মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অসুস্থ গণিতজ্ঞকে দেখতে এসেছেন তাঁর বিদেশী বন্ধু। বিলেতি বন্ধুও অবশ্য নামকরা গণিতজ্ঞ। শারীরিক খোঁজখবর নেওয়ার পর বিলেতি বন্ধু তাঁর ভারতীয় বন্ধুটিকে বললেন, যে ট্যাক্সি করে এলাম সেটির নম্বর ১৭২৯। সংখ্যাটির মধ্যে আমি বিশেষ কিছু খুঁজে পেলাম না। শয্যাশায়ী ভারতীয় বন্ধুটি তখন বললেন, ১৭২৯ সাধারণ সংখ্যা নয়। এটি একমাত্র সংখ্যা যেটি ১০ এবং ৯ এর ঘনের সমষ্টি। অন্যদিকে আবার এই সংখ্যাটি ১ এবং ১২ এর ঘনের সমষ্টি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে যিনি এই ক্যালকুলেশন করছিলেন তিনি বিখ্যাত ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন (Srinivasa Ramanujan)। বিদেশী বন্ধুটি হলেন আরেক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ হার্ডি।
জন্ম ও প্রথম জীবন
আজ শ্রীনিবাস রামানুজনের (Srinivasa Ramanujan) জন্মদিন। ২২ ডিসেম্বর, ১৮৮৭ সালে তিনি জন্মগ্রহন করেন তামিলনাড়ুর ইরোড জেলার কুম্ভকনাম গ্রামে। কথিত আছে, কুম্ভমেলার মত প্রতি ১২ বছরে এই গ্রামেও মেলা বসত। সেজন্যই গ্রামের নাম হয়েছিল কুম্ভকনাম।
শোনা যায়, রামানুজন (Srinivasa Ramanujan) ছোটবেলায় সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন; কিন্তু দশম শ্রেণীর পর তিনি গণিতে দ্রুত এগিয়ে যান। কলেজে পড়াকালীন তিনি (Srinivasa Ramanujan) গণিতে এতটাই মগ্ন থাকতেন যে বাকি বিষয়গুলিতে ফেল করে যেতেন। এরফলে কলেজের বৃত্তি থেকে তিনি বঞ্চিত হন। কলেজ ড্রপার রামানুজন (Srinivasa Ramanujan) এরপর মাদ্রাজ বন্দরে একটি কেরানীর চাকরিতে ঢোকেন। সেখানেও চলত গণিত সাধনা। সারাদিন ধরে পাতার পর পাতা গণিতের জটিল সমস্যার সমাধান করতেন রামানুজন (Srinivasa Ramanujan), তৈরি করতেন একের পর এক উপপাদ্য। এখানেই তাঁর এমন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় যাঁরা রামানুজের (Srinivasa Ramanujan) নোটবুক-এর বিষয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেন, এদের হাত ধরেই গণিত বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ১৯১১ সালে তাঁর প্রথম গবেষণামূলক প্রবন্ধ ‘জার্নাল অফ দ্য ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি’ প্রকাশিত হয়। সংখ্যাতত্ত্বের উপর তাঁর গবেষণালদ্ধ ‘সাম প্রপার্টিজ অফ বারনৌলিস নাম্বারস’ নামে তাঁর প্রথম দীর্ঘ প্রবন্ধ একই বছর প্রকাশিত হয়।
বিদেশ যাত্রা
ইতিমধ্যে রামানুজনের প্রতিভা দেখে তাঁকে কেমব্রিজে আসতে বলেন অধ্যাপক হার্ডি। প্রফেসর হার্ডি লক্ষ্য করেন রামানুজনের (Srinivasa Ramanujan) অনেক প্রতিভা আছে; কিন্তু প্রথাগত শিক্ষার অভাবে প্রাথমিক অনেক কিছুই তিনি জানতেন না। এখান থেকেই রামানুজন ফেলোশিপ নিয়ে পাশ করলেন। কলেজ জীবনের অসম্পূর্ণ পড়া তাঁর সম্পূর্ণ হল। ১৯১৮ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির সদস্য হন। তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় যিনি এই সম্মান লাভ করেন।
জীবনাবসান
ইংল্যান্ডে থাকাকালীন রামানুজনের (Srinivasa Ramanujan) শরীর দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে, ১৯১৯ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। এক বছর পর ১৯২০ সালের ২৬ এপ্রিল মাত্র ৩২ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় এই বিরল প্রতিভার। ১৯৩৬ সালে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রফেসর হার্ডি রামানুজনকে (Srinivasa Ramanujan) যোদ্ধা বলে সম্বোধন করেছিলেন । হার্ডি আরও বলেন, রামানুজন (Srinivasa Ramanujan) দারিদ্র্যতা নিয়েও সমগ্র ইউরোপের বুদ্ধিবৃত্তিতে শান দিতে পেরেছিলেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours