তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
হাড়ের দীর্ঘকালীন সমস্যা, পার্কিনসন্স কিংবা অ্যালজাইমার। বয়স বাড়লে এমন নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অধিকাংশ বয়স্ক মানুষ নানা শারীরিক ও মানসিক রোগে ভোগেন। যার জন্য তাঁদের নিয়মিত, সব সময় খেয়াল রাখা ও যত্নের প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর (Patient) কাছের মানুষ এই যত্নের দায়িত্ব নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন এক টানা রোগীকে দেখভালের জন্য তাঁদেরও নানা সমস্যা হতে পারে বলে জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
কেয়ার গিভার কে?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে কোনও রোগী (Patient), যিনি দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত, তাঁকে সব সময় যিনি যত্ন করেন, দেখভাল করেন, তাঁকেই বলা হয় কেয়ার গিভার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের মহিলারাই কেয়ার গিভারের দায়িত্ব সামলান।
কী ধরনের সমস্যা কেয়ার গিভারের হতে পারে?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক বা মানসিক রোগ যেমন অ্যালজাইমার, পার্কিনসন্স, ডিমেনশিয়া, কিংবা হাড়ের সমস্যায় আক্রান্তদের মূল কেয়ার গিভারের দায়িত্ব সামলান আরেক জন বয়স্ক মানুষ। অর্থাৎ আক্রান্তের জীবনসঙ্গী। ফলে, দীর্ঘদিন দেখভালের কাজ করতে গিয়ে, সেই কেয়ার গিভার শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবনসঙ্গী অসুস্থ হয়ে পড়লে যে কোনও বয়স্ক মানুষের মানসিক চাপ তৈরি হয়। তার উপর তাঁকে (Patient) দীর্ঘদিন দেখভাল করতে হলে, চাপ আরও বাড়ে। বিশেষত, অ্যালজাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে পরিস্থিতি উন্নতির আশা খুব কম হয়। ফলে, কেয়ার গিভারের মধ্যে একটা হতাশা তৈরির আশঙ্কা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেয়ার গিভার মানসিক অবসাদের শিকার হন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মধ্যে এক ধরনের রাগ বা উত্তেজনা তৈরি হয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে তাঁরা পারেন না। দীর্ঘদিন মানসিক চাপ নেওয়ার জেরে তাঁরা যে কোনও ছোট ঘটনাতেও অস্থির হয়ে পড়েন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। খিটখিটে হয়ে পড়েন। আবার অনেক সময় রেগে যান।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জেরে শরীরেও তার প্রভাব পড়ে। লাগাতার মানসিক চাপ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময়ই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিসের সমস্যা তৈরি হয়। নানা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা তৈরি করে। আবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে, কেয়ার গিভারের শারীরিক পরিস্থিতিও সমান উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।
কেয়ার গিভারকে সুস্থ রাখার পথ কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, রোগীকে (Patient) সুস্থ রাখার পাশাপাশি নজর রাখতে হবে কেয়ার গিভারের উপরেও। তাঁর শরীর ও মনের একই রকম যত্নের প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেয়ার গিভারের প্রতি অবহেলা বিপদ বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কেয়ার গিভারের প্রতি যত্নের দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকে। কেয়ার গিভারের ছুটির প্রয়োজন। সেটা পরিবারকেই মনে রাখতে হবে। অর্থাৎ, জীবনসঙ্গী কোনও রোগে আক্রান্ত হওয়ার জেরে হয়তো বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আরেক জনকে মাঝে মধ্যে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। অন্তত প্রতিদিন বিকেলে পার্কে যাওয়া কিংবা কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটানোর সুযোগ কেয়ার গিভারকে দিতে হবে। তাহলে তাঁর মধ্যে একঘেয়েমি আসবে না। দিনের কিছুটা সময় মানসিক চাপ কমবে।
যিনি রোগীর যত্ন লাগাতার নিচ্ছেন, তাঁর খাবারের প্রতি বিশেষ নজরদারি জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে, তাঁর দেখভালেই সব গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু যিনি অসুস্থ ব্যক্তির দেখভাল করছেন, তিনি সময় মতো খাচ্ছেন কিনা বা পুষ্টিকর খাবার কতখানি খাচ্ছেন, সে দিকেও সমান নজরদারি জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রয়োজনে পরিবারের কেয়ার গিভারের থেরাপি করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে কেয়ার গিভার বয়স্ক হলে, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। দরকার হয় থেরাপির। সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours