অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তৎপদং দর্শিত যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।
মাস্টারকে তিরস্কার ও তাঁহার অহঙ্কার চূর্ণকরণ
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)-তোমার কি বিবাহ হয়েছে?
মাস্টার–আজ্ঞে হ্যাঁ।
শ্রীরামকৃষ্ণ (শিহরিয়া)-ওরে রামলাল! যাঃ, বিয়ে করে ফেলেছে!
মাস্টার ঘোরতর অপরাধী ন্যায় অবাক হইয়া অবনতমস্তকে চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। ভাবিতে লাগিলেন, বিয়ে করা কি এত দোষ!
ঠাকুর আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার কি ছেলে হয়েছে?
মাস্টারের বুক ঢিপঢিপ করিতেছে। ভয়ে ভয়ে বলিলেন, আজ্ঞে ছেলে হয়েছে। ঠাকুর আবার আক্ষেপ করিয়া বলিতেছেন, যাঃ ছেলে হয়ে গেছে! তিরস্কৃত হইয়া তিনি স্তব্ধ হইয়া রহিলেন। তাঁহার অহঙ্কারচূর্ণ হইতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Sri Ramakrishna Kathamrita) আবার কৃপাদৃষ্টি করিয়া সস্নেহে বলিতে লাগিলেন, ‘দেখ, তোমার লক্ষণ ভাল ছিল, আমি কপাল, চোখ -এসব বুঝতে পারি। আচ্ছা, তোমার পরিবার কেমন? বিদ্যাশক্তি না অবিদ্যাশক্তি?”
জ্ঞান কাহাকে বলে? প্রতিমাপূজা
মাস্টার-আজ্ঞা ভাল, কিন্তু অজ্ঞান।
শ্রীরামকৃষ্ণ (বিরক্ত হইয়া)–আর তুমি জ্ঞানী?
তিনি জ্ঞান কাহাকে বলে, অজ্ঞান কাহাকে বলে, এখনও জানেন না। এখনও পর্যন্ত জানিতেন যে, লেখাপড়া শিখিলে ও বই পড়িতে পারিলে জ্ঞান হয়। এই ভ্রম পরে দূর হইয়াছিল। তখন শুনিলেন যে, ঈশ্বরকে জানার নাম জ্ঞান, ঈশ্বরকে না জানার নামই অজ্ঞান। ঠাকুর বলিলেন, তুমি কি জ্ঞানী!” মাস্টারের অহঙ্কারে আবার বিশেষ আঘাত লাগিল।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Sri Ramakrishna Kathamrita)-আচ্ছা, তোমার ‘সাকারে’ বিশ্বাস, না ‘নিরাকার’?
মাস্টার (অবাক হইয়া স্বগত)–সাকারে বিশ্বাস থাকলে কি নিরাকারে বিশ্বাস হয়? ঈশ্বর নিরাকার, এ-বিশ্বাস থাকিলে ঈশ্বর সাকার এ-বিশ্বাস কি হইতে পারে? বিরুদ্ধে অবস্থা দুটাই কি সত্য হইতে পারে? সাদা জিনিস-দুধ, কি আবার কালো হতে পরে?
মাস্টার–আজ্ঞা, নিরাকার–আমার এইটি ভাল লাগে।
শ্রীরামকৃষ্ণ-তা বেশ। একটাতে বিশ্বাস থাকলেই হল। নিরাকার বিশ্বাস, ততো ভালোই। তবে এ-বুদ্ধি কারো না যে, এইটি কেবল সত্য আর সব মিথ্যা। এইটি জেনো যে, নিরাকারও সত্য। তোমার যেটি বিশ্বাস, সেইটিই ধরে থাকবে।
মাস্টার দুইই সত্য এই কথা বারবার শুনিয়া অবাক্ হইয়া রহিলেন। এ-কথা তো তাঁহার পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে নেই।
তাঁহার অহঙ্কার তৃতীয়বার চূর্ণ হইতে লাগিল। কিন্তু এখনও সম্পূর্ণ হয়ে নাই। তাই আবার একটু তর্ক করিতে অগ্রসর হইলেন।
মাস্টার–আজ্ঞা, তিনি সাকার, এ-বিশ্বাস যেন হল! কিন্তু মাটির প্রতিমা তিনি তো নন—
শ্রীরামকৃষ্ণ—মাটি কেন গো! চিন্ময়ী।
মাস্টার ‘চিন্ময়ী প্রতিমা’ বুঝিতে পারিলেন না। বলিলেন, আচ্ছা যারা মাটিতে প্রতিমা পূজা করে তাদের তো বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে, মাটির প্রতিমা ঈশ্বর নয়, আর প্রতিমার সম্মুখে ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে পূজা করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ "শেষরাত্রে ঘুম ভেঙে যেত আর কাঁদতুম, বলতুম, মা, কেশবের অসুখ ভালো করে দাও"
আরও পড়ুনঃ "ঠাকুর মাঝে মাঝে যেন অন্যমনস্ক হইতেছেন! পরে শুনিলেন, এরই নাম ভাব"
আরও পড়ুনঃ "মাস্টার দেখিলেন, একঘর লোক নিস্তব্ধ হইয়া তাঁহার কথামৃত পান করিতেছেন"
তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৪র্থ পরিচ্ছেদ
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours