তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
তিরিশের চৌকাঠ পার করেনি। বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতার এক রেস্তোরাঁয় চলছিল খানাপিনা। হঠাৎ বুকে ব্যথা (Heart Attack) অনুভব করেন বছর আঠাশের যুবক। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে ওই তরুণ মারা গিয়েছেন। যদিও ওই তরুণের ডায়বেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা ছিল না।
সদ্য মাস ছয়েক মা হয়েছিলেন বছর পঁচিশের তরুণী। গর্ভাবস্থায় একাধিক শারীরিক পরীক্ষায় কোনও ত্রুটি ধরা পরেনি। কিন্তু হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওই তরুণী।
এই ঘটনাগুলি একেবারেই ব্যতিক্রম নয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগ বাড়ছে। তিরিশ বছর পেরনোর আগেই হৃদযন্ত্র হঠাৎ বিকল হওয়ার মতো ঘটনা বেড়েছে। বিশেষত করোনা পরবর্তীতে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা অন্য কোনও শারীরিক জটিলতা বা কোমর্বিডিটি না থাকলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তার জন্য উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল।
সম্প্রতি কলকাতায় চলছে কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার সম্মেলন। সেখানেই চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার নতুন একাধিক কারণ দেখা দিচ্ছে। সতর্ক না হলে আরও বিপদ বাড়বে।
কোমর্বিডিটি না থাকলেও কেন হৃদরোগ বাড়ছে?(Heart Attack)
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতার মতো সমস্যা হৃদরোগের (Heart Attack) ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্ত সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দূষণ হৃদরোগের ঝুঁকি মারাত্মক বাড়াচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, কারণ, দূষণ বাড়ছে। ধূমপান হৃদরোগের অন্যতম কারণ। কিন্তু যে হারে বায়ুদূষণ বাড়ছে, তাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একজন মানুষ ধূমপায়ীর মতোই ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
ওই সম্মেলনে চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, সম্প্রতি কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় দীপাবলি উপলক্ষে যে হারে আতস বাজি পোড়ানো হয়েছে, তাতে বায়ুদূষণ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। আর এর প্রভাব সরাসরি ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ডে পড়ছে। যার জেরে বাড়ছে হৃদরোগ।
কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক মহল? (Heart Attack)
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দূষণ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বায়ুদূষণে লাগাম টানতে না পারলে হৃদরোগের (Heart Attack) ঝুঁকি বাড়বে। প্রশাসনকেও সক্রিয় হতে হবে। না হলে যে হারে তরুণ প্রজন্মের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
তবে, প্রত্যেকের দিনের কিছুটা সময় খোলা মাঠে কিংবা পার্কে কাটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, খোলা মাঠে হাঁটা কিংবা পার্কে শারীরিক কসরত করলে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তবে, শরীরের পাশপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাড়তি নজরদারি জরুরি বলেই মত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগ বাড়ার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা অত্যন্ত জরুরি।
পাশপাশি খাবারের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই তেল-মশলা যুক্ত খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। পাশপাশি সহজপাচ্য খাবার রোজদিনের মেনুতে রাখতে হবে। কারণ, তাতেই শরীর সুস্থ থাকবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours