Bakhtiyar khilji: অবাককাণ্ড! কাঠের তৈরি খাটে বা চৌকিতে ঘুমোন না এই গ্রামের বাসিন্দারা, কেন জানেন?

বখতিয়ার খিলজিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গ্রামবাসীরা মাটিতে ঘুমোন..
Bakhtiyar_khilji_(1)
Bakhtiyar_khilji_(1)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সম্মান নাকি কুসংস্কার! ইতিহাসকে ঘিরে জনশ্রুতিতে বিশ্বাসী হয়ে কুসংস্কারে এখনও পর্যন্ত কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে কেউই ঘুমোন না দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পীরপাল গ্রামের বাসিন্দারা। কাঠের নয় মাটিরই তৈরি ঢিপিতে বা মাটি দিয়ে খাট তৈরি করে অথবা মাটিতে ঘুমোন গ্রামবাসীরা। ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ বলেন, পীরপালের মাটিতে ইখতিয়ার- উদ্দিন -মহম্মদ- বিন- বখতিয়ার খিলজির (Bakhtiyar Khilji) দেহ সমাধিস্থ করা হয়। এরপর তিনি তুর্কি বীর থেকে পীরে পরিণত হন। বীর যোদ্ধাকে (Bakhtiyar Khilji) এই গ্রামের মাটিতে সমাধিস্থ করার পর থেকে গ্রামবাসীরা কাঠের তৈরি খাটে বা চৌকিতে ঘুমোন না। ঘুমোলে তাদের স্বপ্নাদেশে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এই ভয়ে কয়েকশো বছর থেকে পীরপালের গ্রামের মানুষ কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে ঘুমোন না। পাশাপাশি বখতিয়ার খিলজিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গ্রামবাসীরা মাটিতে ঘুমোন।

পীরপাল গ্রামে কার সমাধি আছে, জানেন?

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর, তপন, হরিরামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গারামপুর এলাকার পীরপাল অন্যতম। জেলার ইতিহাসবিদদের থেকে জানা গিয়েছে, বাংলায়  সুলতানি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে বখতিয়ার খিলজি (Bakhtiyar Khilji) সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে সংগ্রামপুর, দেবীকোর্ট সহ গোটা গৌড় দখল করে নেন। লক্ষ্মণ সেন অন্যত্র পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। তাঁর সৈন্যরা পরাজিত হয়ে নদিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর বখতিয়ার খিলজি (Bakhtiyar Khilji) তিব্বত ও কামরুপ অভিযানে যান। সেখানে বিফল হয়ে তিনি দেবীকোর্টে ফিরে আসেন। তিব্বত অভিযান বিফল এবং সৈন্যবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতির কারণে মুসলিম রাজ্যের প্রজাদের মধ্যে বিদ্রোহ ও বিরোধ দেখা দিতে শুরু করে। নানাবিধ চিন্তা এবং পরাজয়ের গ্লানিতে বখতিয়ার খিলজি প্রচন্ডভাবে অসুস্থ ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এর অল্প কিছুদিন বাদে তিনি শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। কেউ কেউ অনুমান করেন যে বখতিয়ার খিলজির (Bakhtiyar Khilji) মৃত্যুর পিছনে তার প্রধান সেনাপতি আলীমর্দান খিলজির হাত ছিল। এরপর বখতিয়ারের মৃতদেহ পীরপালে সমাধিস্থ করা হয়।

কী বললেন গ্রামের বাসিন্দারা?

পীরপাল গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, চৌকি বা খাটে ঘুমোলে স্বপ্নাদেশে তাদের ভয় দেখানো হয়। বাপ-ঠাকুরদার সময় থেকে আমরা গল্প শুনে আসছি, রাতে চৌকি বা খাটে শুলে স্বপ্নে ঘোড়া ছোটার আওয়াজ পাওয়া যায়। কে যেন আবার খাট থেকে ফেলে দেয়। আর এরপর সেই পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে কেউ ঘুমোয় না। অন্যদেরও ঘুমোতে দিই না। মাটি দিয়ে বা সিমেন্ট দিয়ে খাট তৈরি করে, সেখানে বিছানা পেতে আমরা ঘুমোই। এই পীর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই প্রতি বছর বৈশাখ মাসে বড় করে মেলা বসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দেখতে আসেন। এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, বর্তমানে দরগাটির করুণ দশা। সরকার থেকে পর্যটন কেন্দ্র করা হবে বললেও কোনও হেলদোল নেই। ধীরে ধীরে ভগ্নদশায় পরিণত হচ্ছে তুর্কি বীরের (Bakhtiyar Khilji) এই পীরের দরগা।

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles