মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালার (Aftab Poonawala) নার্কো ও পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যেই আফতাবের পলিগ্রাফ টেস্ট শুরু হয়েছে। গতকাল দিল্লির রোহিণীর ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল)-এ প্রায় আট ঘণ্টা ধরে তার পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়। এই টেস্ট চলাকালীন তাকে প্রায় ৪০টি প্রশ্ন করা হয়। শুক্রবার তাকে আবারও ডাকা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
বুধবারই তার (Aftab Poonawala) পলিগ্রাফ টেস্ট করার কথা ছিল, কিন্তু সূত্রের খবর অনুযায়ী, আফতাব জ্বরে ভুগছে। আর সেই কারণে বুধবার তার পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা যায়নি। বৃহস্পতিবারের পলিগ্রাফ পরীক্ষার সময় সে সহযোগিতা করলেও অতিরিক্ত হাঁচির কারণে কিছু রেকর্ডিং পরিস্কার হয়নি। তাই আজও তাকে আবার পরীক্ষার জন্য ডাকা হতে পারে। এফএসএল সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই আফতাবের পলিগ্রাফ পরীক্ষার রিপোর্ট জানা যাবে। প্রসঙ্গত, পলিগ্রাফ টেস্টের অপর নাম ‘লাই ডিটেক্টর’ টেস্ট অর্থাৎ অভিযুক্ত মিথ্যা বলছেন কি না, তা যাচাইয়ের পরীক্ষা।
আরও পড়ুন: শ্রদ্ধা খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের সন্ধান মিলল! আফতাবের পলিগ্রাফ টেস্টের পরই তদন্তে নয়া দিক
পলিগ্রাফ টেস্টে কী কী জিজ্ঞেস করা হল?
বৃহস্পতিবার এই পলিগ্রাফ টেস্ট শুরু হয় সকাল ১১টা ৫০ মিনিট থেকে এবং তার রক্তচাপ মাপা সহ বেশ কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয়। জানা গিয়েছে যে, আফতাবকে (Aftab Poonawala) প্রশ্নগুলো হিন্দিতে করা হলেও সে ইংলিশে উত্তর দেয়।
১) পলিগ্রাফ টেস্টের সময়, আফতাবকে তার শৈশব, তার বন্ধুবান্ধব ও লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়ালকরের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
২) শ্রদ্ধার সঙ্গে আফতাবের সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিল, দিল্লি বা মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে কীভাবে তাঁদের দিন কাটত, এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়।
৩) এরপর শ্রদ্ধাকে খুন করার ব্যাপারে বিশদে জিজ্ঞেস করা হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, কী কারণে সে শ্রদ্ধাকে খুন করল, কখন সে এই অপরাধ ঘটালো, খুনের পর কীভাবে সে প্রমাণ লোপাট করল ইত্যাদি।
৪) শ্রদ্ধার সঙ্গে ডেটিং শুরু হওয়ার পর কী কী হয়েছিল এবং কেন সে শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করার পর ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাও জিজ্ঞসা করা হয়।
৫) আফতাবের কাছে পলিগ্রাফ পরীক্ষায় জানতে চাওয়া হয়েছে, তিনি শ্রদ্ধার মোবাইল ফোনটি কোথায় ফেলেছে। সূত্রের খবর, তার উত্তর অনুযায়ী ফোনটির খোঁজ শুরু হয়েছে।
৬) শ্রদ্ধার দেহকে একাধিক অংশে কেটে ফেলার জন্য যে ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল আফতাব সে সম্পর্কেও তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
শ্রদ্ধা ও আফতাবের বন্ধুদের বয়ান রেকর্ড
ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশ শ্রদ্ধা ও আফতাবের (Aftab Poonawala) বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ও তাঁদের বয়ান ১৬৪ ধারার অন্তর্গত রেকর্ড করেছে। উভয়ের বন্ধুরাই বলেছে যে শ্রদ্ধাকে আফতাব মারধর করত এবং তাঁকে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছিল। পুলিশ শ্রদ্ধা ও আফতাবের বন্ধু, যিনি বেঙ্গালুরুতে থাকেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। আবার শ্রদ্ধার এক বন্ধু রজত শুক্লা জানিয়েছেন, আফতাব সিগারেট দিয়েও শ্রদ্ধার গায়ে ছেঁকা দিত। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে এইসব তথ্যই পাওয়া গিয়েছে তাদের বন্ধুদের থেকে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ আফতাবের (Aftab Poonawala) ফ্ল্যাট থেকে পাঁচটি ছুরি উদ্ধার করে, যা ফরেন্সিকে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ মনে করছে এই ছুরিগুলি দিয়েই আফতাব শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করে। আবার পুলিশ শ্রদ্ধার চোয়ালে কিছু চুলের দাগ দেখতে পেয়েছে, যেটাকে ডিএনএ টেস্টে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, সম্ভবত আগামী সপ্তাহে আফতাবের নার্কো টেস্টও করা হবে।
+ There are no comments
Add yours