শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী ধ্রুবদী ঐতিহাসিক উপন্যাস হল 'মহারাষ্ট্র জীবন-প্রভাত'। বিদেশী মোঘল শাসনের সময় শিবাজী (Shivaji) মহারাজের বীরত্বগাথা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের গৌরবময় উত্থানের কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে এই গ্রন্থখানিতে। রচয়িতা রমেশচন্দ্র দত্ত। এখানে অবশ্য উপন্যাসের মূল চরিত্র হলেন শিবজী। যিনি বলছেন, "যদি বিপদকে ভয় করিতাম, মোঘলদের অধীনে সামান্য জায়গীরদার মাত্র থাকিতাম"। বিপদকে পায়ের ভৃত্য করে অত্যাচারী মোঘল শাসক ঔরঙ্গজেবকে যিনি নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন, আজ তাঁর জন্মদিন। হিন্দু সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজী হোক অথবা রমেশচন্দ্র দত্তের রাজা শিবজী জন্মগ্রহণ করেন ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৬৩০ সালে। রাজা শিবাজীর (Shivaji) রোমাঞ্চকর জীবন এবং বীরত্বগাথা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন 'শিবাজী উৎসব'
তার পরে একদিন মারাঠার প্রান্তর হইতে
তব বজ্রশিখা
আঁকি দিল দিগ্দিগন্তে যুগান্তের বিদ্যুদ্বহ্নিতে
মহামন্ত্রলিখা।
মোগল-উষ্ণীষশীর্ষ প্রস্ফুরিল প্রলয়প্রদোষে
পক্কপত্র যথা--
সেদিনও শোনে নি বঙ্গ মারাঠার সে বজ্রনির্ঘোষে
কী ছিল বারতা।
মাতা জীজাবাঈ-এর কাছে বাল্যকালে শুনতেন রামায়ণ-মহাভারতের গল্প
শিবাজী মহারাজের জন্ম মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার পাহাড়ী দুর্গ শিবনেরিতে। তাঁর পিতা ছিলেন শাহজী ভোঁসলে, মাতার নাম জীজাবাঈ। শিবাজির পিতা শাহজী বিজাপুরের সুলতানের অধীনে কার্যভার গ্রহণ করায়, শিশুপুত্র শিবাজীসহ জীজাবাঈ দাদাজী কোণ্ডদেব নামে এক বিচক্ষণ ব্রাহ্মণের তত্ত্বাবধানে পুনায় থেকে যান। বালক শিবাজী (Shivaji) সংস্কার লাভ করতে থাকেন তাঁর মাতার কাছ থেকেই। হিন্দুধর্মশাস্ত্র বিশেষত রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনীতে বালক শিবাজীর আগ্রহ ছিল খুব বেশি। মাতা জীজাবাঈ-এর কাছেই তিনি শৈশবের সংস্কার, শিক্ষা পান। ধর্মপরায়ণ মাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত সংস্কার শিবাজীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। শিশুকালেই শিবাজীর মনে বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সঞ্চার হয়েছিল মাতা জীজাবাঈ-এর কাছে বিভিন্ন গল্প শুনে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম দূর্গ জয় করেন
শিবাজী মহারাজ ছিলেন গেরিলা যুদ্ধের জনক। ১৬৪৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সর্বপ্রথম তোরণা দুর্গটি দখল করেন তিনি। এরপর একে একে বড়মতি, রায়গড়, পুরন্দর, প্রভৃতি দুর্গগুলি মোঘলদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। শিবাজীকে (Shivaji) উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিজাপুরের সুলতান শিবাজীর পিতা শাহজীকে কারারুদ্ধ করেন। এরপর কিছুকাল শিবাজী নিশ্চুপ থাকেন। পরবর্তীকালে ১৬৫৬ থেকে আবার মনোনিবেশ করেন রাজ্য বিস্তারে।
বাঘনখের সাহায্যে আফজল খাঁ-কে হত্যা করেন
বিজাপুরের সুলতান শিবাজীকে দমন করার জন্য সেনাপতি আফজল খাঁকে পাঠান। আফজল খাঁ শিবাজীকে (Shivaji) শান্তিচুক্তির জন্য শান্তি শিবিরে আমন্ত্রণ জানান। চতুর শিবাজী আফজল খাঁর উপর আস্থা না রাখতে পেরে বাঘনখ নিয়ে যান। প্রথম সৌজন্য সাক্ষাতেই আফজল খাঁ আলিঙ্গনের সুযোগে শিবাজীকে পিঠে ছুরির আঘাত করতে উদ্যত হলে শিবাজী লোহার তৈরি বাঘনখের সাহায্য-এ আফজল খাঁকে হত্যা করেন। সেনাপতির মৃত্যুতে বিজাপুরের সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে শিবাজী কোলাপুর দখল করে নেন।
হিন্দু সাম্রাজ্য দিবসের সূচনা
জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী , ১৭৩১ বিক্রমসম্বত, ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ৬ জুন, ১৬৭৪ সালে নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন শিবাজী মহারাজ। রাজধানী রায়গড় দুর্গে বিপুল জনসমাবেশে, মহাপণ্ডিত গাগা ভট্টের পৌরোহিত্যে শিবাজী নিজের গুরু রামদাস স্বামী এবং মাতা জীজাবাঈকে বন্দনা করে তাঁদের আশীর্বাদ গ্রহণ করলেন। ‘ছত্রপতি’ উপাধিতে ভূষিত হলেন। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের রাজ্যাভিষেকের এই দিনটিই ‘হিন্দু সাম্রাজ্য দিনোৎসব’ হিসেবে পালিত হয়।
১৬৮০ সালের ৩ এপ্রিল ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ রাজধানী রায়গড়ে প্রয়াত হন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours