়ে! এগিয়ে বাংলা! এবার একটা কথা পরিস্কার বলা প্রয়োজন। এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নিকারাগুয়ার জন্য, গাজা ভূখণ্ডের জন্য কথা বলবেন, আর পশ্চিমবঙ্গ যখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে তখন অন্য কোথাও পালিয়ে যাবেন পাথেয় নিয়ে।
পূর্ববঙ্গের থেকে পালিয়ে আসা সর্বশ্রান্ত মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো মনীষীরাই এই "বেঙ্গলি হিন্দু হোমল্যান্ড" আদায় করেছিলেন। মহম্মদ আলি জিন্না ১৯৪৭ সালে বহুবার আক্ষেপ করেছিলেন কলকাতা পেলেন না বলে। কিন্তু বাঙালি হিন্দু সেদিন এক ছিল। সুচেতা কৃপালিনী কংগ্রেসের নেত্রী, অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা বামপন্থী, কিন্তু তাঁরা শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের সমবেত প্রয়াসেই ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইনসভায় ঠিক হয়েছিল হিন্দুপ্রধান জেলাগুলি নিয়ে তৈরি হবে পশ্চিমবঙ্গ, সেই পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষে থাকবে, বেঙ্গলি হিন্দু হোমল্যান্ড হিসেবে।
এরপর একের পর এক জেলায় হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েছে। ২০২১ সালের আদমসুমারিতে স্পষ্টতঃ দক্ষিণ ২৪ পরগনা নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হবে। তাতে যে কি এল গেল, তা গতবছরের মৃত্যু তালিকা থেকে বোঝা যায়। ২ মে তারিখের পর থেকে ৯ জন খুন হয়েছেন এই জেলায়। ২ জুন সোনারপুরের হারান অধিকারী, ৩ জুন মগরাহাটের সৌরভ বর, ১০ জুন সন্দেশখালির আস্তিক দাস, ১৬ জুন ফলতার অরিন্দম মিদ্দে, ২০ জুন উওর সোনারপুরের নির্মল মণ্ডল, ২৯ জুন ডায়মন্ড হারবারের রাজু সামন্ত, ২ অগাস্ট সাতগাছিয়ার চন্দনা হালদার, ২৫ অগাস্ট কাকদ্বীপের সমরেশ পাল, ২২ অক্টোবর মগরাহাটের মানস সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন কেবলমাত্র ডায়মন্ড হারবার লোকসভায়। একটি মাত্র লোকসভা এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় এই মৃত্যু স্বাধীন ভারতের সর্বকালের রেকর্ড।
তাতে অবশ্য এখানে কর্মরত কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকের লজ্জাবোধ হয় না! যেসব ঝকঝকে রুপোলি পর্দার তারকারা 'আমরা অন্য কোথাও যাবো না' নাটক করেছিলেন তাঁদেরও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেনি। যে যার পুরস্কারের ভাগ পেয়েছেন। পূর্ববঙ্গের হিন্দু উদ্বাস্তুদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পুরস্কার হিসেবে কেউ ডেউচা পাচামির কমিটির সদস্য হয়েছেন।
বাঙালি জল্লাদদের হাতে কোতল হলে এইসব তারকাদের কিচ্ছুটি যায় আসে না। এনাদের নিজেদের জীবদ্দশায় ভোগটুকু হলেই হল। কারণ নিশ্চিতভাবে এনাদের উত্তরপুরুষ হিন্দু নামধারী হলে পশ্চিমবঙ্গে থাকতে পারবে না। লোকের বাড়িতে কাজ করা তফশিলি জাতির যে মেয়েটি বুকের পাটা টানটান করে বিধানসভায় এসেছে, তাঁকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ রসালো বিষয়েই কেবল এগিয়ে থাকা সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ। স্বাধীনতার পরে ৭৫ বছরে এরাজ্যে এই মানুষগুলি কেন নেতৃত্বে আসেননি? এই প্রসঙ্গে ওই সব কাগজে একটি সম্পাদকীয়, কোনও ফ্রন্ট পেজার বা উত্তর সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়নি।
কিন্তু ঈশ্বরের তো কিছু পরিকল্পনা থাকে। বাঙালি হিন্দু ২০৪০ সালের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার হলে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী অরবিন্দ বা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভূমিতে আসতেন না। আজ ৭৫ তম পশ্চিমবঙ্গ দিবসে আমাদের শক্তি আর দুর্বলতার হিসেব করা প্রয়োজন। যাকে ব্যবস্থাবিজ্ঞানের ভাষায় "এস.ডাব্লিউ.ও.টি. অ্যানালিসিস" বলে। বাঙালি হিন্দুর বেঁচে থাকার পক্ষে শক্তি কতটা আর দুর্বলতা কী কী?
পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১৯৪৭ সালে যাঁরা লড়াই করেছিলেন, যাঁরা চেয়েছিলেন যে বাঙালিকে পাকিস্তানের নেকড়েরা যেন দাঁতে নখে না ছিঁড়ে খায়, রাজনৈতিক ভাবে শ্যামাপ্রসাদের দল পশ্চিমবঙ্গ তৈরির পরে সর্বকালের রেকর্ড শক্তি নিয়ে উঠে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও বিরোধী দল হিসেবেও ৭৭ জন বিধায়ক, কেবল যুক্তফ্রন্টের অতি সল্পকালীন সময় ছাড়া আর কোনও দিন, কোনও দলের ছিল না। তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী দল হিসেবে কখনও পঞ্চাশের গণ্ডি পার করেনি। কিন্তু পয়সা আর ক্ষমতার কাছে বিক্রি হওয়া প্রচারমাধ্যম সে কথা ভুলেও বলে না।
আর সব থেকে বড় দুর্বলতা হল ভয়। আজ ২০ জুন, ঠিক একমাস আগে চুকনগর দিবস গেল। ১৯৭১ সালের ২০ মে ভারতের সীমান্তবর্তী খুলনার চুকনগরে খান সেনারা ১০ হাজার হিন্দু বাঙালিকে একদিনে হত্যা করেছিল। ওই হতভাগ্যরা কেবল বেঁচে থাকার জন্য ভারতে আসতে চেয়েছিলেন। মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন বন্দুকধারী এই নরসংহার করেছিল। যার অর্থ এক একজন সেমি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে সাত-আট'শ মানুষকে মেরেছিল। যদি সমবেত নিরস্ত্র মানুষ কেবল পালিয়ে না গিয়ে আক্রমণকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পরত। রাইফেল ছিনিয়ে নিত? বাঘযতীনের রক্ত যাদের শরীরের মধ্যে বইছে, তাদের কাছে এটি বেশি চাওয়া?
গুরুদেবের সেই কথাটা বারবার মনে হচ্ছে, " যত বড়ই তুমি হও তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড় নও।" আজ বাঙালি হিন্দুর মনে রাখা উচিত, এরা কত কষ্ট দেবে? কষ্ট তো মৃত্যু পর্যন্তই!
শ্রীমদ্ভাগবতগীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—
"যদৃচ্ছায়া চোপপন্নং স্বর্গদ্বারমপাবৃতম।
সুখিনং ক্ষত্রিয়াং পার্থ লভন্তে যুদ্ধমীদৃশম।।"
হে পার্থ, অনায়াসপ্রাপ্ত, উন্মুক্ত স্বর্গদ্বারসদৃশ এই প্রকার ধর্মযুদ্ধ ভাগ্যবান ক্ষত্রিয়গণই লাভ করেন। ভগবানের অশেষ করুণা আজকের বাঙালি হিন্দুকে সেই সুযোগ দিয়েছেন।
অত্যাচারীর পায়ে মাথা ঘষলেই মুক্তি মিলবে না। নিজেদের মা বোনেদের ইজ্জত বাঁচাতে, ধনপ্রাণ রক্ষা করতে সংগঠিত হতে হবে, প্রয়োজনে পুলিশে কর্মরত ভাইবোনেদের রক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে দেগঙ্গার মতো, ধূলাগড়ের মতো, পাঁচলার মতো আর একটা পুলিশের জিপও যেন না পোড়ে। কালিয়াচকের মতো থানা যেন না জ্বলে। সে ক্ষমতা আমাদের আছে কেবল আমাদেরই আছে।
ক্ষুদিরাম বসু জেলের দেওয়ালে কাঠকয়লা দিয়ে লিখেছিলেন—
"বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্নতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা
ন্যন্যাতি সংযাতি নবানি দেহী।।"
ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের লেখা কাগজে পড়ুন, তারকা অভিনেতার সিনেমা দেখুন, বম্বের থেকেও প্রতিভাবান বাঙালি শিল্পীর গান শুনুন কিন্তু নিজেদের রোল মডেল করুন প্রফুল্ল চাকি, ক্ষুদিরাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্রকে। উদ্বোধন কার্যালয়, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, গীতা প্রেস বা ইস্কনের স্টল থেকে একটা বাংলা গীতা কিনে নিন। একটি লাল শালুতে মুড়ে নিন। ওটাই আপনার বেঁচে থাকার, জিতে যাওয়ার অস্ত্র।
আমি, আপনি সাধারণ মানুষ। কেউ কোনও "শ্রী" আপনাকে দেয়নি, ওই পাপের সম্মানে পদাঘাত করুন! শ্রীচৈতন্য বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকাননি, আমার আপনার দিকে তাকিয়েই "শ্রী শিক্ষাষ্টকম" লিখেছিলেন। এই ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক শক্তি জল্লাদদের সামনে যত মাথা নোয়াবে, আমাদের শিরদাঁড়া তত টানটান হবে, উন্নত হবে শির।
তোমাদের হাতে আমাকে ভয় দেখানোর আর কিছু নেই। আমরা মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যু আমাদের কাছে পরমানন্দ মাধবের আশির্বাদ।
খেলা তো হবেই। এটা শেষ খেলা। আমরাই জিতব।
(এই মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
+ There are no comments
Add yours