মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “কান দিয়ে দেখেন। স্তাবকরা যা শোনান, তাই বিশ্বাস করেন, টিপ্পনি করেন।” এবারে বিশ্বভারতীর নিশানায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ আধিকারিক বিবৃতি দিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আর্শীবাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা। কারণ, বিশ্বভারতী প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।” বুধবার বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের থেকে তিন পাতার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে শুরুতেই কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখার হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হুঁশিয়ারির জবাবেই পালটা বিবৃতি দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনরত বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বোলপুরে জনসভার মঞ্চ থেকে আরও একবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে আক্রমণ করেন তিনি। সেখানকার সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়া, কয়েক জন অধ্যাপক দেখাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অভাব-অভিযোগের কথা তাঁকে জানান। এরপরেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, “শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারীরা কাঁদছেন। প্রতিবাদ করলে সাসপেন্ড বা রেস্ট্রিক্টেড করা হচ্ছে। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের বাড়িতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচিল তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণ করবেন, সেটা চলতে পারে না। বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখব।”
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার হুঁশিয়ারির পাল্টা জবাব বিশ্বভারতীর
মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরেই বুধবার প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বভারতী সম্পর্কে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। আরও লেখা হয়েছে, “বিশ্বভারতীতে এখন ৪৭৩ জন শিক্ষক, প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এবং ৭৫০ জন কর্মচারী বন্ধু আছেন। তার মধ্যে এক জন শিক্ষক এবং ছয় জন ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য শুনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রমণ করলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ তিনি কান দিয়ে দেখেন। যে অধ্যাপক সম্পর্কে বললেন, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এটা সর্বৈব ভুল। তাঁকে শাস্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং এই প্রস্তাবটা নিয়ে ওই অধ্যাপক মামলা করেছেন। অতএব ব্যাপারটা বিচারাধীন। মাননীয় কোর্ট কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি। অতএব মুখ্যমন্ত্রী একটু বাড়াবাড়ি করলেন না কি?” আবার ছাত্রদের প্রসঙ্গ এনেও বিশ্বভারতীর তরফে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রদের সম্পর্কে যা মতামত দিয়েছেন তা তথ্যগত ভুল। সেই ছাত্রদের কেন পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে এই বিবৃতিতে।
গতকাল বিশ্বভারতীতে পাঁচিল তোলা নিয়েও কর্তৃপক্ষকে নিশানা করেছিলেন মমতা। ফলে তার উত্তরে আজ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ওনার নিরাপত্তার জন্য বোলপুর শহরকে ঘিরে ফেলা হল। ওনার বাসস্থান, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কি দেওয়াল নেই? আরও জানাই এই দেওয়াল তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তিন যুগ আগে।”
আবার এই বিবৃতিতে নাম না করে গরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল ও নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একাধিক মন্ত্রী-উপাচার্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়েছে, “আজ আপনার মনোনীত মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভিতরে। কী করে হল? কারণ আপনি স্তাবকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত। আপনার প্রিয় শিষ্য, যাঁকে না হলে আপনি বীরভূম ভাবতে পারতেন না। তিনিও জেলে। কবে বেরোবেন কেউ জানে না। আগে সাবধান করলে আপনি দুর্নাম থেকে বাঁচতে পারতেন। আপনি যদি সত্যি অর্থে মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হন, তবে এই কথাটা আপনার বোধগম্য হবে।”
এর পর বিবৃতি শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রসঙ্গে এনে বলা হয়েছে, “বিশ্বভারতী একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।” এরপর ছাত্র-ছাত্রী, মাস্টার মশায়দের ভুল পথে চলার জন্য প্ররোচনা না দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয় এবং পরামর্শ দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রী যেন তথ্য, প্রমাণ দিয়ে মত তৈরি করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ ‘চোখ দিয়ে দেখুন, কান দিয়ে নয়।’ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে।
+ There are no comments
Add yours