Sri Chaitanya Jamai Sasthi: নবদ্বীপে আজ জামাই রূপে পূজো হয় শ্রী চৈতন্যদেবের! ভোগে কী থাকে জানেন?

Nabadwip Dham: নবদ্বীপের মতো ভগবানকে জামাই আপ্যায়নের রীতি সারা দেশে বিরল...
WhatsApp-Image-2018-06-19-at-333.41-PM-1
WhatsApp-Image-2018-06-19-at-333.41-PM-1

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ, জামাইষষ্ঠী। বাংলার ঘরে ঘরে আজ পুত্র-তুল্য জামাইকে বরণ করে নেওয়ার দিন। প্রতিবছর এই বিশেষ দিনে নবদ্বীপে (Nabadwip Dham) চলে মহা আয়োজন। এই বিশেষ দিনটায় জামাই হিসেবেই বরণ করা হয় সনাতন মিশ্রের জামাই মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবকে (Sri Chaitanya Jamisasthi)। মা বাবা কিংবা সন্তান রূপে ভগবানের পুজো অনেক জায়গায় হয়ে থাকে। কিন্তু জামাই হিসাবে আপন করে নিয়ে ভগবানকে জামাই আপ্যায়নের এই রীতি বোধহয় নবদ্বীপেই প্রথম। এই দিনে মহাপ্রভুকে অনেকেই নিজের সন্তান তুল্য মনে করে বাটা বা ষাটের বাতাস করেন। প্রচুর মানুষ ভিড় করেন নবদ্বীপের মন্দিরে। 

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব (Sri Chaitanya Jamisasthi) পূর্বাশ্রমে বিবাহিত ছিলেন। তখন তার নাম ছিল বিশ্বম্ভর মিশ্র। তাঁর গাত্রবর্ণ গৌর ও স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাঁকে 'গৌরাঙ্গ' বা 'গৌরচন্দ্র' নামে ডাকা হত। অন্যদিকে, নিম্ব বৃক্ষের নিচে জন্ম বলে তাঁর মা তাঁকে 'নিমাই' বলে ডাকতেন তাই নবদ্বীপবাসীও নিমাই পণ্ডিত বলে তাঁকে অভিহিত করতেন। সর্প দংশনে প্রথম স্ত্রী লক্ষ্মীপ্রিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর বিয়ে হয় সনাতন মিশ্রের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে। সংসার ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে বিষ্ণুপ্রিয়াকে দিয়ে গিয়েছিলেন নিজের একখানি মূর্তি। বিষ্ণুপ্রিয়া সেবিত মহাপ্রভুর সেই মূর্তিই পূজিত হয় নবদ্বীপ ধামে (Nabadwip Dham)।

আজও জামাই-রূপে বরণ

গৃহত্যাগ করে পরে সংসার ধর্ম ত্যাগ করলেও তিনি তার স্ত্রী পরিবারের তরফে ছিলেন জামাই-ই। তার স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর পরিবার আজও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে জামাই (Sri Chaitanya Jamisasthi) রূপে পুজো করেন। তার জন্য এই দিন বিশেষ আয়োজন করা হয়ে থাকে। নিমাইকে জামাই আদর করেন বিষ্ণুপ্রিয়ার ভাইদের উত্তর পুরুষ। আজ থেকে কয়েকশো বছর ধরে জামাই ষষ্ঠীতে নবদ্বীপের এই মন্দিরে শ্রী চৈতন্যদেবকে জামাই রূপে আরাধনা করার রীতি পালন করা হয়। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর বাবা ছিলেন সনাতন মিশ্র। ভাই ছিলেন যাদব আচার্য। তার ছেলে হলেন মাধব আচার্য এবং মাধব আচার্যের ছেলে হলেন ষষ্ঠী দাস। এই ষষ্ঠী দাসের আমল থেকেই শ্রীচৈতন্য দেবের জন্য জামাই আদর এর আয়োজন করা হয়। এই ভাবে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর পরিবার জামাইষষ্ঠীর দিন জামাই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। 

জামাই-সাজ

জামাইষষ্ঠীর দিন বেশবাস, ভোগ সবেই থাকে নতুনত্বের ছোঁয়া। এদিন সকালে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কে পরানো হয় নতুন ধুতি পাঞ্জাবি এবং উত্তরীয়। পরানো হয় রজনীগন্ধা, গোলাপের মালা। এরপর এই বংশের বয়স্ক মাতৃস্থানীয়া মহিলারা ধান দূর্বা দিয়ে ষাটের বাতাস করেন। কপালে হলুদের টিপ পরিয়ে হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে শুরু হয় জামাইষষ্ঠীর ব্রত। সন্ধেবেলা নাটমন্দিরে বিশেষ কীর্তনের আয়োজন করা হয়।  উজ্জ্বল আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে মন্দির চত্বর।

আরও পড়ুন: আজও ঊর্ধ্বমুখী পারদ, তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা! কবে থেকে বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে?

মহাপ্রভুর জামাই-ভোগ

চৈতন্য মহাপ্রভুর (Sri Chaitanya Jamisasthi) জন্য নবদ্বীপে (Nabadwip Dham) এদিন বিশেষ ভোগেরও আয়োজন করা হয়। সকালে দেওয়া হয় রুপোর রেকাবিতে মরসুমি ফল, রুপোর বাটিতে ক্ষীর, রুপোর গ্লাসে জল। এরপর দেওয়া হয় চিরে, মুড়কি, দই, আম, কাঁঠাল এবং মিষ্টি। মধ্যাহ্নভোজে অন্নের সঙ্গে থাকে কচুর শাক, শুক্তো, মুগ ডাল, ভাজা, মোচার ঘন্ট, থোর, আলু ফুলকপির রসা, বেগুনের পাতুরি, চাল কুমড়োর তরকারি, ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা, পোস্ত, পুষ্পান্ন, আমের চাটনি, পরমান্ন, দই এবং রকমারি মিষ্টি। শেষ পাতে থাকে সুগন্ধি মশলা দেওয়া পান। বিকেলে ভোগে দেওয়া হয় ছানা এবং মিষ্টি। রাতে শয়নভোগে দেওয়া হয় ঘিয়ে ভাজা লুচি এবং মালপোয়া। সঙ্গে থাকে রাবড়ি। জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে দেওয়া হয় রুপোর গ্লাসে আম ক্ষীর। 

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles