ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্রাদি অন্তরঙ্গ ও অন্যান্য ভক্তসঙ্গে
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
গুরুশিষ্য-সংবাদ—গুহ্য কথা
সন্ধ্যা হইল। ফারশ কালীমন্দিরে ও রাধামন্দিরে ও অন্যান্য ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিল। ঠাকুর ছোট খাটটিতে বসিয়া জগন্মাতার চিন্তা ও তৎপরে ঈশ্বরের নাম করিতেছেন। ঘরে ধুনো দেওয়া হইয়াছে। একপার্শ্বে একটি পিলসুলে প্রদীপ জ্বলিতেছে। কিয়ৎক্ষণ পরে শাঁখ ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল। কালীবাড়িতে আরতি হইতেছে। শুক্লা দশমী তিথি, চতুর্দিকে চাঁদের আলো।
আরতি কিয়ৎক্ষণ পরে শ্রীরামকৃষ্ণ ছোট খাটটিতে বসিয়া মণির সহিত একাকী নানা বিষয়ে কথা কহিতেছেন। মণি মেঝেতে বসিয়া।
কর্মণ্যেবাধিকারন্তে মা ফলেষু কদাচন
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (মণির প্রতি)—নিষ্কামকর্ম করবে। ঈশ্বর বিদ্যাসাগর যে-কর্ম করে সে ভালো কাজ—নিষ্কামকর্ম করবার চেষ্টা করে।
মাণি—আজ্ঞা হাঁ। আচ্ছা, যেখানে কর্ম যেখানে কি ঈশ্বর পাওয়া যায়? রাম আর কাম কি এক সঙ্গে হয়? হিন্দীতে একটা কথা সেদিন পড়লাম।
যাহাঁ রাম তাহাঁ নাহি কাম, যাহাঁ কাম তাহাঁ নাহি রাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কর্ম সকলেই করে। তাঁর নামগুণ করা এও কর্ম—সোহহংবাদীদের আমিই সেই এই চিন্তা কর্ম—নিঃশ্বাস ফেলা, এও কর্ম। কর্মত্যাগ করবার জো নাই। তাই কর্ম করবে, কিন্তু ফল ঈশ্বরে সমর্পণ করবে।
মণি—আজ্ঞা, যাতে অর্থ বেশি হয় এ-চেষ্টা কি করতে পারি?
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—বিদ্যার সাংসারের জন্য পারা যায়। বেশি উপায়ের চেষ্টা করবে। কিন্তু সদুপায়। উপার্জন করা উদ্দেশ্য নয়। ঈশ্বরের সেবা করাই উদ্দেশ্য। টাকাতে যদি ঈশ্বরের সেবা হয় তো সে টাকায় দোষ নাই।
মণি—আজ্ঞা, পরিবারের উপর কর্তব্য কতদিন?
শ্রীরামকৃষ্ণ—তাদের খাওয়া পরার কষ্ট না থাকে। কিন্তু সন্তান নিজে সমর্থ হলে তাদের ভার লবার দরকার নাই, পাখির ছানা খুঁটে খেতে শিখলে, আবার মার কাছে খেতে এলে, মা ঠোক্কর মারে।
আরও পড়ুনঃ “পাখি ডিমে তা দিচ্ছে—সব মনটা সেই ডিমের দিকে, উপরে নামমাত্র চেয়ে রয়েছে!”
আরও পড়ুনঃ “কামিনী-কাঞ্চনের ঝড় তুফানগুলো কাটিয়ে গেলে তখন শান্তি”
আরও পড়ুনঃ “হিন্দুরা জল খাচ্ছে একঘাটে বলছে জল; মুসলমানরা আর-এক ঘাটে খাচ্ছে বলছে পানি”
আরও পড়ুনঃ “সচ্চিদানন্দলাভ হলে সমাধি হয়, তখন কর্মত্যাগ হয়ে যায়”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours