মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শুধুই কান্নার আওয়াজ। হা-হুতাশ! তুরস্ক, সিরিয়া জুড়ে শুধুই আর্তনাদ। পাথর সরালেই মিলছে একের পর এক দেহ। ঘুমের মধ্যে দিনের শুরুতেই চির-ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৭,৮০০। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, এই সংখ্যা কিছুই নয়। মৃত্যুসংখ্যা ৩২ হাজারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা।
কোথায় শেষ কেউ জানে না!
প্রাথমিক ভাবে যা মনে করা হয়েছিল, তার আট গুণ বাড়তে পারে প্রাণহানি। আহতের সংখ্যার কোনও হিসেব নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা-সহ প্রায় ৭০টি দেশ তুরস্ক-সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে তুরস্কের আদানা শহরে পৌঁছেছে ভারতের পাঠানো প্রথম দফার ত্রাণসাহায্য। সেই সঙ্গে পৌঁছেছে ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উদ্ধারকারী দল, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর, চিকিৎসা সামগ্রী, ড্রিলিং মেশিন ইত্যাদি। সিরিয়াতেও গিয়েছে ভারতের ত্রাণসাহায্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ফিরাত সুনেল সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘‘তুর্কি ও হিন্দি... দুই ভাষাতেই ‘দোস্ত’ শব্দটি রয়েছে। তুর্কিতে একটা কথা আছে: বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।’’
আরও পড়ুন: প্রবল ভূমিকম্প, মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়াল! কঠিন সময়ে তুরস্ক ও সিরািয়ার পাশে ভারত
আশ্রয়শিবিরে ঠাসাঠাসি ভিড়
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, পাঁচ বার ভূমিকম্প ও আরও ১০০ বার ভূকম্পন-পরবর্তী কম্পনের (আফটার শক) জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। হু-র ইউরোপ শাখার জরুরি বিভাগের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক ক্যাথরিন স্মলউডের কথায়, ‘‘আরও ধ্বংসের আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছেই। প্রাথমিক ভাবে যা জানা গিয়েছিল, তার আট গুণ বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা। ভূমিকম্পের পরে সব সময়েই এটা ঘটে থাকে। আর ঠিক তা-ই বিপর্যয়ের কয়েক সপ্তাহ পরে মৃত বা জখমের সংখ্যা অনেকটা বেড়ে যায়।’’ স্মলউড বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের পরে যাঁদের আর ঘরবাড়ি নেই কিংবা ঘরে ফেরার অবস্থা নেই, তাঁরা এক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। এতেও বিপদ বাড়ছে। একটা ছোট আশ্রয়শিবিরে ঠাসাঠাসি ভিড়, শ্বাসজনিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা প্রবল।’’ অচেনা মুখের ভিড়েই আশ্রয় খুঁজছেন পরিবার-হারিয়ে রাতারাতি একা হয়ে যাওয়া বহু মানুষ। কেউ কেউ আবার প্রিয়জনের দেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের তলায়। তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলের খবর এখনও জানাই যায়নি।
আরও সঙ্কটে সিরিয়া
সিরিয়ার অবস্থাও ভয়াবহ। হু-এর আধিকারিক অ্যাডেলেড মার্শাংয়ের বক্তব্য, এই বিপর্যয় সামলানোর জন্য তুরস্কের তা-ও কিছু সামর্থ্য আছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে গৃহযুদ্ধে এমনিতেই বিপর্যস্ত সিরিয়া। অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে। কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়েছে এ দেশে। খাদ্যাভাব, অপুষ্টি তো রয়েইছে। এই অঞ্চলে অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। তার উপরে যোগ হল আরও একটি। অ্যাডেলেড জানান, দু’দেশ মিলিয়ে কমপক্ষে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। যার মধ্যে রয়েছে অন্তত ১৪ লক্ষ শিশু।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours